আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আমতলী ইউএনও অফিসের চার পাশে ডোবা নালাগুলো কঁচুরি পানায় ভরপুর ও ময়লার ভাগারে পরিনত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের চোখের সামনে ময়লার ভাগারে পরিনত হলেও কেউ পরিস্কার পরিছন্ন করতে এগিয়ে আসছে না। ময়লার ভাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে মারাত্মক পরিবেশ দুষণ ও মশার বংশ বিস্তারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। পরিবেশ দুষণ ও মশার উৎপাত বৃদ্ধি থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত ডোবা-নাল থেকে কচুরীপানা ও ময়লার ভাগার পরিস্কারের দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
জানাগেছে, ১৯৮২ সালে আমতলী উপজেলায় রুপান্তিত হয়। ওই সময়ে উপজেলার পরিষদ কমপেøেক্সর চারপাশে ডোবা ও নালা কেটে মাটি দিয়ে ভিটি নির্মাণ করা হয়। ওই সময়ে থেকে এখন পর্যন্ত ইউএনও অফিসের চারপাশ ডোবা ও নালায় বেষ্টিত আছে। বর্তমানে ওই ডোবাগুলো কচুরীপানায় ভরপুর ও ময়লার ভাগারে পরিনত হয়েছে। গত ১০ বছরে ওই ঢোবা ও নালা পরিস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ইউএনও অফিসের পিছনে ও সামনে পানি নিস্কাশনের জন্য নালায় তিনটি ইনলেট নির্মাণ করা হয়। ওই ইনলেটগুলো দিয়ে তেমন পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। এতে ডোকায় ময়লা আবর্জনার আটকে ভাগারে পরিনত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে ভবনের পূর্বদিকে জেলা পরিষদের সড়ক। তার পাশেই রয়েছে বিশাল আকারের ডোবা। ডোবায় ময়লা আর শেওলায় পরিপূর্ণ। ভবনের পেছনে উত্তর পাশে লম্বা নালা কঁচুরিপানায় ভরপুর। পশ্চিম পাশে পুকুর এবং নালায় ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। দক্ষিণ পাশে সমাজসেবা অফিস এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, জণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, পশ্চিম পাশে সরকারী তৃতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুটি কোয়ার্টার, খাদ্যগুদাম ভবন, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং মৎস্য অফিস। এ পাশে রয়েছে বিশাল ডোবা। ওই ডোবাটি গত ১০ বছর ধরে কঁচুরীপানায় পরিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কচুরীপানা থাকায় ডোবার মশার বংশ বিস্তারের কারখানায় পরিনত হয়েছে। ওই ডোবার পাশে অবস্থিত অফিসগুলোতে আসা মানুষ মশার আক্রমণে অতিষ্ঠ। উত্তর পাশে উপজেলা কৃষি অফিস ও ইউএনও ও প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তাদের বাসভবন। এর পিছনে রয়েছে নালা। ওই নালায় কচুরীপানায় ভরপুর এবং স্থানীয়রা ময়লা আবর্জনা ফেলায় ভাগারে পরিনত হয়েছে। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। অপর দিকে ইউএনও অফিসের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি মিনি ডাকবাংলো। এর সামনে এবং সরকারী কলেজ সড়কের পিছনে স্থানীয় দোকান পাটের ময়লা আবর্জনা ফেলায় নালার মাথা ময়লার স্তুপ হয়ে আছে। এতে অহরহ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মানুষকে নাক চেপে সড়কে হেঁটে যেতে হয়। উপজেলা পরিষদ ভবনের পূর্ব পাশের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ইউএনও কার্যালয়ের থেকে মাত্র ৫০-৬০ ফুট দুরত্বে ডোবার ওপর জেলা পরিষদের জমিতে দোকান এবং আইনজীবিদের চেম্বার। ওই দোকান ও চেম্বারের খোলা টয়লেটের মল মূত্র পানির সঙ্গে মিশে প্রতিনিয়ত পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। বর্ষার মৌসুমের এ সকল ডোবা নালায় পানি জমে শেওলা আর ময়লায় ভরে গেছে। পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত ঢোবা ও নালার ময়লা ও কচুরীপানা পরিস্কারের দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের চারিপাশের ডোবা ও নালায় কচুরাীপানা ও ময়লায় ভরপুর। ডোবার পানির রং কালো হয়ে গেছে। পানিতে প্রচুর ময়লা আবর্জনা ভাসছে।
ডোবার পাশে অবস্থিত উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী জগদীস চন্দ্র বসু বলেন, মশার উৎপাতে দিনের বেলায়ও অফিস করা কষ্টকর। দিনের বেলায়ও মশার নিধন উপকরন ব্যবহার করতে হয়। তিনি আরো বলেন, ডোবায় যে পরিমানে মশার উৎপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ডেঙ্গুর আশঙ্কা রয়েছে।
ঝিনুক কোয়ার্টারের বাসিন্দা মোঃ শাহজাহান মিয়া বলেন, দিনে রাতে সমানতালে মশার উৎপাত। রাতের বেলায় মশারি টানিয়েও মশার যন্ত্রনায় টেকা দায়।
ইউএনও অফিসে আসা দুই শিক্ষক মোঃ মোশাররফ হোসেন সেন্টু ডাকুয়া ও জাহাঙ্গির মিয়া বলেন, ইউএনও অফিসের গেট দিয়ে ঢুকতেই ডান এবং বাম পাশে ময়লার ভাগার। মশার কামড়ে দিনের বেলায়ও পরিষদের ভেতরে দাড়ানো কষ্টকর।
আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবি মোঃ রেজাউল করিম বলেন, মশার উৎপাতে দিনে-রাতে চেম্বারে বসা দুস্কর। সার্বক্ষনিক মশার উপদ্রব। পরিবেশ ও মশার উৎপাত থেকে রক্ষায় দ্রুত ডোবা ও নালা পরিস্কার করা প্রয়োজন।
আমতলী পৌর নাগরিক কমিটির সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল হোসেন বিশ^াস বলেন, মশার প্রকোপ থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রুত উপজেলা পরিষদের চারপাশে ডোবা ও নালা পরিস্কার করা প্রয়োজন। নইলে মশার উৎপাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, অফিসের পাশের ডোবায় মানুষ ময়লা আবর্জনা ফেলে রেখেছে। ওই ময়লা আবর্জনা পানির সাথে না নেমে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলা পরিষদের মধ্যে অবস্থিত ডোবা-নালাগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব আমার নয়।
এমএইচকে/এমআর