ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সমুদ্র সম্পদের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে মেরিকালচারের (সামুদ্রিক মৎস্যচাষ) দিকে যেতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, বাংলাদেশ সামুদ্রিক মাছ চাষের সুযোগ এখনো কাজে লাগাতে পারেনি। কারণ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বোট ও টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না। এজন্য মেরিকালচারের প্রজনন প্রযুক্তিতে আরো বেশি গবেষণা প্রয়োজন বলে জানান তারা।
মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ ব্লু ইকোনমিক ডায়ালগ অন ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিকালচার’ শীর্ষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ মত দেন। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইসুল আলম মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মেরিটাইম আ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম, বাংলাদেশে এফএও এর রিপ্রেজেনটিভ রবার্ট ডি সিমসন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সৈয়দ রাশেদুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের ফিশকোড ম্যানেজার জ্যাকুইলিন অ্যালডার।
বক্তারা বলেন, ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এরইমধ্যে পাইলট কান্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সমুদ্র সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি না থাকা, দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, মাছ ধরার বোটগুলোর কম সক্ষমতা, জেলেদের মানসম্মত প্রশিক্ষণের অভাবে আমাদের মৎস্যখাত অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে। মন্ত্রী বলেন, সমুদ্র বিজয়ের চারবছর হলেও এখনো গভীর সমুদ্রে ১০০ মি. গভীরতার বাইরে আমরা মৎস্য আহরণ করতে পারি না। এ ছাড়া সামুদ্রিক মৎস্যচাষ বা মেরিকালচারের সুযোগকে এখনো কাজে লাগাতে পারিনি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় মেরিকালচার লাভজনক হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। আমাদের দেশেও মেরিকালচারের প্রজনন প্রযুক্তি গবেষণা ও আহরণের মাধ্যমে মৎস্যখাত সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, একটি উন্নয়নশীল দেশের উন্নতির জন্য প্রয়োজন মেধাসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যবান জাতি। আর তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নূন্যতম পরিমাণ মাছ রাখতে পারলে একটি স্বাস্থ্যবান, রোগমুক্ত জাঁতি গড়া সম্ভব। ব্লু ইকোনমি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। মেরিটাইম আ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম বলেন, মৎস্যখাত বাংলাদেশের জিডিপিতে ৪.৬ শতাংশ অবদান রাখছে। আর পৃথিবীর মোট জিডিপির ৩ শতাংশ মৎস্যখাত থেকে আসে। প্রায় ৮০০ মিলিয়ন লোক এ খাতের সঙ্গে জড়িত। ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ১০০ মিলিয়ন টন মাছের চাহিদা তৈরি হবে। এ চাহিদা মোকাবেলা করতে আমাদের মৎস্যখাতকে মেরিকালচার প্রযুক্তিতে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে। এ খাত উন্নয়নে সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তায় উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট শীর্ষক একটি বৃহত্তম প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সচিব রইসুল আলম মন্ডল বলেন, ব্লু-ইকোনমি বা সাগরকেন্দ্রিক উন্নয়ন বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। বর্তমান সরকারের সব উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও বেকারের সংখ্যা হ্রাস করা।
উপকূলীয় ও বঙ্গোপসাগরে বিদ্যমান জলজ সম্পদ ও সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য এরইমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। স্থায়িত্বশীল মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করতে ফিশিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, সেইলিং পারমিশন জারি, আইইউইউ ক্যাচ সার্টিফিকেট দেওয়া, জেলেদের পরিচয়পত্র দেওয়া ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান। বৈচিত্র্য ও প্রাচুর্যময় বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনার একটি অধিক্ষেত্র। এটি বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বাদুপানির নদী ধারক যা ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি এবং বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক ও জৈবগুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির আধার।
উপকূলীয় অঞ্চলের ৫ লাখের বেশি জেলে পরিবার প্রায় ৭০ হাজার যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিত মৎস্য নৌযানের মাধ্যমে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
এফএন/এমআর