আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
কাগুজে সেতু দেখিয়ে দুই কোটি ৩৮ লক্ষ ১৯ হাজার ৯’শ ৪৬ টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনায় বরগুনা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। হলদিয়ার পূর্ব চিলা গ্রামের ইলিয়াস মৃধা ঠিকাদার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। মামলা করে বিপাকে পরেছেন বাদী ইলিয়াস মৃধা। তাকে মামলা তুলে নিতে ঠিকাদার ও তার লোকজন জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। মঙ্গলবার এমন অভিযোগ করেন মামলার বাদী ইলিয়াস মৃধা।
জানাগেছে, ২০০৭ সালে হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাওঘা আবাসন সংলগ্ন স্থানে এক কোটি ১৪ লক্ষ ২১ হাজার ৫৯ টাকা ব্যয়ে ৮০ মিটার দৈঘ্য, ২০০৮ সালে একই ইউনিয়নের পশ্চিম চিলা গ্রামের আশের্^দ মোল্লা বাড়ী সংলগ্ন স্থানে ৬০ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৪ টাকা ব্যয়ে ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সোনাখালী আবাসন সংলগ্ন উত্তর রাওঘা সুবন্ধির খালে ৬৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৮’শ ২৩ টাকা ব্যয়ে ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য তিনটি সেতুর দরপত্র আহবান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস। তিনটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় দুই কোটি ৩৮ লক্ষ ১৯ হাজার ৯’শ ৪৬ টাকা। ওই তিনটি সেতুর কাজ পায় হলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধা এবং তার সহযোগী মোঃ নিজাম উদ্দিন তালুকদার। কিন্তু ঠিকাদার মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধা ও নিজাম উদ্দিন তালুকদার সেতুর কাজ না করেই তৎকালিন বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হুদা, আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আতিয়ার রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম ও হিসাব রক্ষক মোঃ আনসার আলীর জোগসাজসে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন। গত ২১ বছর এ কাগুজে সেতুর তথ্য গোপন থাকে। এ বছর মার্চ মাসে ওই সেতুগুলো বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস পুনঃনির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করেন। এ দরপত্র প্রকাশের পর বের হয়ে আসে কাগুজে সেতুর খবর। পুনঃনির্মাণ সেতুর স্থানে বর্তমানে রয়েছে বাঁশের সাকো। এ নিয়ে এলাকার তোলপাড় ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নড়েচড়ে বসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরে তারা তদন্ত টিম গঠন করে। তদন্ত টিম সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পায়। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ওই সেতুর পুনঃনির্মাণের দরপত্র বাতিল করে দেন। কাগুজে সেতু দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় হলদিয়া ইউনিয়নের পুর্ব চিলা গ্রামের মোঃ ইলিয়াস মৃধা ঠিকাদার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুল ইসলাম মৃধা, তার সহযোগী নিজাম উদ্দিন তালুকদার, তৎকালিন বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল হুদা, আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আতিয়ার রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম ও হিসাব রক্ষক মোঃ আনসার আলীকে আসামী করে বরগুনা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে গত ১৮ জুলাই মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মোঃ হাসানুল ইসলাম মামলাটি তদন্তের জন্য উপ-পরিচালক সমন্বিত জেলা কার্যালয় দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালীকে আগামী ৫ অক্টোবর ধার্য তারিখে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা ও তার লোকজন এ মামলা তুলে নিতে মামলার বাদী মোঃ ইলিয়াস মৃধাকে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছেন। তার হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন মামলার বাদী ইলিয়াস মৃধা। মঙ্গলবার এমন অভিযোগ করেন তিনি।
মামলার বাদী ইলিয়াস মৃধা অভিযোগ করে বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা ও তার লোকজন আমাকে অব্যহতভাবে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে পরপরই আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। শহীদুল ইসলাম মৃধা ও তার লোকজনের ভয়ে গ্রামের বাড়ী যেতে পারছি না। আমাকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করছে।
ঠিকাদার মোঃ নিজাম উদ্দিন তালুকদার বলেন, ওই সেতু সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। আমার লাইসেন্স দিয়ে কে বা কাহারা দরপত্রে অংশ নিয়ে সেতুর কাজ করেছেন তা আমার জানা নেই।
ঠিকাদার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
তাৎকালিন উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আতিয়ার রহমান বলেন, কাজ শেষে ঠিকাদারকে বিল প্রদান করা হয়েছে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি মোঃ আসলাম বারী বলেন, আদালতের বিচারক মামলাটি আমনে নিয়ে তদন্তের জন্য উপ-পরিচালক সমন্বিত জেলা কার্যালয় দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালীকে আগামী ৫ অক্টোবর ধার্য তারিখে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ ওয়াজেদ আলী গাজী বলেন, নথিপত্র পাইনি। নথিপত্র পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাসময়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এমএইচকে/এমআর