কলাপাড়া(পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
টানা সাত দিনের ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। পানিতে তলিতে থাকায় এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। পানিতে তলিয়ে থাকায় এসব গত তিনদিন পর্যন্ত উনুন জ্বলেনি অনেকের ঘরে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক দিয়ে চলাচল। তলিয়ে গেছে ১৫’শত পুকুর ও মাছের ঘের। মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় তিন কোটি ৬০লক্ষ টাকা। পানিতে তলিয়ে পচে গেছে উপকূলীয় এলাকার হাজার হেক্টর আমনের বীজতলা। সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে মৌসুমী সবজি চাষীরা। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। তবে এসব ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের হাতে এখনও পৌছায়নি পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে উপজেলায় খরিপ-২ মৌমুমের ৭’শত ৪০ হেক্টর জমিতে শাক সবজি চাষ করা হয়েছে। যার অর্ধেকটা পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন মিলে ২৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। যার মধ্যে এক হাজার হেক্টর আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে লালুয়া, ধানখালী, চম্পাপুর, মহিপুর, ইউপির অধিকাংশ বেড়িবাঁধ।
কলাপাড়া পৌর শহরের পাঁচ নং ওয়ার্ড চিংগড়িয়ার একটা অংশ এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। ভোগান্তিতে রয়েছে এ এলাকায় মানুষ।
এছাড়া কলাপাড়া পৌর সভা সংলগ্ন টিয়াখালী ইউনিয়নের মোর্তজার কাল ভার্ট, মতির ঢালা, চুন্ন ব্যাপারির কালভার্ট এবং ফোর লেন ও সিক্স লেন কাল ভার্ট আটকিয়ে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
কলাপাড়া পৌর সভার চিংগড়িয়ার বাসিন্দা মো.সাইদুল ইসলাম বলেন, তিন দিন পর্যন্ত ঘরের চুলা জ্বালাতে পারিনি। পানিতে ডুবে থাকায় বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। তিনি সহ ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান প্রভাবশালীরা মাছের ঘের করতে কালভার্ট গুলো আটকে দিয়েছে। এছাড়াও সরকারি খালগুলো ডিসিওয়ারের নামে ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমির মারা গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, অনেক টাকা পয়সা খরচ করে কৃষিকাজ করেছি। আশানুরূপ উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু এবছর টানা বৃষ্টির কারনে গাছের গোড়ায় পানি জমে গাছ পঁচে মরে গেছে।
কলাপাড়া পৌরসভার ৪,৫ এবং ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রোজিনা আক্তার জানান, আমি গিয়ে চিংগড়িয়াবাসীর দূর্দশা দেখে এসেছি। আগামীতে বরাদ্দ আসলে অগ্রাধিকার ভিক্তিতে এ এলাকার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান , টানা সাত দিনের ভারি বর্ষনে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলায় ১৫’শত পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান ক্ষতিগ্রস্থদের প্রাথমিক তালিকা করে মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ জানান, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউয়নের কুমিরমারা সহ বিভিন্ন ইউনিয়েনের খরিপ-২ মৌসুমের শাক শবজি এবং আমন বীজতলা ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, কৃষকদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. শহিদুল হক জানান, ভারী বর্ষনের ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে শুকনা খাবার ক্রয়ের জন্য ৫০হাজার করে টাকা পাঠনো হয়েছে। এছাড়াও মহিপুর, লালুয়া, চম্পাপুর এবং ধানখালী ইউপির পানিবন্ধি মানুষের জন্য জরুরি খাদ্য সামগ্রি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এনইউবি/এমআর