পায়রার ভাঙ্গনে ৩পরিবারের ভিটেমাটি বিলীন

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » পায়রার ভাঙ্গনে ৩পরিবারের ভিটেমাটি বিলীন
রবিবার ● ১ আগস্ট ২০২১


পায়রার ভাঙ্গনে ৩পরিবারের ভিটেমাটি বিলীন

দুমকি(পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

পটুয়াখালীর দুমকিতে ৩পরিবারের ভিটেমাটি, বসত:ঘর, গাছপালাসহ আকস্মিক পায়রা নদীতে বিলীণ হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার তিনটি ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন নি:স্ব হয়ে গেছে। ভাঙ্গণের আশঙ্কায় নদীর তীরবর্তি অন্তত: ১০পরিবারের বসত:ঘর, মালামাল রক্ষায় দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। সবার চোখে-মুখে ভাঙ্গনের আতংক নিয়ে তারা বসত: ঘর ভেঙ্গে টিনের চালা, বেড়া ও গৃহস্থলী মালামাল সরিয়ে নিরাপদ দুরত্বের সরকারি রাস্তার পাশের্^ অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ বসত:ঘর ভেঙ্গে নৌকা-ট্রলার ভরে পাশর্^বর্তি পাতাবুনিয়া বাজার ও জলিশা আশ্রয়ন প্রকল্পের  উদ্দেশ্যেও চলে যাচ্ছেন।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে পায়রা নদীর আকস্মিক ভাঙ্গনে মিলন মীরা ও মামুন মীরার দু’টি বসতভিটা কবরস্থান, গাছের বাগান সহ বিশাল এলাকা নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। এসময় দু’পরিবারের ৮/১০বছরের চার শিশুসহ অন্তত: ১০/১২ব্যক্তি ডুবে গেলেও তারা সাতরে তীরে ওঠতে সক্ষম হয়। একই দিন সন্ধ্যায় কুদ্দুস হাওলাদারের বসত:ঘর, বাড়ির আঙ্গিনাসহ নদী গর্ভে তলিয়ে গেলে পুরো বাহেরচর গ্রামে ভাঙ্গনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভাংগনের মুখে পরিবারগুলো তাদের সম্বল বলতে বসত:ঘর ও মালামাল রক্ষায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।
রবিবার (১ আগষ্ট) সরেজমিন বাহেরচরের ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখাযায়, পায়রাতীরবর্তি পরিবারগুলোর নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাই ব্যস্ত ত্রস্ত হয়ে মালামাল বহন করে নিকট দুরত্বের সরকারি রাস্তার ওপর স্তুপ করে রাখছেন। নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, আবদুল গোলদার, বাহাদুর হাওলাদার ও কুদ্দুস গোলদার তাদের বসতঘরের টিনের চাল, বেড়া ও অন্যান্য মালামাল পৃথক তিনটি ট্রলারে তুলছেন। তারা বলেন, তিন দফা ঘর স্থানান্তরের পর এখন আর থাকার কোন জমি নেই। তারা বলেন, ঘরের মালামাল ট্রলারে ভরে জলিশার নিকট আত্মীয়দের বাড়ির সামনে সরকারি রাস্তার পাশের্^ আশ্রয় নিতে হবে। একই ভাবে আ: জব্বর খান, বিউটি বেগম, ফয়সাল মিরা, দুলাল হাওলাদার, জলিল সিকদার, ফরিদা, ক্ষিতিষ ঘরামীসহ অন্তত: ১০পরিবার তাদের বসত:ঘর ভেঙ্গে মালামাল রক্ষায় আগে ভাগেই নিরাপদ দুরত্বে স্থানান্তর শুরু করেছেন। বাহেরচরের পায়রা তীরবর্তি ভাংগণ কবলিত এলাকার সবার চোখে মুখে শুধুই আতঙ্ক বিরাজ করছে।

---

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিগত ৫/৬বছরে প্রায় দু’শতাধিক পরিবারের ভিটেমাটি, ফসলী জমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাহেরচরের হিমান্ত ওঝা, পান্টু পাইক, বশির হাওলাদার, শাহআলম হাওলাদার, পরিমল পাইকসহ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পায়রা নদীর ভাংগনে অন্তত: দু’শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, বাগান, করবস্থান, মসজিদ, মন্দির, ফসলী জমি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের তেমন কোন খোঁজখবর নেননি। অসহায় পরিবারগুলোর বেশীরভাগই পাউবোর ওয়াপদা ভেরিবাঁেধর পাশের্^ ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ আবার পরিবার পরিজন নিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে চলে গেছে।
আঙ্গারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম মর্তুজা নদী ভাঙ্গনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পায়রা নদীর ভাঙ্গনে তার ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামটি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যেটুকু অবশিষ্ট ছিল তাও ভাংতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে পরিষদের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, ভিটিবাড়ি ও সহায়সম্বলহীন পরিবারগুলোকে আশ্রায়ন প্রকল্পের সরকারি সুবিধাও দেয়া যাবে তবে তা সময় সাপেক্ষ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ জানান, বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারে তালিকা তৈরী করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা তৈরীর পর সহযোগীতা করা হবে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রেজা আহম্মেদ বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৩২:২১ ● ২৬২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ