আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আমতলী উপজেলায় গত এক মাস ধরে ব্যাপক হারে গবাদি পশুর খুরা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ রোগে উপজেলায় অন্তত সাত হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রানী সম্পদ কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে খুরা রোগ প্রতিরোধের এফএমডি (এফএন্ডমাউথ ডিজিজ) ভ্যাকসিন নেই। এতে দিশেহারা হয়ে পরেছেন খামারীরা। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিন না থাকায় খামারীদের বাহির থেকে বিভিন্ন কোম্পনীর ভ্যাকসিন উচ্চ মুল্যে কিনতে হচ্ছে। দ্রুত ভ্যাকসিনের দাবী করেছেন খামারীরা।
আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোটতাজাকরণ খামার ও পারিবারিক খামারে ৬৮ হাজার ২’শ ১৫ গরু ও তিন হাজার ৬’শ মহিষ ও ১৮ হাজার ছাগল রয়েছে। গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে খুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ রোগের বৈশিষ্ট গরুর মুখ দিয়ে লালা ঝড়ে, পায়ে খতের সৃষ্টি হয়। এতে গরুর চলাফেরা ও খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং অতিদ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। এ রোগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৭ হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে। এদিকে আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে গবাদী পশুর খুড়া রোগে ভ্যাকসিন নেই। গত ৪ জুন পর্যন্ত উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্তৃপক্ষ ১৫ হাজার ৯’শ ৩৬ গরুর শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছেন। গত ৮ দিন ধরে প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে এফএমডি ভ্যাকসিন নেই। এতে দিশেহারা হয়ে পরেছে খামারীরা। প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিন না থাকায় বিভিন্ন কোম্পানীর ভ্যাকসিন খামারীদের উচ্চ মুল্যে কিনতে হচ্ছে। সরকারী এক ভায়েল ভ্যাকসিনের মুল্য ১৮৪ টাকা। ওই একই ভ্যাকসিন বিভিন্ন কোম্পনীর ফার্মেসি থেকে ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকায় খামারীদের কিনতে হচ্ছে। দ্রুত গরুর খুড়া রোগ প্রতিরোধ ভ্যাকসিনের দাবী জানিয়েছেন খামারীরা।
সোমবার খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার কুকুয়া, আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া, গুলিশাখালী, আমতলী সদর ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক হারে গরুর খুরা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। হলদিয়া গ্রামের মস্তফা গাজীর ৬টি গরু , শাহ আলম খাঁর ৫টি, দুলাল গাজীর ৪টি, চুন্নু মীরার ৫টি এবং উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের ঝন্টু মোল্লার ৪টি এবং একই গ্রামে দেলোয়ার চৌকিদারের ৩টি গরুসহ উপজেলা সাত হাজার গরু খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে। কৃষকরা জানান বর্ষার মৌসুমে গরুর খুড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর এ রোগ বেশী দেখা দিয়েছে।
চাওড়া ইউনিয়নের কালিবাড়ি গ্রামের খামারী মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, খামারের ১১টি গরু সব কটি খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গরুর চিকিৎসা করাতে আমি দিশেহারা। তিনি আরো বলেন, এই রোগে গরু আক্রান্ত হলে শরীর গরম হয়, মুখ ও পায়ে খত সৃষ্টি হয় এবং গরুর মুখ দিয়ে লালা ঝড়তে থাকে। এ সময় খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অতি দ্রুত গরু দুর্বল হয়ে পড়ে।
তক্তাবুনিয়া গ্রামের চুন্নু মীরা বলেন, পাঁচটি গরু খুরা রোগে আক্রান্ত। প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে এক কর্মকর্তার পরামর্শে চিকিৎসা করাচ্ছি। দুইটি গরুর জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োজন কিন্তু তা পাইনি।
হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের রুহুল আমিন বলেন, ৬টি গরুর ৫টি খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিন নেই। বাহির থেকে ৫৫০ টাকায় ভ্যাকসিন কিনতে হয়েছে।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের খামারী আলহাজ¦ মাহবুব বলেন, খামারে ১৭ টি গরুর দুইটি খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিন না পেয়ে বাহির থেকে ৬০০ টাকায় এক ডোজ ভ্যাকসিন কিনেছি।
আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিজিত কুমার মোদক বলেন, উপজেলায় ১০% গরু খুড়া রোগে আক্রান্ত। গত এক মাস ধরে গবাদী পশুর খুড়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। নিয়ন্ত্রনে এলাকায় মেডিকেল টিম কাজ করছে। আশা করি অল্প দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রন করা যাবে। তিনি আরো বলেন, গত এক মাসে খুরা রোগের এফএমডি ৯’শ ৯৬ ভায়েল অর্থাৎ ১৫ হাজার ৯’শ ৩৬ টি গরুর শরীরের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ভ্যাকসিন নেই। ভ্যাকসিনের চাহিদা পাঠিয়েছি। ভ্যাকসিন পেলে দ্রুত সুস্থ্য গরু শরীরে প্রয়োগ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ঔষধের পাশাপাশি পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন খুরা রোগে আক্রান্ত গরুর পা ধুয়ে জীবানু মুক্ত রাখতে হবে। তা হলে গরু দ্রুত সেরে উঠবে।
এমএইচকে/এমআর