চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
চরফ্যাশনের পূর্বে মেঘনা ও পশ্চিমে তেতুলিয়া নদীর উপকূলীয় এলাকায় রূপালী ইলিশ না পরায় জেলে পল্লীগুলোতে হতাশার ছাপ দেখা দিয়েছে। আড়ৎদার, দাদন ও এনজির চাপের মুখে বিভিন্ন ঘাটের জেলেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
মৎস্য ঘাটের মো.বারেক মাঝি জানান, সরকার নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ইলিশের ভরা মৌসুমে জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় একদিকে দাদনদারদের টাকা, অন্যদিকে সংসার পরিচালনার হিমশিম খেয়ে জেলেরা পালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (৯ জুলাই) বেতুয়া, সামরাজ, ঢালচর, ঘোষেরহাট মৎস ঘাটের একাধিক মাঝিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বৈশাখ মাস থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম থাকলেও তারা মহাজন থেকে জাল, তৈল, খাবার, নিয়ে বারবার নদীতে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসায় মহাজনের দেনা পরিশোধ করতে পারেনি। বউ ছেলে-সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। বেতুয়াঘাটের আলমগীর মাঝি বলেন, ১৬/২০জন ভাগি মাল্লা নিয়ে ঘাট থেকে ৫০হাজার টাকা বাজার নিয়ে মেঘনা নদীতে একগইন(একসাপ্তাহ)জন্য যাই। গইন শেষে ৬হাজার টাকার ইলিশ মাছ বিক্রি করিয়াছি। একই উক্তিতে জলিল মাঝি বলেন, প্রায় ৬০হাজার টাকা বাজার নিয়ে মাত্র ৯হাজার টাকার মাছ বিক্রি করিয়াছি। নুরে আলম মাঝি জানান, প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করে নৌকা জাল তৈরি করে সাগনে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন শুনি নদীতে মাছেই নেই।
এছাড়া অনেকে স্থানীয় বে-সরকারী অর্থপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পেরে ভোলার দক্ষিণ আইচা থানার চর মানিকা ইউনিয়নের আলাউদ্দিন মাঝি, সালাউদ্দিন মাঝি, কবির মাঝি, চৌধুরী মাঝি, ইউছুফ মাঝি, জলিল মাঝি, ভুট্টু মাঝি, আলী মাঝি বিছিন্ন দ্বীপ চরকুকরী মুকরী ইউনিয়নের আবদুস সালাম মাঝি ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দেনা করছে। প্রত্যেকে দেনার ভয়ে বাড়ি ভিটা ছেড়ে বউ ছেলে সন্তান নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।
আবদুল আলী মাঝি জানান, বর্তমান ইলিশের মৌসুমে তিনি ২ লাখ টাকা দেনার ভার বহনকরে এলাকায় বাস করছে।
দুলারহ্টা থানাধীন নুরাবাদের ভাড়ানীর মৎস্য ঘাটের খলিল মাঝে ঈদের পর দিন নদীতে ৭০হাজার টাকা বাজার ও বরফ নিয়ে মৎস্য শিকারে গিয়েছিলেন। ৬ দিনের মাছ শিকারে মাত্র ১১হালি(৪৪) পিচ ইলিশ তার জালে ধরা পরেছে। তিনি সংবাদকমীরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবারে বিকালে নদীতে থেকে চলে আসছি। খাওয়ার মাছ ছাড়া কোন মাছ নদীতে মিলেনা। দায়-দেনা হয়ে খুবই সমস্যার মধ্যে পড়ে আছি।
বেতুয়া ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী নুরে আলম মাষ্টার, লাখ লাখ টাকা নদীতে দাদন দেয়া হয়েছে। মাছ না থাকায় যেমনি মাঝি মাল্লারা বিপাকে তেমনি আমরাও ভাল নেই।
গত বছর এই মৌসুমে নদীতে পর্যপ্ত ইলিশ মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়েছে। সরকারি ভাবে গভীর সমুদ্রে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। ১মে থেকে জেলেরা নদীতে মাছ ধরা শুরু করেছে। প্রায় দু‘মাস অতিক্রম হলেও নদীতে কোন মাছ পড়েনা। ফলে জেলে পল্লীতে চলছে হতাশা।
দেনার ভয়ে পালিয়ে যাওয়া জেলেদের ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, তার কাছে জেলে সমিতি থেকে এমন কোন অভিযোগ করেননি বিধায় পলাতক জেলেদের তালিকা তার কাছে নেই।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, সরকারী হিসেব মতে উপজেলায় একুশ হাজার দুইশত দশ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। তবে বে-সরকারী হিসেবে ২৫ হাজার জেলে নদীর ইলিশ মাছ শ্কিারের উপর নির্ভশীল রয়েছে। বাকী জেলেরা নিবন্ধনের অপেক্ষায় আছে। তিনি আরও জানান, জীববৈচিত্র, আবহাওয়া, ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে বিগত ২বছর যাবৎ ইলিশের ভরা মৌসুমে জেলেদের জালে প্রচুর পরিমানে রূপালি ইলিশের দেখা মেলেছে।
এএইচ/এমআর