ভুয়া আইডিতে বন্দর থেকে খালাস হয়ে গেছে হাজার হাজার চালান
প্রথম পাতা »
চট্টগ্রাম »
ভুয়া আইডিতে বন্দর থেকে খালাস হয়ে গেছে হাজার হাজার চালান
শনিবার ● ১৯ জানুয়ারী ২০১৯
সাগরকন্যা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট॥
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কতিপয় কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে বন্দর থেকে হাজার হাজার চালান খালাস হয়ে গেছে। প্রাথমিক তদন্তে ভুয়া ইউজার আইডি ব্যবহার কওে ঘোষণাবহির্ভূত উচ্চ শুল্কহার, আমদানিনীতি পরিপন্থী, জাতীয় ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন পণ্য খালাসের প্রমাণ মিলেছে। ইতিমধ্যে দুটি আইডির বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক পণ্য খালাসের তথ্য এনবিআরে জমা দেয়া হয়েছে। তবে তার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহে শুল্ক গোয়েন্দারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের মাধ্যমে পণ্য খালাস করতে কাস্টম হাউজের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। একজনের আইডি ও পাসওয়ার্ড অন্যজন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। কোনো কর্মকর্তা কোনো কাস্টম হাউজ থেকে বদলি হলে বা বিদায় নিলে সংশ্লিষ্ট ইউজার আইডি প্রোগ্রামার কর্তৃক বন্ধ করা হয়। ফলে বিদায় নেয়ার পর ওই ইউজার আইডি থেকে পণ্য খালাসের কোনো সুযোগ নেই। তবে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কিছু কর্মকর্তা এমন ধরনের কাজ করে আসছে। ইতিমধ্যে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য খালাসের বেশকিছু অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে কাস্টম হাউজের সাবেক দুই কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার করে ৩ হাজার ৭৭৭টি চালান অবৈধভাবে খালাসের প্রমাণ পান শুল্ক গোয়েন্দারা। ওই প্রক্রিয়ায় উচ্চ শুল্কের পণ্যে ন্যূনতম শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি ও অবৈধ পণ্য আমদানি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত অনুযায়ী ঢাকার গুলশান এলাকার একটি প্রতিষ্ঠান মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করছে বলে খবর পায়। ওই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল ওই প্রতিষ্ঠানটির একটি চালান খালাস না করতে নির্দেশ দেয় শুল্ক গোয়েন্দার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়। শুল্ক জালিয়াতির সংবাদ থাকায় ২৫ জুন চালানটি স্থগিত করতে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইসি) কাস্টমসকে নির্দেশ দেয়। তারপর চট্টগ্রাম কাস্টমস অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে শুল্ক গোয়েন্দার নামের বিপরীতে পণ্য চালানটির বিল অব এন্ট্রি লক করে দেয়। পরবর্তী সময়ে ৫ সেপ্টেম্বর চালানটির কায়িক পরীক্ষা শেষ করে খালাস করতে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে চিঠি দেয় শুল্ক গোয়েন্দা। তবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সাড়া না দেয়ায় অনুসন্ধানে নামে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। অনুসন্ধানে জানা যায় চালানটি বিশেষ কায়দায় খালাস হয়ে গেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টা ৫৮ মিনিটে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে রাজস্ব কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলামের আইডি ব্যবহার করে চালানটি আনলক করা হয়। পরে বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে এক্সিট নোট ইস্যু করে চালানটি খালাস নেয়া হয়। যা কাস্টম হাউজ বা শুল্ক গোয়েন্দা জানে না। চালান খালাস হওয়ার পর ২৭ সেপ্টেম্বর একই আইডি ব্যবহার করে সিস্টেমে চালানটি আবার লক করে দেয়া হয়। এভাবে ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাস্টমসের এক কর্মকর্তার আইডি থেকে ১১৬টি চালান খালাস করা হয় বলে তদন্তে উঠে আসে। যদিও ওই কর্মকর্তা অনুসন্ধানাধীন সময়ের তিন বছর আগে ২০১৫ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের আরেকজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার করে ৩ হাজার ৬৬১টি চালান অবৈধভাবে খালাসের প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ওই কর্মকর্তা ২০১৫ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে বদলি হন। ৩ বছর ধরে তিনি ঢাকায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত। কিন্তু ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তার আইডি থেকে ওসব চালান খালাসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এমন আরো আইডি ব্যবহার করে কাস্টম হাউজ থেকে অবৈধভাবে পণ্য খালাস হচ্ছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
সূত্র আরো জানায়, অতিসম্প্রতি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় দুটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা। মামলার পরপরই কাকরাইল থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে জালিয়াতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার এ কে এম নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, পণ্য খালাসে ইউজার আইডি অপব্যবহারের অভিযোগ হয়তো সত্য। কোনো কর্মকর্তা অবসরে গেলে বা বদলি হলে তার আইডি প্রোগ্রামের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে এর আগে ২৯১টি ফাইল গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম জানান, তদন্তে চমকপদ ও উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ৭:২৩:০৮ ●
৫৭৫ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)