কলাপাড়ায় ছ’আনিপাড়ায় ঘর-বড়ির ক্ষতিপূরণ দাবি রাখাইনদের

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কলাপাড়ায় ছ’আনিপাড়ায় ঘর-বড়ির ক্ষতিপূরণ দাবি রাখাইনদের
মঙ্গলবার ● ৬ জুলাই ২০২১


কলাপাড়ায় ছ’আনিপাড়ায় ঘর-বড়ির ক্ষতিপূরণ দাবি রাখাইনদের

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥

কলাপাড়ার পায়রা বন্দর ঘেঁষা অধিগ্রহনকৃত ছয় আনিপাড়া রাখাইন পল্লীর ছয় পরিবারের যথাযথ পুনর্বাসন এবং অবকাঠামোসহ বাড়িঘরের ক্ষতিপুরনের অর্থ পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিতে সকল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সোমবার রাখাইন কমিউনিটির পক্ষ থেকে মাদবর চিংদামো ওরফে দামো মংকে নিয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন আলোচনায় বসেন। যেখানে পায়রা বন্দরের সহকারী পরিচালক (ভূমি) মাহমুদ হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিএম সরফরাজসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক জনকন্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আরও জানান, রাখাইন পরিবারের সদস্যরা তাদের সকল কৃষ্টি কালচার পালন করে যেন স্বাচ্ছন্দবোধ করে ববসবাস করতে পারেন এমনভাবে পুনর্বাসনের জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
রাখাইন দামো জানান, তাঁদের অধিগ্রহনকৃত পাঁচ একর ৫৪ শতক জমির মালিকানার দ্বন্ধ নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। যার মূল্য সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো। এ টাকা পাওয়া অনিশ্চিত। তবে ঘরবাড়িসহ অবকাঠামো বাবদ ৯১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা রয়েছে জেলা প্রশাসনের অধিগ্রহন শাখায়। যা পরিশোধ করলে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বোঝাপড়া করে পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত পরিবেশসম্মত বাসা ভাড়া করে থাকা যেত। কিন্তু এই টাকার নোটিশ পেলেও কথিত এক দাবিদার সাদিকুর রহমান অধিগ্রহন শাখায় লিখিত আপত্তি দিয়ে রেখেছেন। যার শুনানি হবে ১৫ জুলাই।
রাখাইন মাদবর দামো মংসহ অন্যান্যরা আরও জানান, তাঁদের কৃষ্টি-কালচারের সঙ্গে মিল নেই; এমন জায়গায় বাঙালিদের সঙ্গে থাকার জন্য পুনর্বাসনের কেন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আর পুনর্বাসনের আগে কীভাবে উচ্ছেদ করার জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ মরিয়া হয়ে লেগেছেন তাও বুঝতে পারছিলেন না। এ কারণে তারা চরম উৎকন্ঠায় পড়েছেন। তারপরও ক্ষতিপুরনের সকল অর্থ এককালীন পরিশোধ করে অন্য রাখাইন পল্লী ঘেঁেষ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি তাঁদের। তাইলে তাঁদের পল্লী ছেড়ে গেলেও কষ্ট বহুগুনে লাঘব হবে।
কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের মধ্যটিয়াখালী গ্রামে ছয় আনি রাখাইন পাড়ায় মোট জমির পরিমান আট একর। ইটবাড়িয়া মৌজার যার খতিয়ান নম্বর ১২২ ও ১২৩। জেএল নম্বর আট। এর মধ্যে বাড়িঘরসহ জমির পরিমান পাঁচ একর ৫৪ শতক। এ জমি নিয়ে গাজী গংদের সঙ্গে একটি মামলা চলমান রয়েছে। রাখাইনদের পক্ষে রাখাইন মৃত চিংলামং মামলাটি দেখভাল করতেন। তারপরও বসবাসরত  রাখাইনরা বলেন, তাদের এাওয়ার্ডের টাকা বুঝে পেলে তারা চলে যাবেন। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ মহিউদ্দিন আহম্মেদ খান জানান, রাখাইনদের কৃষ্টি-কালচার রক্ষা করে নির্বিঘেœ বসবাস করার মতো স্পেসে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কোন সমস্যা নেই। আর অধিগ্রহণের টাকা তো জেলা প্রশাসন মালিকানা নিশ্চিত করে পরিশোধ করবে। এনিয়ে রাখাইনদের সঙ্গে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। এদিকে রাখাইন সম্প্রদায়ের জমি অধিগ্রহন কেন্দ্রীক গণমাধ্যমের খবরকে কেন্দ্র করে ওই জমির মালিকানা দাবি করে মঙ্গলবার দুপুরে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। স্থানীয় বাঙ্গালী ১০ পরিবারসহ একটি রাখাইন পরিবার এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন অধিগ্রহণকৃত জমির মূল মালিক প্রয়াত রাখাইন ফ্রুয়েন মগনী। তার মৃত্যুতে সম্যক জমির মালিকানা দাবি করে জনৈক চিংলামোং আদালতের ডিক্রি পেয়েছেন। যারা বর্তমানে ছয় আনি পাড়ায় বসবাস করছে তারা কেউ জমির মালিক নন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গাজী আব্বাস উদ্দিন বাচ্চু। তিনিও বলেন, অবকাঠামোসহ বাড়িঘরের টাকার দাবি তারা করছেন না। কিন্তু জমির দাবিনামা নিয়ে দামো মগ ভুয়া মালিক হতে চাচ্ছেন। ভুয়া ওয়ারিশ বানাচ্ছেন। তার কারণে বহু লোকের অধিগ্রহণকৃত কোটি কোটি টাকা আটকে আছে অধিগ্রহন শাখায়। বাচ্চু জানান এই পাঁচ একর ৪৫ শতক জমি প্রায় ৬০ বছর আগে ক্রয় করে ভোগদখল করে আসছেন। দামো মং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেন। বর্তমানে কলাপাড়ায় এ বিষয়টি টক অব দি কলাপাড়ায় পরিণত হয়েছে।

এমইউএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:১১:২৮ ● ৬২৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ