কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
অজ্ঞাত পরিচয় মানসিক ভারসাম্যহীন এই যুবক আলীপুর তিন মাথা সড়কের পাশে পড়ে কাতরাচ্ছিল। বৃষ্টিতে ভিজতেছিল। মঙ্গলবার, রাত প্রায় সাড়ে নয়টা। তার ডান পা কোন যানবাহনের নিচে পড়ে গোড়ালির উপর থেকে সম্পুর্ণভাবে ভেঙ্গে গেছে। যেন মানবতা কাদছিল। ওই খবরটি পৌছে যায় জন্মভূমি কুয়াকাটা ক্লাবের সদস্য কেএম বাচ্চুর কাছে। ছুটে আসেন। কোলে করে, কোনমতে অটোবাইকে তুলে প্রথমে কুয়াকাটা হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মধ্যরাতে কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্মরত চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে বরিশালে প্রেরণ করার সুপারিশ করেন। হৃদয়বান বাচ্চুর পাশে দাঁড়ায় আর এক মানবতাকর্মী মোঃ মিন্টু। দুই জনে মিলে জনপ্রতিনিধি লতাচাপলীর চেয়ারম্যান আনসার উদ্দিন মোল্লা, ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হকের আর্থিক যোগানে ওই রাতেই ভারসাম্যহীন আহতকে বরিশালে নিয়ে পায়ের ব্যান্ডেজ করিয়ে দেয়। ফের পরেরদিন কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। যেন মানুষ অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর প্রবল ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসল আরেক হৃদয়বান যুবক আমরা কলাপাড়াবাসী সংগঠনের ইমরান। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী সাইফুল ইসলাম রয়েলও এগিয়ে গেলেন হাসপাতালে। এরা এখন ওই অসহায় মানুষটির দেখভাল করছেন।
কলাপাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক স্বাস্থ্য প্রশাসক চিন্ময় হাওলাদার খোঁজ-খবর রাখছেন। নার্সরাও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। যেন সবাই মিলে একটি ইতিবাচক চিন্তার দুয়ার খুলে এগিয়ে আসলেন। অসহায় ওই ভারসাম্যহীন মানুষটির খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসার সকল খেয়াল রাখছেন এসব যুবরা। যেন সবাই মিলে একটি মানবিক সমাজ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ওরা সেবা করছেন অসহায় মানুষটির। জানালেন বাচ্চু, দীর্ঘ লকডাউনে রাস্তার ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে দুই বেলা খাবারের যোগান দেন এরা। সমাজ গড়ার আধুনিক প্রজন্ম এঁরা যদি না এগিয়ে আসত, হয়তো বা কোন মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকত মানসিক ভারসাম্যহীন এই পা ভেঙ্গে যাওয়া মানুষটি। বাচ্চু, মিন্টু ও ইমরান জানালেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে যদি এই রোগীর পা ভালো নাা হয় তাইলে অপারেশন করানো দরকার হবে। যা নিয়ে তারা আছেন অজানা শঙ্কায়। কীভাবে সামলাবেন এ মানুষটির চিকিৎসা ব্যয়। ভারসাম্যহীন এ মানুষটি নিজের নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারছেন না। শুধু ক্ষুধার সময় ইশারা করেন।
এমইউএম/এমআর