আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদারের চাহিদামত টাকা দিতে না পারায় ছয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে স্টল বরাদ্দ দেয়নি। এতে আমতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দরের ছয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছে। তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এমন অভিযোগ সমীর চন্দ্র শীল, সান্টু মৃধা ও কাসেম মোল্লার। এতে ওই ছয় ব্যবাসায়ী পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পরেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে স্টল বরাদ্দের দাবী ওই বন্দরের ব্যবসায়ীদের। এ ঘটনায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমীর চন্দ্র শীল ও সান্টু মৃধা সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর বন্দরের প্রাণ কেন্দ্রে ৫ শতাংশ সরকারী খাস জমি ১৯৯৩ সালে তৎকালিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক তালুকদার পরিষদের নামে বন্দোবস্ত নেয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ওই জমিতে পরিষদের অর্থায়নে টিন শেডের স্টল নির্মাণ করেন। ওই স্টলে সোবাহান প্যাদা, ফারুক গাজী, কাসেম মোল্লা, সমীর চন্দ্র শীল, নেয়ামত মৃধা ও জাকির মুন্সির নামে মাসিক দুই’শ টাকা ভাড়ায় বরাদ্দ দেয় ইউনিয়ন পরিষদ। গত ২৭ বছর ধরে ওই ছয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্টলে ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে। গত ১০ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদার স্টল সংস্কারের নামে ভেঙ্গে ফেলে। ১৫ মে ওই স্টলের সংস্কার কাজ শেষ হয়। স্টল সংস্কার কাজ শেষ হলেও চেয়ারম্যান ওই স্টল বরাদ্দ দেয়নি। এতে গত তিন মাস ধরে ছয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। চেয়ারম্যান স্টল বরাদ্দ না দিয়ে ওই ছয় ব্যবসায়ীদের সাথে টালবাহানা শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার ও সংরক্ষিত নারী সদস্য মোসাঃ হাসনাহেনা স্টল বরাদ্দের নামে বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে অন্তত ৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এদিকে গত ২১ জুন আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়। ওই নির্বাচনে চোয়ারম্যান হারুন অর রশিদ পরাজিত হয়। ওই রাতেই চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ পুর্বের বরাদ্দকৃত ছয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নামে স্টল বরাদ্দ না দিয়ে ইসমাইল কাজী, জাকির মুন্সি, রুবেল, সোহেল প্যাদা, কামাল খাঁন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য হাসনাহেনাকে স্টল দখলে দেয়। এতে বিপাকে পড়ে ওই ছয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পরেছে। ওই বন্দরের ব্যবসায়ীরা পুর্বের ছয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নামে স্টল বরাদ্দের দাবী জানিয়েছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামীম মীর অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার আমাকে স্টল বরাদ্দ দেয়ার নামে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন কিন্তু স্টল দেয়নি। বেশী টাকা নিয়ে ওই স্টল ইসমাইল কাজীর নামে দখলে দিয়েছেন। ব্যবসায়ী সমীর চন্দ্র শীল অভিযোগ করে বলেন, গত ২৭ বছর ধরে ওই স্টলে ব্যবসা করে আসছি। সংস্কারের নামে স্টল ভেঙ্গে দেয় চেয়ারম্যান ও নারী সদস্য হাসনাহেনা। চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ আমার কাছে এক লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করে। আমি ওই টাকা দিতে না পারায় আমাকে স্টল বরাদ্দ দেয়নি। টাকা নিয়ে ওই স্টল কামাল খাঁনের দখলে দিয়েছে। ব্যবসায়ী সান্টু অভিযোগ করেন, স্টল বরাদ্দের কথা বলে নারী সদস্য হাসনাহেনা আমার কাছ থেকে ৩২ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু আমার নামে স্টল বরাদ্দ দেয়নি।
ওই বন্দরের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির বলেন, গত ২৭ বছর ধরে ছয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ওই স্টলে চা, পান সিগারেটের দোকান ও সেলুন দিয়ে ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। স্টল সংস্কারের নামে চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু কাউকে স্টল বরাদ্দ দেয়নি। যারা বেশী টাকা দিয়েছে তাদের স্টল দখলে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সংরক্ষিত নারী সদস্য মোসাঃ হাসনাহেনা স্টল বরাদ্দে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার নামে কোন স্টল বরাদ্দ নেই।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন,সঠিকমতই স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। ভুমি কর্মকর্তার প্রতিবেদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর