আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
নির্মাণের ১৫ বছরের মাথায় কোটি টাকার আয়রণ ব্রিজ আপনা-আপনী ভেঙ্গে নদীতে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পরেছে ৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। দ্রুত ব্রিজ নির্বাণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার মহিষডাঙ্গা গ্রামে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
জানাগেছে, আমতলী সদর ও চাওড়া ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে বদ্ধ চাওড়া খালে দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনে মহিষডাঙ্গা গ্রামের ঠিকাদার শামীম আহসান ম্যালাকার বাড়ীর সামনে ২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর আয়রণ ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এক কোটি টাকা ব্যয়ে ওই ব্রিজ নির্মাণের দরপত্র আহবান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ওই ব্রিজের কাজ পায় বশির উদ্দিন সিকদার নামের এক ঠিকাদার। কিন্তু ওই ঠিকাদার শামীম আহসান ম্যালাকারের খালু শ^শুর হওয়ায় কাজটি তিনি করেন। ঠিকাদারের বাড়ীর সামনে ব্রিজ নির্মাণে স্থানীয় প্রকৌশল অফিসের কোন তদারকি ছিল না। ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামত নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করেছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। কার্যাদেশে ইআই পোষ্ট (রেলপোষ্ট) দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার স্থানীয়ভাবে লোহার প্লেট দিয়ে ফাপা পোষ্ট তৈরি করে ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। এছাড়া নি¤œমানের লোহার বিম ব্রিজ নিমার্ণে ব্যবহার করেছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন পোষ্ট যতটুকু গভীরতা দেয়া কথা তা দেয়নি ঠিকাদার শামিম। নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ব্রিজের কাজের শুরুতেই স্থানীয়রা বাঁধা দেয়। কিন্তু এতে ঠিকাদারের তোপের মুখে পড়েন তারা এমন অভিযোগ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয়দের। নির্মাণের তিন বছরের মাথায় ২০০৯ ওই ব্রীজের মাঝখান দেবে যায়। ব্রিজ দেবে যাওয়ার বিষয়টি তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আতিয়ার রহমানকে স্থানীয়রা জানালেও তিনি তাতে কর্মপাত করেনি। ওই সময়ে ঠিকাদার শামীম আহসান দেবে যাওয়া ব্রিজ রক্ষায় ব্রিজের সামনে পিলার পুতে দেন, যাতে বড় কোন যানবাহন ওই ব্রিজে উঠতে না পারে। গত ১৫ বছরে ছোট যানবাহন ও মানুষ ছাড়া কিছুই ওই ব্রিজে উঠতে পারেনি বলে জানান স্থানীয় অলিল খাঁন ও মাহাদী হাসান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই ব্রিজ আপনা-আপনী ভেঙ্গে চাওড়া নদীতে পড়ে যায়। আপনা-আপনী ব্রিজ ভেঙ্গে পরায় এলাকার মানুষের মাঝে চাঞ্চল্য ও কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে শুক্রবার আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অফিসের লোকজন ভাঙ্গা ব্রিজ পরিদর্শন করেছেন।
ওই ব্রিজ ভেঙ্গে পরায় আমতলী সদর ইউনিয়নের ভায়লাবুনিয়া, মহিষডাঙ্গা, পূর্ব মহিষডাঙ্গা, নাচনাপাড়া, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া,তুজির বাজার ও চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া, চলাভাঙ্গা ও লোদা গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পরেছে। ওই ব্রিজ দিয়ে চলাচল সম্পুর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাউনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুর্ব মহিষডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শামিম আহসান দাখিল মাদ্রাসা, নুরানী মাদ্রাসা , ইব্রাহিমিয়া হাফিজি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং কাউনিয়া আশের্^দিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদের মুসুল্লীদের পারাপার বন্ধ হয়ে গেছে। দুই ইউনিয়নের মানুষের মেলবন্ধনে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, ১০০ মিটার ব্রিজের মহিষডাঙ্গা গ্রামের পাড়ের অন্তত ৫০ মিটার ব্রিজ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেছে। ওই ভেঙ্গে পরা ব্রিজে শিশুরা ছুটোছুটি করছে। কাউনিয়া গ্রামের পাড়ের ৫০ মিটার দাড়িয়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ব্রিজ দেখতে ভীড় করছে।
মহিষডাঙ্গা গ্রামের রুহুল আমিন ও সুমন মল্লিক বলেন, কারন ছাড়াই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্রিজ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেছে। ব্রিজ ভেঙ্গে পরায় ৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পরেছে। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানান তারা।
কাউনিয়া গ্রামের হেলাল মিয়া বলেন, ব্রিজ ভাইঙ্গ্যা পরায় মোরা ভোগান্তিতে পরেছি। এ্যাহন এপারের মানু ওপাড়ে যাইতে পারমু না।
কাউনিয়া গ্রামের শাফিয়া বেগম বলেন, ‘ব্রিজডা ভাইঙ্গ্যা পইর্যা মোগো এ্যাহন আর ভোগান্তির শ্যাষ নাই। মুই হহালে ব্রিজ নির্মাণের দাবী হরি।
কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোসাঃ শাহনাজ পারভীন বলেন, ওই ব্রিজ পার হয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে। ব্রিজ ভেঙ্গে পরায় শিক্ষার্থীদের বেশ অসুবিধা হবে। বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার আগেই ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানান তিনি।
আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, আমতলী ও চাওড়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তি চাওড়া খালের মহিষডাঙ্গা ও কাউনিয়া গ্রামের সংযোগ ব্রিজ ভেঙ্গে পরায় ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দুই ইউনিয়নের ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ব্রিজ নির্মাণ করা না হলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না। দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
ঠিকাদার আলহাজ¦ শামীম আহসান ম্যালাকার ব্রিজ নির্মাণে নি¤œমানের মালামাল ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে বলেন, সঠিক নিয়মে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার বশির উদ্দিন সিকদার ব্রিজ নির্মাণ করেছেন।
ঠিকাদার মোঃ বশির উদ্দিন শিকদার বলেন, ওই ব্রিজের কাজটি আমি করিনি। করেছে শামীম আহসান।
আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ব্রিজ ভেঙ্গে পরার খবর পেয়ে শুক্রবার ওই ব্রিজ পরিদর্শনের জন্য লোক পাঠানো হয়েছে। দ্রুত ওই ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী দফতরে প্রকল্প দেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর