বরগুনা সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
নৌকার সমর্থন না করায় ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ কুদ্দুস হাওলাদারকে কান ধরে ওঠবস, টাকা ও স্বর্নালংকার ছিনতাইকারী হত্যা মামলার আসামী মোঃ মহিবউল্লাহ কিরণকে গ্রেফতার করেছে বরগুনা ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে চাওড়া পাতাকাটা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিরণ গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তারা এ ঘটনার সাথে জড়িত উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ মাহবুব ইসলামসহ সকলকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানাগেছে আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোঃ আখতারুজ্জামান বাদল খান স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ মহসিন হাওলাদারকে পরাজিত করে তৃতীয় বারের মত বিজয়ী হন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়েই আওয়ামীলীগ প্রার্থী আখতারুজ্জামান বাদল খানের মামাতো ভাই উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ মাহবুব ইসলাম, হত্যা মামলার আসামী মোঃ মহিবউল্লাহ কিরণ, মনিরুল ইসলাম হাওলাদার, রাশেদুল হাওলাদার ও রিয়াদ সিকদারসহ ৪০-৫০ জন সমর্থক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তান্ডব চালায়। মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুব ও হত্যা মামলার আসামী মহিবউল্লাহ কিরণ ও তাদের দলবল স্বতন্ত্র প্রার্থীও সমর্থক পাতাকাটা গ্রামের কুদ্দুস হাওলাদারের বাড়ীতে অতর্কিত হামলা চালায়। ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুব ও মহিবউল্লাহ কিরণের নেতৃত্বে কুদ্দুস হাওলাদারকে তার স্বজনদের সামনে কান ধরে ওঠবস করান। তাকে রক্ষায় তার ছেলের বউ রুমানা ও ভাইয়ের ছেলের বউ ফিরোজা এগিয়ে আসলে তারা তাদের মারধর করে। তাকে ওঠবস করানোর সময় তারা উল্লাস করে। পরে তারা তার (কুদ্দুস) ঘরের আলমিরা ভেঙ্গে নগদ ১৮ হাজার টাকা ও দের ভরি স্বর্নালংকার নিয়ে যায় এমন অভিযোগ কুদ্দুস হাওলাদারের। তাদের ভয়ে কুদ্দুস হাওলাদারকে রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। এছাড়া আমতলী গরুর বাজার থেকে দুটি ছাগল ছিনতাই, পাতাকাটা, চন্দ্রা, চালিতাবুনিয়া ও তালুকদার বাজার এলাকার অন্তত ২০ টি বাড়ীতে হামলা চালিয়ে বাড়ী ঘর ভাংচুর ও মালামাল লুটপাটের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এসব ঘটনায় বুধবার আমতলী থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে বরগুনা ডিবির ওসি মোঃ আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে এসআই সরোয়ার অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার আসামী বৃদ্ধকে কান ধরে ওঠবস, টাকা ও স্বর্নালংকার ছিনতাইকারী মহিবউল্লাহ কিরণকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমানে তিনি বরগুনা ডিবি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে বলেন স্বীকার করেন এস আই সরোয়ার।
বৃদ্ধ কুদ্দুস হাওলাদার কান্নাজনিত কন্ঠে অভিযোগ করেন, আওয়ামীলীগ প্রার্থী মোঃ আখতারুজ্জামান বাদল খানের সমর্থণ না করায় আমাকে তার মামাতো ভাই উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুব ইসলাম ও হত্যা মামলার আসামী মহিবউল্লাহ কিরণের নেতৃত্বে মনিরুল হাওলাদার, রাশেদুল হাওলাদার ও রিয়াদ সিকদারসহ ৪০-৫০ সন্ত্রাসী আমার বাড়ীতে হামলা চালায়। আমার ঘরের আলমিরায় ভেঙ্গে নগদ ১৮ হাজার টাকা ও দের ভরি স্বর্নালংকার ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। তিনি আরো বলেন, তারা টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়েই খ্যান্ত হয়নি, আমাকে আমার স্বজনদের সামনে কান ধরে ওঠবস করিয়েছেন। আমাকে রক্ষায় আমার ছেলের বউ রুমানা ও ভাইয়ের ছেলের বউ খাদিজা এগিয়ে আসলে তাদের মারধর ও শ্লীলতাহানী করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
চালিতাবুনিয়া গ্রামের সোয়েব গাজী বলেন, নির্বাচনে নৌকার সমর্থণ না করায় ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ মাহবুব ইসলাম আমাকে মারধর করে আমতলী ছাগলের বাজার থেকে দুটি ছাগল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ মাহবুব ইসলাম সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার মান সম্মান ক্ষুন্ন করতেই এ মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ মহসিন হাওলাদার বলেন, নৌকার প্রার্থী মোঃ আখতারুজ্জামান বাদল খানের মামাতো ভাই উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ মাহবুব ইসলাম ও হত্যা মামলার আসামী মোঃ মহিবউল্লাহ কিরণসহ ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী আমার কর্মী সমর্থকদের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে মারধর, ঘর বাড়ী ভাংচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। গত তিন দিনে তারা অন্তত ২০ বাড়ীতে হামলা চালিয়েছে। তিনি আরো বলেন, একজন বৃদ্ধ মানুষকে কান ধরে ওঠবস করানো অত্যান্ত দুঃখজনক।
চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আখতারুজ্জামান বাদল খান বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুব ইসলাম ও আমার কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। তাদের হয়রানী করতেই এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।
বরগুনা ডিবির ওসি মোঃ আবিদুর রহমান বলেন, মহিবউল্লাহ কিরণকে একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর