কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
গভীর-অগভীর সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় জেলেদের দেয়া সরকারের খাদ্য সহায়তার চাল অন্য পেশার অন্তত তিন হাজার ভুয়া কার্ডধারী হাতিয়ে নিচ্ছে। বছরের পর বছর এরা জেলেদের চাল হাতিয়ে নিলেও উপজেলা মৎস্য অফিস, উপজেলা প্রশাসন জেলে তালিকা হালনাগাদ কিংবা যাচাই-বাছাই না করায় প্রকৃত জেলেদের সকলের ভাগ্যে সরকারের খাদ্য সুবিধা জুটছেনা। পরিবার পরিজন নিয়ে বঞ্চিতরা সীমাহীন অনটনে দিন কাটাচ্ছে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে তালিকায় অনিয়মের ভয়ঙ্কর তথ্য। চুঙ্গাপাশা গ্রামের নুরুল ইসলাম তালুকদার ভাড়াটে হোন্ডা চালায়। জেলে পেশায় নেই। তাকেও জেলে ভিজিএফএর চাল বিতরণ করা হয়েছে। তারও রয়েছে জেলে নিবন্ধন কার্ড। নিশানবাড়িয়া গ্রামের মিজানুর রহমান রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তারও রয়েছে জেলে নিবন্ধন কার্ড। তিনিও পেয়েছেন এই চাল। সমুদ্র তো দুরের কথা; নদী কিংবা পুকুরেও মাছ ধরেনি কখনও। নেই একটি ঝাকি জালও মোঃ ফরিদের। ব্যবসা করেন। তারও রয়েছে জেলে নিবন্ধন কার্ড। এভাবে ভ্যানচালক, টো টো করে, ঢাকায় থাকেন। দলিল লিখক, হোটেল ব্যবসায়ী, ট্রলির চালক থেকে শুরু করে জেলে নন এমন হাজারো মানুষ জেলে নিবন্ধিত হয়ে সরকারের দেয়া জেলেদের মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ের চাল উত্তোলন করে নিচ্ছেন। এমনকি একজন ভাগ্যবান পাওয়া গেছে, নাম তার নিজাম হাওলাদার তার নাম রয়েছে তালিকার তিন জায়গায়। শুধুমাত্র চাকামইয়া ইউনিয়নে কয়েকদিন খোঁজ-খবর নিয়ে জেলেদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্রের এমন হাল-হকিকত মিলেছে। এরা জেলেদের নামের বরাদ্দের চাল উত্তোলন করে আসছেন। এমন অনিয়ম আর অরাজক পরিস্থিতির তালিকা তৈরি করা হয়েছে জেলেদের নিবন্ধনে। এমনকি সম্পুর্ণ তালিকা যাচাই-বাছাই করলে মৃত ব্যক্তির নামও পাওয়া যাবে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির কেরামত জানান, মৃত কোন ব্যক্তিকে চাল দেয়া হয়নি। তাঁদের নাম বাদ দিয়ে মৎস্য অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন তালিকা করে সঠিকভাবে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং দুইটি পৌরসভার জেলেদের তালিকায় অনিয়মে যেন সয়লাব। অন্তত তিন হাজার অন্য পেশার লোক তালিকাভুক্ত হয়ে জেলেদের বরাদ্দের চাল হাতিয়ে নিচ্ছে। এনিয়ে কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সভায় বহুবার বলা হয়েছে। কিন্তু মৃত ব্যক্তির নামটি পর্যন্ত বাদ দেয়া হয়নি। কিংবা তালিকা হাল-নাগাদ করা হয়নি। আর তালিকা হালনাগাদ না করায় বহু প্রকৃত জেলের নাম বাদ পড়েছে, যারা গভীর-অগভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করে আসছে। গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করা জেলে সংগঠন গুলো এই তালিকা দ্রুত হাল-নাগাদ করার দাবি করেছেন। ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল আকন জানান, তার ইউনিয়নে জেলে নিবন্ধন কার্ডধারীর সংখ্যা ১৭৪৮ জন। যার মধ্যে কিছু লোক পেশা বদলেছে। কিন্তু আরও দুই হাজার প্রকৃত জেলে রয়েছে যাদের নাম নিবন্ধিত হয়নি। এরা প্রকৃত জেলে। লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মৎস্য ব্যবসায়ী আড়ত মালিক নেতা আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, ২২৯২ জন নিবন্ধিত জেলে কার্ড রয়েছে তার ইউনিয়নে। যেখানে পেশা পাল্টেছে এমন কার্ডধারী রয়েছে প্রায় পাঁচ শ’ জন। আবার প্রকৃত জেলে এমন ৫০০ জন বাদ পড়েছেন। তাদের নিবন্ধন করা জরুরি। তাই সরকারের বিশেষ ভিজিএফ এর চাল প্রকৃত জেলেদের বিতরণের জন্য তালিকা হাল-নাগাদ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নইলে মৃত ব্যক্তি এবং অপেশাদারী লোকজনের নামের চাল কালো বাজারে চলে যাচ্ছে বলে সচেতন মহলের দাবি। কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য অফিসের দেয়া তালিকা অনুসারে কলাপাড়ায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৫ জন। যেখানে অন্তত তিন হাজার ব্যক্তি জেলে নন, রয়েছে ভুয়া নাম। তারা অন্য পেশায় নিয়োজিত থেকে জেলেদের বরাদ্দের চাল আত্মসাত করে যাচ্ছে। আর প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত রয়েছেন। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, চাল বিতরনে অনিয়মের সুযোগ নেই। কেউ করলে দায়ও তার। মৃত ব্যক্তির স্থলে ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রকৃত অন্য জেলের নাম অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। আর এই বছরের মধ্যে জেলেদের সকল তালিকা যাচাবাছাই করে প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে বলে জানালেন এ কর্মকর্তা।
এমইউএম/এমআর