আমতলীতে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপদে বহাল!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপদে বহাল!
বৃহস্পতিবার ● ১০ জুন ২০২১


আমতলীতে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বপদে বহাল!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

অবসরে গিয়েও বহাল তবিয়তে আছেন আমতলী উপজেলার পুর্ব চিলা রহমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এন আর হুমায়ুন কবির। জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ উপেক্ষা করে তিনি নিয়ম বর্হিভুত ভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন এমন অভিযোগ স্কুল শিক্ষক কর্মচারীদের। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবী করেন দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তিনি অবসরে গিয়েও প্রধান শিক্ষক হিসেবে থাকতে পারবেন।
জানাগেছে, উপজেলার পুর্ব চিলা রহমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এন আর হুমায়ুন কবির গত বছর ১০ জানুয়ারী অবসরে যান। ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর দিনই জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে ওই বিদ্যালয়ের একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিবেন। কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এক বছর ৫ মাস জোর পুর্বক দায়িত্ব পালন করছেন। এতে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রুত তাকে অপসারন করে জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে একজনকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়ার দাবী জানিয়েছেন তারা। এদিকে গত এক বছর ৫ মাস অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতায় সিটে তিনি স্বাক্ষর দিচ্ছেন। এতে আইনী জটিলতায় পরতে যাচ্ছেন শিক্ষকরা এমন দাবী ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের। ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার ১১.৬ ধারায় উল্লেখ আছে চাকুরীরত অবস্থায় ৬০ বছর পূর্ণ হবার পর কোন প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান ও শিক্ষক কর্মচারীকে কোনো অবস্থাতেই পুনঃ নিয়োগ কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এন আর হুমায়ুন কবির ওই নীতিমালা উপেক্ষা করে গায়ের জোড়ে বহাল তবিয়তে আছেন। এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ মিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে এন আর হুমায়ূন কবির তার স্বাক্ষরিত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা আমতলী সোনালী ব্যাংকে জমা দেন। সোনালী ব্যাংক ব্যবস্থাপক নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বেতন ছাড় দিচ্ছেন। এতে জনমনে আরো বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।  এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক এন আর হুমায়ূন কবির বিভিন্ন খাত দেখিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে নয়ছয় করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এ বছর মে মাসের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা ব্যাংকে জমা হয়নি। এতে বিপাকে পরেছে শিক্ষক কর্মচারীরা।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মোতালেব বলেন, গত এক বছর ৫ মাস অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক এন আর হুমায়ুন কবির দায়িত্ব পালন করছেন। এতে শিক্ষক কর্মচারীদের মাঝে  ক্ষোভ ও আইনী জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এন আর হুমায়ুন কবিরকে অপসারন করে জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে একজনকে দায়িত্ব দেয়ার দাবী জানান তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এন আর হুমায়ুন কবির ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারী অবসরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেইনি। তাই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। তিনি আরো বলেন, যতদিন পর্যন্ত দায়িত্ব কাউকে বুঝিয়ে না দেব ততদিন পর্যন্ত আমিই ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ মিয়া বলেন, ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষক অবসরে গিয়েও বহাল তবিয়তে আছেন। এটা দুঃখজনক। এতে শিক্ষক কর্মচারীরা আইনি জটিলতায় পরে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, শিক্ষকদের পক্ষে এই বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
আমতলী সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ কাওসার মোল্লা বলেন, আমি বেতন-ভাতা আটকে রেখেছিলাম কিন্তু ইউএনও বেতন-ভাতার সিটে স্বাক্ষর করায় আমি ছেড়ে দিয়েছি। এখানে আমার দায় নেই।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিয়া উদ্দিন মিলন বলেন, ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে কেউ অবসরে যাওয়ার পর প্রতিষ্ঠান  প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। তেমনি তিনিও পারবেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৯:৪৯ ● ১৫২৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ