আমতলীতে সফল খামারী প্রবাসী আলমগীর

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে সফল খামারী প্রবাসী আলমগীর
শনিবার ● ৫ জুন ২০২১


আমতলীতে সফল খামারী প্রবাসী আলমগীর

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

গাভী পালন করে স্বাবলম্বী কুকুয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের সৌদি প্রবাসী আলমগীর গাজী। ৫টি গাভী দিয়ে গাজী নামের খামার শুরু করে এখন তিনি ২৫ টি গরুর মালিক। শনিবার (৫ জুন) আমতলী উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল কর্তৃক আয়োজিত প্রদর্শনীতে তার খামারের একটি ষাড় প্রদর্শনীর অংশ নেয়। তার ওই ষাড় দেখলে শত শত মানুষ স্টলে ভীর জমিয়েছেন। তার সফলতার জয়গান প্রদর্শনীতে আসা মানুষের মুখে মুখে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মোঃ মমিন গাজীর ছেলে আলমগীর গাজী ধার দেনা করে ২০০২ সালে স্বজনদের মায়া ত্যাগ করে সৌদি আরব যান। দীর্ঘ ১৬ বছর সৌদি আরব কাজ শেষে ২০১৮ সালে দেশে আসেন। ১৬ বছরের তার সঞ্চয় মাত্র সাড়ে নয় লক্ষ টাকা। পরিবার পরিজন ছেড়ে আর প্রবাসে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কর্মহীন আলমগীর সিদ্ধান্তহীন তায় ভুগতে থাকেন । প্রবাসের এই অল্প পুঁজি বসে বসে ব্যয় করলে পরিবার পরিজন নিয়ে আবারো তাকে অর্থনৈতিক সমস্যায় পরতে হবে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের এক কর্মকর্তার পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেন গাভী পালনের। ২০১৮ সালের নয় লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয়ে ঝিনাইদাহ থেকে পাঁচটি গাভী কিনে গাজী ডেইরী ফার্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এরপর তাকে আর পিছে তাকাতে হয়নি। পাঁচটি গাভীর দুধ বিক্রি করেই চলে তার সংসার এবং খামারের ব্যয়। ওই বছরে লাভবান না হলেও তাকে লোকসান দিতে হয়নি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পাঁচটি গাভীই দ্বিতীয় বাচ্চা দেয়। গত দুই বছর ছয় মাসে তার খামারের ১০ টি গরু তিনি সাড়ে সাত লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে আরো ২৫টি গরু।  দুই বছর ছয় মাসের খামারী জীবনে তিনি পেয়েছেন ব্যাপক সফলতা এমন দাবী খামারী আলমগীর গাজীর। বর্তমানে তার খামারে ১১টি দুগ্ধজাত গাভী রয়েছে। ওই ১১ টি গাভী দৈনিক ১০০ লিটার দুধ দেয়। যার বর্তমান বাজার মুল্য ৬ হাজার টাকা। তার খামারে দৈনিক ব্যয় তিন হাজার টাকা। দৈনিক ব্যয় মিটিয়ে গড়ে তিনি প্রতিদিন দুধ বিক্রি থেকে তিন হাজার টাকা সঞ্চয় করেন। এছাড়াও তার খামারে ৪ টি ষাড় এবং ১০টি বাচ্চা গরু রয়েছে। তার ওই চারটি ষাড়ের একটি ষাড় আমতলী উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল কর্তৃক আয়োজিত প্রদর্শনীতে অংশ নেন। প্রদর্শনী মাঠের স্টলে তার ষাড় দেখলে শত শত মানুষ ভীড় জমিয়েছেন। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ষাড়টি তিনি এ বছর কোরবানীতে বিক্রি করবেন বলে জানান খামার মালিক আলমগীর। তিনি ওই ষাড়ের মুল্য হাকেন সাত লক্ষ টাকা। উপজেলা প্রাণি সম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা অভিজিত কুমার মোদকের সঞ্চালনায় প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মজিবুর রহমান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ তামান্না আফরোজ মনি, উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার ও রেড ক্রিসেন্ট অফিসার কেএম মাহতাবুল বারী প্রমুখ। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া আলমগীর গাজীর ষাড় এবং হেলাল দফাদারের গাভী প্রথম পুরুষ্কার পেয়েছেন। ১৫ টি ক্যাটাগরিতে খামারীদেে পুরুস্কার দেয়া হয়।
গাজী ডেইরি ফার্মের মালিক আলমগীর গাজী বলেন, ১৬ বছর সৌদি আরব থেকে অর্জিত নয় লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকায় পাঁচটি গাভী কিনে খামার করেছি। ইতিমধ্যে সাড়ে সাত লক্ষ টাকায় ১০টি গরু বিক্রি করেছি। বর্তমানে আমার খামারে ২৫ টি গরু রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মুল্য অন্তত ২৫ লক্ষ টাকা। তিনি আরো বলেন, টাকা ব্যয় করে বিদেশ যেতে হয়না। একটু পরিশ্রম করলে নিজের দেশের বেশ আয়ের ক্ষেত্র রয়েছে। গরুর খামার করে আমি স্বাবলম্বি।
আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা অভিজিত কুমার মোদক বলেন, মানুষকে প্রাণী সম্পদ পালনে উদ্বুদ্ধ করতে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ১৫ ক্যাটাগরিতে পুরুষ্কার দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উপজেলায় ৩০ টি বড় ডেইরি, ৪’শ গরু রিষ্ট-পুষ্টকরণ খামার এবং ৬ হাজার দুগ্ধ খামার রয়েছে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৩০:১০ ● ৩৯৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ