আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী উপজেলা আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নে দুস্থ নারীদের ভিজিডির নামের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদারের দুস্থ তালিকায় তার ভাতিজি, সাবেক ইউপি সদস্যের স্ত্রী, ইউপি সদস্য প্রার্থীর স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজন, অন্য জেলার বাসিন্দা ও ধনীদের নাম অর্ন্তভুক্ত করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে দুস্থ তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ এনে ইউপি সদস্য মোঃ নাশির উদ্দিন মোল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামানের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
জানাগেছে, উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের দুস্থ নারীদের ভিজিডি কর্মসূচীর আওতায় আনার জন্য গত জানুয়ারী মাসে অনলাইনে আবেদন জমা নেন। ওই আবেদন যাছাই বাছাই শেষে উপজেলায় হত দরিদ্র ২ হাজার ১’শ ৭০ জন দুস্থ নারীর নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। দুস্থ নারীরা জনপ্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন। এর মেয়াদ কাল দুই বছর। এর মধ্যে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের ৩০৪ জনের নাম ভিজিডির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়েছে।
ইউপি সদস্য নাশির উদ্দিন মোল্লা অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদার অনলাইনে আবেদন যাচাই বাছাই কালে পরিষদকে অবহিত না করে নিজের ইচ্ছামত তার ভাইয়ের মেয়ে মোসাঃ মাহিনুর, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ মনজু রহমানের স্ত্রী মোসাঃ মরিয়ম, ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী সবুজ খাঁনের স্ত্রী পলি বেগম, ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য প্রার্থী ছলেমান মৃধার স্ত্রী মোসাম্মদ বেগমসহ, নিকটাস্থীয়, আর্থিকভাবে সচ্ছল, অন্য উপজেলায় বসবাস করে এমন পরিবারের নারীদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন। দীর্ঘ চার মাস ওই তালিকা চেয়ারম্যান জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করেনি। গত ৫ মে ওই তালিকা অনুসারে কার্ড বিতরন করেন চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। ওই সময় ইউপি সদস্য নাশির উদ্দিন মোল্লা অনিয়ম খুঁজে পায়। পরে তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ইউপি সদস্য নাশির উদ্দিন মোল্লা। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে চাহিদামত টাকা দিতে না পারায় চেয়ারম্যান অনেক অসহায় নারীকে তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেনি।
পুর্ব সোনাখালী গ্রামের বিধবা রেশমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যানের নাম করে সবুজ খান আমাকে ভিজিডির কার্ড দেয়ার কথা বলে সারে চার হাজার টাকা নিয়েছে কিন্তু নামও দেয়নি। একই গ্রামের বিউটি বেগম বলেন, সবুজ খান ভিজিডির নাম অর্ন্তভুক্ত করতে আমার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু নাম দেয়নি। এ বিষয়ে ৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য প্রার্থী সবুজ খান টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার এবং তার স্ত্রীর নাম ভিজিডির তালিকায় থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, রাজনৈতিক ভাবে হয়রানী করতে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য প্রার্থী মোঃ ছলেমান মৃধা মুঠোফোনে স্ত্রী মোসাম্মদ বেগমের নাম দুস্থদের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের ভিজিডি কর্মসূচীর উপকারভোগী দুস্থ নারীদের তালিকা ঘেটে দেখাগেছে, ওই তালিকায় ৩নং ওয়ার্ডের ধনাট্য ব্যাক্তি দুলাল মিয়ার স্ত্রী মুকুল আক্তার, ৫ নং ওয়ার্ডের হাইস্কুল শিক্ষক মোঃ আবু তাহেরের স্ত্রী আকলিমা বেগম, চেয়ারম্যানের স্বজন ধনাট্য আমির হোসেনের স্ত্রী ছাবিনা, চেয়ারম্যানের ভাইয়ের মেয়ে ইলিয়াস মোল্লার স্ত্রী মাহিনুর বেগম, চেয়ারম্যানের ভাইয়ের জামাই কুকুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ মালেক গাজীর স্ত্রী রাবেয়া, ইউপি সদস্য প্রার্থী মোঃ সবুজ খানের স্ত্রী পলি বেগম, ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ মনজু রহমানের স্ত্রী মরিয়ম, ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী সলেমান মৃধার স্ত্রী মোসাম্মদ বেগম, গাজীপুর বন্দরের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনেয়ারা, ৭নং ওয়ার্ডে বাউফল উপজেলার বাসিন্দা শিপন হাওলাদারের স্ত্রী নন্দিতা রানী, ধনাট্য আলাউদ্দিনের স্ত্রী জেসমিন, ৮ নং ওয়ার্ডের ধনাট্য শাহজাহান সিকদারের স্ত্রী শিরিন আক্তার, গলাচিপা উপজেলার গোলখালী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী মাজেদা বেগম এবং ৯ নং ওয়ার্ডের গাজীপুর বন্দরের ওয়ালটন শোরুমের মালিক মোঃ প্রিন্স মাহমুদের স্ত্রী আখিনুর আক্তার ও ওই বন্দরের ব্যবসায়ী মোঃ নাশির উদ্দিনের স্ত্রী মুন্নীর নাম চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত রয়েছে।
৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নাশির উদ্দিন মোল্লা বলেন, চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদার নিজের ইচ্ছামত তার ভাতিজি এবং আর্থিক সুবিধা নিয়ে ইউপি সদস্যের স্ত্রী, ইউপি সদস্য প্রার্থীর স্ত্রী, আত্মীয় স্বজন, অন্য উপজেলায় বসবাসরত এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল এমন ব্যাক্তিদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন। তার অনিয়মের অভিযোগ এনে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেছি। তদন্তপূর্বক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ হাওলাদার অনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে যাদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন তাদের নাম বাদ দিয়ে হতদরিদ্রদের নাম তালিকাভুক্ত করার দাবী জানাই।
আঠারোগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ হাওলাদার সকল অভিযোগ মিথ্যা এবং আর্থিক সুবিধা নিয়ে তালিকা অর্ন্তভুক্তির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অনলাইনের আবেদন যাচাই বাছাই করেই তালিকা করা হয়েছে। এই তালিকায় যাদের নাম এসেছে সবাই ভিজিডি পাওয়ার উপযোগী।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জান বলেন, অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর