পটুয়াখালী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ঘূর্ণিঝড় ইয়াশের সাথে পূর্নিমার জোয়ে’র প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চ জোয়ারে সংস্কারহীনসহ নতুন করে ভাংগা বেরিবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে পটুয়াখালীতে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। মঙ্গলবার থেকে সকাল-বিকাল দৈনিক দু’দফা জোয়ারে এসব গ্রাম এখনো হচ্ছে প্লাবিত। এতে পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে ২৩২টি গ্রামের প্রায় ৫লক্ষ মানুষ। ৭ হাজার ৮৫টি ঘের ও পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা। বানভাসি এসব মানুষের দাবী, ত্রান নয়, চাই টেকসই বেরিবাঁধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উচ্চ জোয়ারের চাপে কলাপাড়ার সদ্য র্নির্মিত নিজামপুর বাঁধের ৬টি পয়েন্টে ৬শ’ মিটার, চম্পাপুরের দেবপুরে আড়াই কিলোমিটার, লালুয়ার চান্দুপাড়ায় ৫২০মিটার, রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজের নয়ারচর ও চরবেস্টিন এবং চালিতাবুনিয়া, ছোট বাইশদিয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ নতুন করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ নতুন এসব বাঁধসহ সংস্কারহীন বাঁধ দিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে।
ফলে এসব গ্রামের মানুষ রয়েছে পানিবন্ধী অবস্থায়। দু’দফা জোয়ারের এমন তান্ডবে অনেক ঘরেই এখন জ্বলেনা উনুন। ভরসা ত্রানের। অন্যথায় দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। অধিকাংশ মানুষ ঠাই নিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে। আবার অনেকের আশ্রয় মিলেছে রাস্তার পাশে উচু জায়গায়। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানিসহ গো-খাদ্যের সংকট। শংকা দেখা দিয়েছে পানি বাহিত নানা রোগের। আধিকাংশ গ্রামের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ভেসে গেছে সেতু, সাঁকো। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে অনেক কালভার্ট।
সোহেল মিয়া বলেন, জোয়ার কমে গেলেও পানিতে তলিয়ে থাকা ৬০ শতাংশ বসতঘর হয়ে পড়বে বসবাসের অনুপযোগী।
লালুয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জামান তারা বলেন, লালুয়ার সংস্কারহীন ৮ কিলোমিটার বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয় ১০টি গ্রাম। চান্দুপাড়া অংশের বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে অনেক গ্রাম।
লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস আক্ষেপ করে বলেন, দফায় দফায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভাঙ্গন পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। দ্রুততম সময়ে স্থায়ী বাঁধ র্নিমানের নির্দেশনা প্রদান করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। সবাই কথা দিয়েছেন স্থায়ী বাঁধ র্নিমানের। কিন্তু স্থায়ী বাঁধ দুরের কথা, বিগত ৫ বছর ধরে হচ্ছেনা কোন জরুরী সংস্কার কাজ। বানভাসি মানুষকে দেয়া কথা কেউ রাখেনি।
নিজামপুরের আশ্রাব মৃধা, নুর জামাল, হানিফ চৌকিদার বলেন, ২০০৭ সালে সুধীরপুরের ১কিলোমিটার বাঁধে বালু-পাথর-সিমেন্টের মিশ্রিত ব্লক দেয়া হয়। যা এখনো অক্ষত রয়েছে। নদী পাড়ে চর পড়তে শুরু করেছে। আথচ নিজামপুর অংশে চার দফা মাটির কাজ করা হলেও তা বর্ষা মৌসুমেই ভেঙ্গে যায়।
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাছের ঘেরসহ পুকুর মালিকরা। বেরিবাঁধের বাহিরে ও ভেতরের ৭ হাজার ৮৫টি পুকুর ও ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। রাঙ্গাবালীর চরলতা গ্রামের মাছের ঘের মালিক দবির গাজী জানান, চলতি বছর ঋন নিয়ে মাছের ঘের করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৬ লাখ টাকার মাছ চাষ করেছেন। তার ঘেরের সব মাছ ভেসে গেছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, কিছু পুকর ও ঘের মালিক জাল দিয়ে মাছ রক্ষা করতে পারলেও অধিকাংশ মৎস্য চাষীরা কিছুই রক্ষা করতে পারেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপড়া সার্কেলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহেরাজ বলেন, ঝুঁকিপূর্ন বাঁধে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত সংস্কারের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
জেআর/এমআর