আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ ইসফাক আহম্মেদ ত্বোহা ও শাহাবুদ্দিন শিহাবের অত্যাচারে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ। সকল অপরাধের মদদ দিচ্ছে এই দুই কিশোর গ্যাং লিডার। আবার এদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়েও রয়েছে বিরোধ। প্রায়ই এই দুই কিশোর গ্যাং লিডারের নেতৃত্বে পৌর শহরের সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক নেতারা মারধরের স্বীকার হচ্ছে। এদের হাতে জিম্মি আমতলী পৌরবাসী। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আইন শৃংখলার চরম অবনতি হতে পারে বলে অভিমত স্থানীয়দের। দ্রুত এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
জানাগেছে, আমতলী পৌর শহরের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের আর্শ্বিবাদপুষ্ট হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ ইসফাক আহম্মেদ ত্বোহা ও শাহাবুদ্দিন শিহাব। এই দুই কিশোর গ্যাং লিডারের হাতে জিম্মি পুরো আমতলী পৌরসভা। কিশোর গ্যাং লিডার ত্বোহা ও শিহাব তাদের অপরাধ বিস্তারে আমতলী পৌর শহরকে সাতটি গ্রুপে বিভক্ত করেছে। তাদের নিয়ন্ত্রনে চলছে মাদক সেবন, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মেয়েদের উত্যক্ত করা, বেপরোয়া মোটর বাইক চালানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রাজনৈতিক ও সম্মানি ব্যাক্তিদের সম্মানহানীসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড এমন অভিযোগ আমতলীর সচেতন নাগরিকদের। সাতটি গ্রুপের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বৈঠাকাটা এলাকা নিয়ন্ত্রন করছে রাহাত মৃধাসহ ৫-৬ জন। এরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক এলাকায় ভ্রমনে আসা দর্শনার্থীদের লাঞ্চিত করে অর্থ আদায় ও ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধে জড়িত। একে স্কুল থেকে ফায়ার সার্ভিস, তুলাতলা এবং কালিবাড়ী এলাকা নিয়ন্ত্রন করছেন শাহাবুদ্দিন শিহাব, নাঈম, ইমরান মোল্লা, নোমান মোল্লা, মিরাজুল ইসলাম মিরাজ ও মেহেদীসহ ১০-১৫ জন। এই কিশোর গ্যাংরা একে স্কুলে চৌরাস্তা থেকে তুলাতলা পর্যন্ত মহাসড়কে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক সেবক, স্কুলের মেয়ের উত্যাক্ত করাসহ নানাবিধ অপরাধে জড়িত। একে স্কুল থেকে বাঁধঘাট চৌরাস্তা ও বটতলা এলাকা নিয়ন্ত্রন করে কিশোর গ্যাং নাদিম, জাহিদুল ইসলাম ও জিনানসহ ১০-১২ জন এমন অভিযোগ স্থানীয় সিদ্দিকুর রহমান মুন্সির। হাসপাতাল থেকে ছুরিকাটা এবং ফেরিঘাট এলাকায় নিয়ন্ত্রন করছে তানজিল গাজীসহ ৫-৬ জন। সন্ধ্যা নেমে আসার সাথে সাথেই এদের কর্মকান্ড শুরু হয়। ওই সড়কে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও চুরির সাথে জড়িত এরা। কিশোর গ্যাং তানজিলের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ফেরিঘাট থেকে লঞ্চঘাট এলাকার নিয়ন্ত্রন করছে অভিসহ ৪-৫ জন। এই গ্রুপ সঙ্গবদ্ধ হয়ে প্রায়ই মারধরে লিপ্ত হয়। সাকিব প্লাজা থেকে একে স্কুল সড়ক এলাকা নিয়ন্ত্রন করছে বেল্লাল হোসেনসহ ৪-৫ জন। এবিএম চত্ত্বর,পুরাতন বাজার ও পুরাতন লঞ্চঘাট এলাকা নিয়ন্ত্রন করছে মেহেদী, জাকার, তৌকির, হাসান, রাকিবসহ ১০-১২ জন। এমইউ স্কুল, বিআরডিবি অফিস এবং মিঠাবাজার এলাকার নিয়ন্ত্রন করছে রবিউল ও রাকিবসহ ৫-৭ জন। এম ইউ স্কুল মোড়ে মেয়েদের উত্যক্ত করা ও উপজেলা পরিষদের অভ্যান্তরে মাদক সেবনের মিলন মেলা বসায় তারা। পৌর শহরের সাতটি কিশোর গ্যাংদের একছত্ত নিয়ন্ত্রন করছে লিডার মোঃ ইসফাক আহম্মেদ তোহা ও শাহাবুদ্দিন শিহার। অভিযোগ রয়েছে ওই দুই কিশোর গ্যাং লিডারকে নিয়ন্ত্রন করছে প্রভাবশালী একটি মহল । গত এক মাসে কিশোর গ্যাং লিডাররা বেশ কয়েকটি মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল রাতে আমতলী উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁনকে কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ ইসফাক আহম্মেদ তোহার নেতৃত্বে ১০-১২ জন কিশোর গ্যাং হাতুড়ি পেটা করে ৮৬ হাজার টাকা. দামী মোবাইন ও স্বর্নের চেইন ছিনতাই করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও কিশোর গ্যাং লিডার তোহা ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন অভিযোগ সাবেক কাউন্সিলর মোয়াজ্জেম খাঁনের। গত ১৮ মে আমতলী সরকারী কলেজের ছাত্র রাহাত মৃধা, তার ভাই ফয়সাল মৃধা, বেলাল হোসেন বাপ্পি, তার মামা সেলিম ও কালুকে ডেকে নিয়ে কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ শাহাবুদ্দিন শিহাব, ইমরান মোল্লা, নোমান মোল্লা, মিরাজুল ইসলাম মিরাজ ও মেহেদীসহ ১০-১৫ জনে ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করেছে। গত রবিবার বটতলার কিশোর গ্যাং নাদিম, জাহিদুল ইসলাম ও জিনানসহ ১০-১২ জন স্থানীয় সিদ্দিকুর রহমান মুন্সি তার স্ত্রী হোসনেয়ারা ও ছেলে আল খালিদ রিসানকে মারধর করেছে। কিশোর গ্যাংরা অপকর্ম করে বেড়ালেও রাজনৈকিক নেতাকের আশির্^বাদে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন বলেন, কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ ইসফাক আহম্মেদ ত্বোহা, শাহাবুদ্দিন শিহাব ও তার দলবলের অত্যাচার নির্যাতনে পৌর শহরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। কিশোর গ্যাংরা মাদক সেবন, চুরি, ছিনতাই, মারধরসহ নানা অপরাধে জড়িত। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তারা।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, কিশোর গ্যাং লিডার মোঃ ইসফাক আহম্মেদ ত্বোহা ও শাহাবুদ্দিন শিহাবসহ বেশ কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। কিশোর গ্যাংদের গ্রেফতার করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর