কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥
বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব ও সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার দাবি উঠেছে। পরপর দু’টি ঈদে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় পর্যটকদের গমনাগমনে বিধিনিষেধ আরোপ করায় পর্যটন নির্ভর কুয়াকাটার বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় আর্থিক ক্ষতির মূখে পর্যটন শিল্প। কোন প্রকার আয় না থাকলেও কেবলমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ প্রতি মাসে শত কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে এখানকার ব্যবসায়ীদের।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হোটেল মোটেল, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস থেকে শুরু করে খাবার হোটেল, রেস্তোরা, চা দোকান, ফুচকা বিক্রেতা, ঝিনুকের দোকান, শুটকি পল্লী, ফ্রাই পল্লীসহ পর্যটন নির্ভর সকল দোকানে তালা ঝুলছে। সৈকতজুড়ে ফটোগ্রাফারদের দেখা নেই। ট্যুরিস্ট বোট, স্পীড বোট, ওয়াটার বাইকগুলো পড়ে আছে কুয়াকাটা সৈকতের বালিয়াড়িতে। ছাতা-বেঞ্চগুলো যেখানে সেখানে স্তুপ করে রাখা হয়েছে।
কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ী জানান, প্রতি বছর ঈদ পরবর্তী সময় লক্ষ পর্যটকের আগমন ঘটে। আমাদের ব্যস্ততাও যায় বেড়ে। বেচা বিক্রির ধুম পড়ে। দম ফালানোর ফুুরত থাকেনা। সৈকত জুড়ে পর্যটকদের হৈ হুল্লোরে মূখর থাকে। এবারে পর্যটকের আগমনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গোটা সৈকত রয়েছে পর্যটক শূণ্য। স্থানীয় কিছু পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও ট্যুরিস্ট পুলিশ ও স্থানীয় পুলিশের বাঁধার মুখে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মজিবর রহমান বলেন, লকডাউনের কারনে হোটেল-মোটেল গুলো বন্ধ থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে এ পেশার সাথে যুক্ত ৫ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা। বিকল্প কর্মসংস্থানও খুজে পাচ্ছেনা তারা। গত ১লা এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সকল ব্যবসা বাণিজ্য। উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম অর্থ সংকটে ভূগছে পর্যটন নির্ভর সকল পেশাজীবীরা। প্রতিবছর ঈদের সময় লাখ পর্যটকের পদচারনায় মূখর থাকে কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানগুলো, কিন্তু পরপর দু’টি ঈদের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। এদিকে, ২৪ মে থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা-কুয়াকাটাগামী পরিবহন হিমি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, পর্যটন কেন্দ্র খুলে না দেওয়ায় এই রুটের বাসগুলো লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেনা। দ্রুত কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ারও দাবি করেন তিনি।
কুয়াকাটার আভিজাত আবাসিক হোটেল খাঁন প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল খাঁন বলেন, প্রতিবার ঈদে আমাদের হোটেলটি শতভাগ রিজার্ভ থাকে সেখানে গত দুই মাস ধরে হোটেলটি পুরো বন্ধ রয়েছে। ঈদ মৌসুমে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছি। অন্যদিকে সরকার ঘোষিত কোন প্রনোদনা দেওয়া হয়নি এ খাতে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, প্রথম লকডাইনের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় দফার করোনা মোকাবেলায় আবার ক্ষতির মুখে গোটা পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা। প্রতিবার ঈদের মৌসুমে লাভের মুখে থাকলেও এবারে যে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি তা কবে কাটিয়ে উঠতে পারবো জানিনা। এবারে শুধু মাত্র ঈদ মৌসুমেই শত কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু পরিবহন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটনের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া সময়ের দাবি। অন্যথায় পর্যটন খাতে দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এনইউবি/এমআর