কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
মোসাম্মৎ ফুলনেছা বেগম মারা গেছেন আরও দুই বছর আগে। তার স্বামী আব্দুর রাজ্জাক নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করলেন। অথচ ফুলনেছা বেগম মারা যাওয়ার পরও যথারীতি খাদবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের ৩০ কেজি করে চাল উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। গেল মাসেও (এপ্রিল) এ চাল উত্তোলন করা হয়েছে। মৃত ফুলনেছা ছিলেন আব্দুর রাজ্জাকের তৃতীয় স্ত্রী। বলীপাড়া গ্রামের এই রাজ্জাক বানাতিবাজারের ক্ষুদে দোকানি। ভাগ্যবান মানুষটি। তার অপর দুই স্ত্রী মোসাম্মৎ রাশিদা এবং জাহানারা বেগমের নামের বরাদ্দ রয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল। তিন স্ত্রীর নামে তিনটি কার্ড রয়েছে। কার্ড তিনটির সিরিয়াল ৪০,৪১,৪২। বালিয়াতলী ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা যাচাইবাছাই করতে গিয়ে এমন তথ্য বেরিয়ে আসল। গত ২৫ এপ্রিল সাগরকন্যাসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০টাকা কেজি দরের ফেয়ার প্রাইস কার্ডের তালিকা যাচাইবাছাইয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক উপজেলার ১২ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। যার প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে মাঠ পযর্যায়ের অনিয়ম আর দুর্নীতির সাতকাহন বের হয়। মিঠাগঞ্জ ও চাকামইয়া ইউনিয়নের বহু দরিদ্র মানুষও এমন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। কলাপাড়া খাদ্য অফিসের কাছে ধরা পড়ে এমন অনিয়ম। এছাড়া বিত্তবান শত শত কার্ডের প্রাথমিক হদিস মেলে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের এ তালিকায় বিত্তবান, একই পরিবারের স্ত্রী-স্বামী, বাবা-ছেলে, মা-ছেলে, ভাই-ভাই এসব নাম রয়েছে অসংখ্য। বাড়িতে পাকা ভবন, তার নামেও ১০ টাকা কেজি দরের মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাওয়ার কার্ড; এমনসব অনিয়মে ভরা। এলাকায় থাকেন না এমন ব্যক্তির নামেও কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। সরকারের নীতিমালা উপেক্ষা করে জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দসই সমর্থক ভোটারসহ আত্মীয়-স্বজনকে এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন। তালিকাপ্রাপ্তরা বছরের মার্চ-এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর-নবেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাস এই খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন। কলাপাড়ায় এই সুবিধার আওতাধারী রয়েছেন ২০ হাজার ১৫৩ পরিবার। এই পাঁচ মাস গ্রামীণ জনপদে দরিদ্র মানুষ বেকার হয়ে থাকেন। তাই বিভিন্ন সুবিধার মতো এই খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। অথচ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, নিজেরা দান-অনুদান দিতে পারেন এমন পরিবারের নামও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে এই তালিকায়। বঞ্চিত দরিদ্র, দুস্থ মানুষের দাবি তালিকাগুলো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে টানিয়ে দিলে বের হবে এই তালিকার দুর্নীতির আরও কাহিনী।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তালিকা তৈরিতে স্বচ্ছতা ফেরাতে এবং সরকারের নীতিমালা যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার লক্ষ্যে এই চিঠি দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে রিপোর্ট প্রকাশ হলেও যাচাই-বাছাই করে ৩৬৪০ জনের নাম বদল করা হয়েছে। কিন্তু সত্যিকারের দরিদ্র মানুষকে শতভাগ অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। রয়ে গেছে বহু বিত্তবান। আর বাদ পড়েছেন প্রকৃত দরিদ্র শত শত মানুষ।
এমইউএম/এমআর