নাজিরপুর(পিরোজপুর)সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পিরোজপুরের নাজিরপুরে লকডাউনের মধ্যে কিস্তি আদায় করছেন বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন ঋণ গ্রহীতারা। ভ্যান চালক থেকে শুরু করে দিন মজুর এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের করোনার মধ্যে সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ থাকায় ঋণ গ্রহীতারা পড়েছেন বিপাকে।
কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। কিন্তু তাদের ব্যবসা এখন মন্দা। কিস্তিতে ঋন নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ইজিবাইক, ভ্যান, মটরসাইকেল, গ্রামবাংলাসহ বিভিন্ন যানবাহন কিনেছেন তারা সীমিত আয় দিয়ে কিস্তি পরিশোধ করে লকডাউনের মধ্যে। অনেকের ঘরে খাবার না থাকলেও কিস্তি দিতে বাধ্য ছিল। এ অবস্থায় কিস্তি আদায় বন্ধের দাবী জানিয়েছেন ঋণ গ্রহকরা। করোনার সংক্রমন মোকাবিলায় দোকান পাট খুললেও সব কিছুই বন্ধ রেখেছে সরকার। মানুষের চলাচল যাতায়াত সীমিত করা হয়েছে। ফলে কর্ম হারিয়েছে এই সমস্ত নি¤œ আয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে জোড় পূর্বক কিস্তি আদায় করছেন নাজিরপুরের সকল এনজিও কর্মীরা।
নাজিরপুরের ৩০ টির মত এনজিও রয়েছে এর মধ্যে ব্র্যাক, গ্রামীন ব্যাংক, রিক, আশা, উদ্দীপন, জাগরনী, মুসলিম এইড, ব্যুরো বাংলাদেশ, কোডেক, ডাক দিয়ে যাই সহ সকল এনজিও কর্মীরা গ্রাহকের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের মধ্যজয়পুর গ্রামের বাবু লাল হালদার জানান, আমি উদ্দীপন এনজিও থেকে ঋন নিয়েছি আমি একজন কাঠ মিস্ত্রী এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এড়াতে দেশ ব্যাপী সরকার কর্তৃক কঠোর লকডাউন ঘোষনা করায় আমার সকল কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এতে আমার সংসারই চালাতে পারছি না। উদ্দীপন এনজিও জোড় পূর্বক আমার উপর চাপ সৃষ্টি করছে কিস্তি দিতেই হবে। কিস্তি না দিলে আমাকে অফিসে ধরে নিয়ে পিঠ মোড়া দিয়ে বেধে কিস্তি আদায় করবে বলে ওই এনজিও কর্মী আমাকে হুমকি দেয়।
নাজিরপুর সদর বাজারের চায়ের দোকানদার কবির জানান, দেখেন ভাই আমার ৪টা এনজিও থেকে ঋন নেওয়া আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় করোনার কারনে লকডাউন হওয়া অবদি আজ পর্যন্ত দোকানই খুলতে পারি না। কিন্তু ওই ৪টা এনজিও কর্মীরা আমাকে কিস্তির জন্য চাপ দেয়। নাজিরপুর সদর বাজার ফটোকপি ব্যবসায়ী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমি মুসলিম এইড থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছিলাম। আমার হয়তো ৪/৫ টি কিস্তি বাকী থাকতে পারে লকডাউন হওয়ার পরে দোকানই খুলতে পারি না। তারপরেও কিস্তির জন্য এনজিও কর্মীরা আমাকে চাপ দিচ্ছে। ২ দিন আমার বাড়িতে এসছেন কিস্তির জন্য। আমার খারাপ পরিস্থিতির কথা জানালেও তারা বাজে আচরণ করেন। পরে স্থানীয়রা এলে তারা চলে যান। লকডাউন দীর্ঘ হলে কিভাবে কিস্তি দেব আমি? এদের কথা শুনতে আর ভালো লাগে না।
এ বিষয়ে নাজিরপুরের বুরো বাংলাদেশ ও ব্র্যক এনজিও ম্যানেজরকে ফোন দিলে তারা জানান, আমাদের কোন কর্মী গ্রাহকের বাড়ীতে কিস্তি আদায়ের জন্য যায় না। কিস্তি আদায় আমরা শিথিল করেছি। এ বিষয়ে পরিপত্র দিয়েছি। পরিপত্রে বলা হয়েছে ঋণ গ্রহীতার বাড়িতে গিয়ে কিস্তি আদায় করা যাবে না। ঋণ গ্রহীতা নিজ ইচ্ছায় কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে চাইলে মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে নেওয়া হয়। তারা আরো বলেন যদি আমাদের কোন কর্মী কিস্তি আদায়ে বাড়ীতে গিয়ে থাকেন তা হলে আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। খোঁজ নিয়ে আমরা তাদের নিষেধ করব।
এদিকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাচলের সরকারী নির্দেশনা থাকলেও এনজিও কর্মীরা ঋন গ্রহীতার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তি নিচ্ছেন। কোন কোন এনজিও কর্মী এক বাড়িতে টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে সবার কাছ থেকে কিস্তি আদায় করছেন। এসময় ঋণ গ্রহীতা ও এনজিও কর্মীর মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। ছিল না সামাজিক দুরত্বও। নাম প্রকাশ না করে কয়েক জন ঋন গ্রহীতা জানান এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়। কিন্তু করোনার কারনে সকল কাজ কর্ম বন্ধ থাকায় কিস্তি দিতে পারছি না। সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধার-কর্য করে সংসার চালাচ্ছি। কিস্তির টাকা দিব কিভাবে? কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা উচিৎ।
এ বিষয় নাজিরপুর সমবায় অফিসের মিরাজুল ইসলাম (সহকারি পরিদর্শক) জানান, সমিতি থেকে কিস্তি আদায় করোনার কারনে বন্ধ রয়েছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে কোন সমিতি কিস্তি আদায় করছেন কিনা এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। এ ব্যাপারে নাজিরপু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান জানান, লকডাউনের মধ্যে কিস্তি আদায় বন্ধের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আমরা পাইনি। প্রথম লকডাউনের সময় কিস্তি আদায় বন্ধের নির্দেশনা পেয়েছিলাম। তবে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালাতে পারবেন। মানবিক কারনে এ সময় কিস্তি আদায় বন্ধ করতে পারেন এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো।
এএএইচ/এমআর