সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক হাসপাতাল। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ না করা হলে ওসব অন্য হাসপাতালে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিঝুঁকির তালিকায় থাকা হাসপাতালগুলোকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অগ্নিঝুঁকি হ্রাসে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওসব পরামর্শ আমলে নেয়া হয়নি। ফলে ইতোমধ্যে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ঘটে গেছে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ফায়ার সার্ভিস বিগত ২০১৭ সালের প্রথমদিকে ঢাকাকে ৪টি অঞ্চলে ভাগ করে অগ্নিঝুঁকি নিরূপণে সব ধরনের স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয়। তার অংশ হিসেবে ঢাকার ৪৩৩টি হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়। মাটির নিচের জলাধারের ধারণমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, স্মোক/হিট ডিটেক্টর, মেঝের আয়তন, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, লিফট ইত্যাদি বিষয় খতিয়ে দেখে হাসপাতালগুলোর ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়। ফায়ার সার্ভিস পরিদর্শন শেষে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে ২৪৮টি হাসপাতালকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৭৪টিকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিসের জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, আগারগাঁও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল।
তাছাড়া তালিকায় সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে জাতীয় বব্যাধি হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী অগ্নিঝুঁকিতে থাকা বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছেশমরিতা হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার-২, ক্রিসেন্ট গ্যাস্ট্রোলিভার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, ধানমন্ডি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতাল, ধানমন্ডি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিএসওএইচ হাসপাতাল, প্যানোরমা হসপিটাল লিমিটেড, ধানমন্ডি মেডি এইড জেনারেল হাসপাতাল লি. ও মেরিস্টোপ বাংলাদেশ। তখন সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের প থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালই ফায়ার সার্ভিসের সতর্কবার্তা আমলে নেয়নি। এমনকি তাদেও সুপারিশও বাস্তবায়ন করেনি।
সূত্র আরো জানায়, অগ্নিনিরাপত্তায় সবচেয়ে করুণ অবস্থায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের। ওই হাসপাতালটির পুরনো ভবনের নিচতলায় একটি মাত্র ডিস্টিংগুইশার রয়েছে। অন্য কোনো তলায় ডিস্টিংগুইশার নেই। আর সেখানে ফায়ার অ্যালার্ম বা হিট ডিটেক্টরও চোখে পড়ে না। একই অবস্থা হাসপাতালটির বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটেও। সেখানেও নিচতলায় একটি মাত্র ডিস্টিংগুইশার রয়েছে। তাছাড়া ওপরের কোনো তলাতেই ডিস্টিংগুইশার নেই। ফায়ার অ্যালার্ম বা হিট ডিটেক্টরও দেখা যায়নি কোনো তলায়। নবনির্মিত ঢামেক-২ ভবনেও ভূমিকম্প বা অগ্নিকা- মোকাবেলায় তেমন কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ে না।
এদিকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো অগ্নিঝুঁকিতে থাকা প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ জানান, জনস্বার্থে ফায়ার সার্ভিস ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে ঝুঁকি নিরূপণ করেছে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়। হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করার জন্য লিখিতভাবে অন্তত তিন দফা মন্ত্রণালয়েও সুপারিশ করা হয়।
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। আর এ ঘটনাকে সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি দেশের হাসপাতালগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুনের ঘটনাটি আমাদের জন্য একটি শিা। আমাদের বেশকিছু হাসপাতাল আছে পুরনো, এগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। আমরা সব হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখব। তাছাড়া হাসপাতালগুলোর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও তার ঠিক আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
এফএন/কেএস