আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
সরকারীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ না থাকায় আমতলী ও তালতলীর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্থায়ী মিনার নির্মাণ করে ভাষা দিবস পালনের উদ্যোগ নিচ্ছে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছর পার হলেও প্রতিষ্ঠানগুলোয় শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। তারা কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদ দিবস পালনের উদ্যোগ নিচ্ছে। অযতœ অবহেলায় রয়েছে নির্মিত শহীদ মিনারগুলো।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দু’উপজেলায় ৩২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে আমতলী ১৫৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ টি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২১ টি দাখিল মাদ্রাসা ও ১ টি আলিম মাদ্রাসা, ৪ ফাজিল মাদ্রাসা, ৫টি কলেজ এবং তালতলীতে ৭৭ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫ নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২ টি দাখিল মাদ্রাসা ও ৩ টি কলেজে রয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার নেই। শিক্ষার্থীরা কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদ দিবস পালন করে। এছাড়া যেগুলো রয়েছে সেগুলো অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। এগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেই। প্রতি বছর ভাষা শহীদ দিবসের দু’এক দিন পূর্বে আমতলী কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারসহ অন্যান্য শহীদ মিনার ঘষা মাজা করে থাকে। দিবস শেষ হয়ে গেলে কেউ ওই মিনারের খবর রাখে না। সরকারীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেই। অস্থায়ী মিনার নির্মাণ করে শহীদ দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
রবিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আমতলী সরকারী একে পাইলট হাই স্কুল, এমইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বন্দর হোসাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, তারিকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, গাজীপুর বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি,পচাঁকোড়ালিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কড়াইবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।
চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের জিয়া উদ্দিন জুয়েল জানান, ভাষা দিবসটি সুন্দরভাবে পালনের জন্য সরকারীভাবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করার দাবী জানাই।
আমতলী সরকারী একে পাইলট হাই স্কুলের শিক্ষার্থী হামিমা জামান মাশনু জানান, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন জানাতে পারছি না। কলেজের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিতে হয়। আমরা সরকারের কাছে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী জানাই।
তারিকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান সিয়াম, তানজিলা, সাদনান সাকিব ও ইমরান জানান, শহীদ মিনার না থাকায় কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী মিনার নির্মাণ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে হয়।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, যে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।
আমতলী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আকমল হোসেন খান বলেন, সরকারী ভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেই। তবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন স্থানীয় পর্যায় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, ভাষা শহীদদের পরিচয় জানতে ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা আবশ্যক। জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে শহীদ মিনার নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হবে।