চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
চরফ্যাশনে ভারত থেকে জমি বিক্রির টাকা নিতে এসে প্রাণ হারাণ তপন ও দুলাল নামের দুই সহদর। জমির ক্রেতারা পরিকল্পিত ভাবে দু’ভাইকে হত্যার পর মস্তক বিহীন দেহ আগুনে পুড়িয়ে আলামত ধংস করে দেয়। ১৫দিন আগে চরফ্যাশনের আসলামপুর থেকে পুলিশ এই সহদরের পোড়া দেহ উদ্ধার করলেও নাম পরিচয় না পেয়ে রহস্যের মধ্যে ছিল। কিন্তু তদন্তের অল্পদিনের মধ্যেই বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের তথ্য। টয়লেটের সেফটি ট্যাংক থেকে উদ্ধার হয় দু’জনের অর্ধগলিত মাথার খুলি।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকালে উদ্ধার করে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র (ছেনি)। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মো. বেল্লাল, তার শ্বশুর আবু মাঝি ও ভাই কাশেমকে পুলিশ শুক্রবার গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে খুনের রহস্য বেড়িয়ে আসে।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে চরফ্যাশন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য চলে আসে পুলিশের হাতে। এক সময়ের চরফ্যাশন পৌরসভার বাসিন্দা বর্তমানে ভারতে বসবাসকারী অমিত (তপন)শীল(৪২) ও দুলাল শীল(৫২)তাদের মালিকানা ৩৬ শতাংশ জমি ২৪ লাখ টাকায় বিক্রী করেন আসলামপুরের বাসিন্দা মো. বেল্লাল গংদের কাছে। দরদাম চূড়ান্ত করার সময় ৩লাখ টাকা অগ্রিম বায়না নেন তারা। বাকি ২১ লাখ টাকার জন্য আসলে গত ৮ এপ্রিল জমির ক্রেতা ও তার দুই সহযোগী পরিকল্পিত ভাবে তাদের হত্যা করেন। হত্যার পর আলামত ধ্বংস করতে লাশ গুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয় তারা।
ভোলা জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানিয়েছেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে লাশ দু’টি পৌরসভা ৩নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত উপেদ্রেব শীল ছেলে তপন শীল (৫২) ও দুলাল সরকারের (৪২)। এঘটনায় পুলিশ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মো. বেল্লাল, বেলালের শ্বশুর আবু মাঝি ও ভাই কাশেমকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, জমি কেনা-বেচার লেনদেনের জের ধরে ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টায় অভিযুক্তরা দুইসহোদরকে আসলামপুর ইউনিয়নের সুন্দরীখাল সংলগ্ন জামাল ভুইয়ার পরিত্যক্ত বাগানে নিয়ে প্রথমে শ্বাষ রোধে হত্যা করে। পরে গভীর রাতে মাথা বিছিন্ন করে এবং দেহ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে। হত্যার পর মাথা ২টি ঘটনাস্থলের উত্তর পাশের মহিবুল্লাহর টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃস্পতিবার বিকালে পুলিশ আসলামপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মহিবুল্লাহর বাড়ির সেপটি ট্যাংক থেকে দু’টি অর্ধগলিত মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকা থেকেই ১৫দিন আগে পোড়া দেহ ২টি উদ্ধার করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলের পার্শবর্তী সুন্দরীখাল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র (ছেনি) উদ্ধার করা হয় শনিবার।
চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মনির হোসেন মিয়া জানান, তিন আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত আসামিদেও জবানবন্দি গ্রহণ শেষে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল দুপুরে আসলামপুরের সুন্দরীব্রিজ সংলগ্ন জামাল ভুইয়ার বাগানে স্থানীয় কৃষক মোস্তাফিজ ছাগল চড়াতে গিয়ে পোড়া লাশ দেখে পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ লাশ দু’টি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
এএইচ/এমআর