দশমিনা(পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সরকার ৫এপ্রিল থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার ঘোষিত লকডাউনের ১৫দিন চলছে। সরকারে নির্দেশিত লকডাউন মানতে গিয়ে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার হতদরিদ্র, দরিদ্র, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, মটরসাইকেল চালক ও দিনমজুরসহ শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পরেছেন। ফলে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে, ২০১১সালের জরিপে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে জনসংখ্যা ১লক্ষ ২৩হাজার ৩শ’ ৮৮জন। যার পুরুষ ৬০হাজার ২শ’ ৪১ ও নারী ৬৩হাজার ১শ’ ৪৭জন। এ মধ্যে প্রতান্ত এলাকায় ১লক্ষ ৪হাজার ১শ’ ৩৬জন এবং শহরে ১৯হাজার ২শ’ ৫২জনের বসবাস। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরো কতৃক দারিদ্র মানচিত্রে এ উপজেলায় দারিদ্রের হার শতকরায় ৫২দশমিক ৮ভাগ। সেই হিসাবে হতদরিদ্র মানুষ রয়েছে ৬৫হাজার ১শ’ ৪৯জন। তারা দিনে আনে দিনে খায়। কাজ না জুটলে তাদের খাবার জুটে না। লকডাউনের কারণে এ সকল মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দ্রুত এ সকল শ্রমজীবী অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশ প্রশাসন কঠোরভাবেই লকডাউন পালনে কাজ করছে। সড়কে চলতে দিচ্ছে না তেমন যানবাহন। তারপর প্রশাসনের নজর এগিয়ে পরিবার পরিজনের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেয়ার জন্য মাহিন্দ্রা, অটো ও রিকশা চলাচল করছে। কিন্তু সড়কে কোনো বড় ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না। উপজেলা পরিষদ সড়কের সামনে চায়ের দোকানী মনির গাজী জানান, করোনায় বন্ধ রয়েছে দোকান। বন্ধ রয়েছে উপার্জনের পথ। মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে চলছে কঠোর লকডাউন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস রমজান। আরেক দোকানী সবুজ হোসেন জানান, দোকান বন্ধ থাকার কারণে তার সংসার খেয়ে না চলছে। অটোচালক ফারুক হোসেন ও মোসারেফ বলেন, পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় চুরি চুরি করে ১শ’ দেড় শ’ টাকা হইলে বাসায় চলে আসি । গাড়ি চার্জের টাকা কই পামু আর কি খামু। লকডাউনে খুব বিপদে আছি। বয়স হয়েছে তেমন চলতে পারিনা। আয় না করলে পরিবার পরিজন নিয়ে খাওন কই পামু?’
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার মো. মনিরুল হক জানান, তেঁতুলিয়া-বড়াগোরাঙ্গ নদী ভাঙন কবলীত এ উপজেলা। এ উপজেলায় জনসংখ্যার তুলনায় নদী ভাঙ্গন ও কর্মহীন মানুষ বেশি। আর মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে সরকারি, বেসরকারি ও বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কর্মহীন মানুষের কাজের জন্য নির্ধারিত সময় দেওয়া প্রয়োজন। যাতে তারা উপার্জন করে পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ চালাতে পারে। তা না হলে কর্মহীন মানুষগুলো অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, উপজেলার শ্রমজীবী ও অসহায় মানুষকে সহায়তায় বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। সহায়তায় বরাদ্দ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসবি/এমআর