আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউনে সারাদেশের মানুষের আনন্দ উল্লাস অম্লান হলেও খুশির বন্যা বইছে আমতলী উপজেলার তরমুজ চাষিদের। আবহাওয়া অনুকুল, প্রচন্ড তাপদাহ ও পরিবহন সংঙ্কট না থাকায় ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করেছেন তারা। বিগত বছরের তুলনায় চারগুণ বেশী লাভবান হয়েছেন চাষিরা। এতে পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এ বছর তরমুজ চাষে প্রায় দুই’শ ১০ কোটি টাকা বিক্রি করেছেন বলে দাবী করেন উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম।
আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, এ বছর আমতলীতে তরমুজের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯’শ ৯০ হেক্টর। ওই লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে প্রতি হেক্টরে ৩৫-৪০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। প্রতিটন ৩০ হাজার টাকা দামে ৬৯ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন তরমুজ বিক্রিহয়েছে প্রায় ২’শ ১০ কোটি টাকা। যা গত বছরের তুলনায় ছিল চারগুণ। গত বছর ১ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে গত বছর তরমুজ চাষিরা লোকসান দিয়েছেন। এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন ও ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করায় গত বছরের তুলনায় চারগুণ লাভবান হয়েছে বলে জানান চাষিরা। এদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ৫ এপ্রিল দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষনা করে সরকার। ওই লকডাউন ঘোষনায় তিনদিন তরমুজ ব্যবসায় ধস নেমে অর্ধেকে আসে তরমুজের মূল্য। কিন্তু প্রচন্ড তাপদাহ, অনুকুল আবহাওয়া ও পন্য পরিবহন সংঙ্কট না থাকায় তিনদিন পরেই ঘুরে দাড়ায় তরমুজের বাজার। ব্যবসায়ী ও চাষিরা আবার লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। বর্তমান লকডাউনে তরমুজ চাষি ও ব্যবসায়ীদের উপর কোন প্রভাব ফেলছে না। উল্টো ঘুরে দাড়িয়েছে তরমুজ বাজার। ১০০ টাকার তরমুজ বর্তমানে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজান মাস শুরু হওয়ায় তরমুজের দাম আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আমতলী বাঁধঘাট চৌরাস্তা, একে স্কুল ও গাজীপুর বন্দরের তরমুজ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের মাঝে বাজারে বেশ ক্রেতা রয়েছে। মাঝারী ধরনের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২’শ ৫০ থেকে ৩’শ ৫০ টাকায়। বড় ধরনের তরমুজ ৩’শ ৫০ থেকে ৫’শ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা বিগত বছরের তুলনায় চারগুন।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের চাষী মোঃ মাহবুব মাতুব্বর বলেন, গত ১০ বছর ধওে তরমুজ চাষ করি। এ বছরের মত এতো দামে কোন বছর তরমুজ বিক্রি করতে পারিনি। ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১২ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম ওই জমির তরমুজ ১২ লক্ষ টাকা বিক্রি করেছি। তিনি আরো বলেন, প্রচন্ড তাপদাহ, লকডাউনের মাঝে তরমুজ পরিবহন সংঙ্কট না থাকায় এতো ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করতে পেরেছি।
চাষী রহমান বলেন, ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে তরমুজ আশা করেছিলাম ১০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করবো। কিন্তু ওই তরমুজ ১১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।
কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী গ্রামের ওহাব মৃধা, বাহাউদ্দিন হাওলাদার ও রাজ্জাক মৃধা বলেন, তিনজনে যৌথভাবে ৩৬ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। ফলন ও ভালো মুল্য পাওয়ায় ৩১ লক্ষ টাকা বিক্রি করছি। তারা আরো বলেন, এ বছর লকডাউনে তরমুজ চাষীদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।
আমতলীর আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের তরমুজ চাষী আলমগীর আকন, কামাল হাওলাদার, শহীদুল গাজী, লিমন গাজী ও মাহাতুল মল্লিক বলেন, এ বছর লকডাউনে তরমুজের উপর কোন প্রভাব পড়েনি। উল্টো লকডাউন তরমুজ চাষিদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। তারা আরো বলেন, অনায়াসে পরিবহন চলাচল করতে পারায় ভালো দামে তরমুজ বিক্রি করতে পেরেছি।
আমতলী বাঁধঘাট চৌরাস্তায় তরমুজ ব্যবসায়ী রিপন চন্দ্র মৌয়ালি ও বাবুল মৃধা বলেন, তরমুজের প্রচুর চাহিদা। চাহিদামত ক্রেতাদের তরমুজ দিতে পারছি না। তারা আরো বলেন দামও অনেক বেশী। দাম বেশী হলেও ক্রেতারা অনায়াসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
আমতলী গাজীপুর বন্দরের তরমুজ ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল রানা বলেন, লকডাউনে তরমুজ পরিবহনে দুই তিন দিন সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই। অবাদে তরমুজ বিক্রি করতে পারায় চাষীরা বেশী দাম পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, অনুকুল আবহাওয়া , প্রচন্ড তাপদাহ ও পরিবহন সঙ্কট না থাকায় এ বছর তরমুজের চাহিদা বেশী। ফলে কৃষক বেশী দামে তরমুজ বিক্রি করেছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, তরমুজের ভালো মুল্য থাকায় কৃষকরা অনেক লাভবান হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এ বছর তরমুজে উপজেলায় প্রায় দুই’শ ১০ কোটি টাকা বিক্রি হয়েছে।
এমএইচকে/এমআর