আমতলীতে পুলিশের লাঠি চার্জের প্রতিবাদে ব্যবসায়িদের বিক্ষোভ

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে পুলিশের লাঠি চার্জের প্রতিবাদে ব্যবসায়িদের বিক্ষোভ
বুধবার ● ১৪ এপ্রিল ২০২১


আমতলীতে পুলিশের লাঠি চার্জের প্রতিবাদে ব্যবসায়িদের বিক্ষোভ

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

 

লকডাউনের অযুহাতে মাছ ও কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীদের উপর পুলিশের অতর্কিত লাঠি চার্জে ১৫ ব্যবসায়ী আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। পুলিশের অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা সড়কে বিক্ষোভ করেছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী পৌর শহরের বাঁধঘাট মাছ ও কাঁচা  বাজারে বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে। আমতলী থানার এস আই আব্দুল মান্নান ব্যবসায়ীদের উপর লাঠি চার্জের কথা অস্বীকার করে বলেন, লকডাউনে নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে বলায় ব্যবসায়ীরা পুলিশের সাথে খারাপ আচরণ করেছে, তাই নিয়ম মানাতে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়েছি।
জানাগেছে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিবোধে সরকার ৭ দিনে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করেছে। এই সাধারণ ছুটির মধ্যে মাছ ও কাঁচা বাজার সকাল ৯ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুসারে বুধবার আমতলী পৌর শহরের মাছ ও কাঁচা বাজার ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসে। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে আমতলী থানার এসআই আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে দুই পুলিশ সদস্য গিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের উপর অতর্কিত লাঠি চার্জ শুরু করেন এমন দাবী কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঞ্জু মিয়ার। এ সময় বাজারে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ হুড়ো হুড়ি করে পুলিশ হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে। এতে ওই পুলিশ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হয় এমন দাবী ব্যবসায়ী রাজা মিয়া ও বাতেনের। এক পর্যায় ব্যবসায়ীরা পুলিশের লাঠিচার্জ থেকে রক্ষায় সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে পুলিশ শান্ত হয়। এতে পুলিশের হামলায় অন্তত ১৫ জন ব্যবসায়ী আহত হয়েছে। আহত আব্দুল করিম, উজ্জল হাওলাদার, মজিবুর মোল্লা, কাওসার মিয়া, মোজাম্মেল, রাজা মিয়া, রুবেল হাওলাদার, রাজিব, জাকারিয়া ও বাতেনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অপর দিকে লকডাউনে ব্যবসায়ীদের নিয়ম অনুসারে ব্যবসা করতে বলায় তারা ক্ষেপে গিয়ে পুলিশের সাথে খারাপ আচরণ করে। এ সময় ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলে দাবী করেন আমতলী থানার এস আই আব্দুল মান্নান।  ঘটনার ঘন্টাখানের পরে বেলা ১১ টার দিকে ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবসায়ীদের শান্ত করেন। পরে তিনি সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ব্যবসা করতে তাদের নির্দেশ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, অহেতুক পুলিশ মাছ ও কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীদের মারধর করেছে। পুলিশের মারধরে মাছ ও কাঁচা বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষ হুড়োহুড়ি করে পালানোর চেষ্টা করে। তারা আরো বলেন, পুলিশের লাঠি চার্জ থেকে রক্ষায় ব্যবসায়ীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছে। পরে পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে ব্যবসায়ীরা শান্ত হয়।
মুদি মনোহরদি ব্যবসায়ী আহত আব্দুল করিম বলেন, সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে দোকান খোলা মাত্রই এসআই মান্নান এসে কিছু না বলেই মারধর  শুরু করে। তিনি আরো বলেন, পুলিশ আমার ১০ ব্যাগ মুড়ি রাস্তায় ফেলে দিয়েছে।
কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ী আহত বৃদ্ধ মোঃ মজিবুর মোল্লা বলেন, কিছু না বলেই পুলিশ এসে আমাকে মারধর শুরু করেছে। আমি দিশেহারা হয়ে ইউএনও স্যারের দোহাই দিয়েছি কিন্তু তাতেও  রক্ষা পায়নি। আমাকে লাঠি দিয়ে অন্তত ১০ টি আঘাত করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
কাঁচা পণ্য ব্যবসায়ী উজ্জল হাওলাদার বলেন, পুলিশের এস আই মান্নান ও দুই পুলিশ সদস্য এসে আমাকে বেধরক মারধর করেছে। তিনি আরো বলেন, আমার ৭ হাজার টাকার ফুটি (বাঙ্গি) সড়কে ফেলে নষ্ট করে দিয়েছে। ওই ফুটি আমার লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছি।
মারধরের শিকার মৎস্য ব্যবসায়ী রাজিব, কাওসার ও জাকারিয়া বলেন, পুলিশের এস আই মান্নান ও মহিবুল এসে আমাদের উপর বিনা কারনে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবী করছি।
কাঁচার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মাহবুবুর রহমান হিমু গাজী ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিয়ম মেনেই কাঁচা ও মাছ বাজার ব্যবসায়ীরা দোকান খুলেছে। কিন্তু পুলিশের এসআই আব্দুল মান্নান ও তার সহযোগীরা আমার ব্যবসায়ীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে আমার অনেক ব্যবসায়ী আহত হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবী করছি।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, লকডাউনে দোকান খোলা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল তা সমাধান হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে ব্যবসায়ীদের সামাজিক দুরত্ব রজায় রেখে সরকারী নির্দেশনা মেনে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, পুলিশের সাথে অপ্রতিকর ঘটনায় উভয় পক্ষকে শান্ত করা হয়েছে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৭:০৬ ● ৫৩৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ