দখল দৌরাত্ম্যে শিববাড়িয়া নদী এখন মরা খাল!

প্রথম পাতা » কুয়াকাটা » দখল দৌরাত্ম্যে শিববাড়িয়া নদী এখন মরা খাল!
বুধবার ● ১৪ এপ্রিল ২০২১


দখল দৌরাত্ম্যে শিববাড়িয়া নদী এখন মরা খাল!

কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥

এক সময়ের খর¯্রােতা শিববাড়িয়া নদী বা খাপড়াভাঙ্গা দোন দখল দৌরাত্মে ক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে। নদীর দুই পাড়ে আলীপুর ও মহিপুর নামে দু’টি মৎস্য অবতরণ ও বাজারজাত করণ কেন্দ্রকে ঘিরে প্রতিদিন শতশত সমুদ্রগামী মাছধরা ট্রলারের অবস্থান এই নদীতে। একই সাথে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে নদীর দু’ধারে নদী দখল করে দুই শতাধিক পাকা এবং আধাপাকা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে নদীর নাব্যতা তলানিতে ঠেকেছে। সর্বশেষ মহিপুর ভূমি অফিসের চোখের সামনে মহিপুর কলবাড়ি এলাকায় নদীর মধ্যে গাইডওয়াল করে অবৈধ দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে গাইডওয়ালের মধ্যে জোয়ারের সাথে পলি পড়ে প্রাকৃতিক উপায় ভরাট হচ্ছে, গত তিন মাসে পলি জমে প্রায় দৃশ্যমান জমিতে পরিনত হয়েছে। মহিপুর ও আলীপুর এলাকার পাশাপাশি এমন দখল ১৭ কিঃ মিঃ নদীর বিভিন্ন স্থানে চলমান রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও নদীর পাড় কেটে মাটি তোলা হচ্ছে নৌযানে, বিভিন্ন ইটভাটায় এই মাটি চরাদামে বিক্রি হচ্ছে। একদিকে নদী দখল করে নদীর নাব্যতা নষ্ট করা হচ্ছে, অন্যদিকে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেদারছে মাটি বিক্রি হলেও ভূমি অফিসের নেই কোন পদক্ষেপ।
সরেজমিনে জানা যায়, শিববাড়িয়া নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত সাপ্তাহিক বাজার মহিপুরের শতাধিক ব্যবসায়ীকে পেরিফেরি ম্যাপের আওতায় এনে একসনা বন্দোবস্ত দিয়েছে মহিপুর ভূমি অফিস। এসকল বন্দোবস্ত গৃহীত ব্যবসায়ীরা ভূমি অফিস ম্যানেজে শর্ত ভঙ্গ করে নদীর পাড় দখলে নিয়ে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। ফ্রিস্টাইলে দখল দৌরাত্ম্য চলার কারণে খাপড়াভাঙ্গা নদীটি এভাবে ক্রমে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। কোন ধরনের রাখ-ঢাক নেই দখলের ক্ষেত্রে। মহিপুর ভূমি অফিসের আশেপাশে এই দখল তান্ডব চললেও তারা বরাবরই রহস্যজনক কারণে নির্বিকার থাকেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এছাড়া, গভীর সমুদ্রগামী জেলেদের দূর্যোগকালীন একমাত্র আশ্রয়স্থল (পেতাশ্রয়) ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন উপকূলের লক্ষাধিক জেলে। পানিউন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেল সূত্রে জানা গেছে, সরকার এই নদী পুনর্খননের জন্য পরিকল্পনা করেছে। কয়েকদফা সমীক্ষা চালানো হয়েছে। কিন্তু দখল দৌরাত্ম্য কোনভাবেই থামছেনা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মহিপুর ভূমি প্রশাসনের এসব দেখভালের দায়িত্ব নেই! উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জগৎবন্ধু মন্ডল বিভিন্ন সময় নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান অভিযানে দন্ড দিয়ে আসছেন, কিন্তু ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশীলদারগণ) এসব মনিটরিং কিংবা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছেন না বলেও রয়েছে অভিযোগ, করছেন না দখলদারদের আপডেট তালিকা। এমনকি এদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তহশীলদার মোঃ আজিহজুর রহমান বরাবরই চুপচাপ থাকছেন। স্থানীয় লোকজনের কাছে মহিপুর ভূমি অফিসের তহশিলদারের এসব দখল-দৌরাত্ম্যের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ সেই পুরানো। মহিপুর বন্দরের সরকারি পুকুর দখলদারদের হাতে তুলে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে এই তহশীলদারের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এসব দখলদার উচ্ছেদ করে নদী রক্ষার আবেদন করেছেন। উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। শীঘ্রই এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এনইউবি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৪:২৯ ● ৪৯০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ