কক্সবাজার সাগরকন্যা প্রতিনিধি ॥
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন কক্সবাজারের ১০২ জন ইয়াবা চোরাকারবারি। শনিবার সকালে টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারী এই ১০২ জনের মধ্যে ২৪ জন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় ‘গডফাদার’ হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রতীকীভাবে ৩০ কেজি ইয়াবা ও ৩০টি অস্ত্র সমর্পণ করেন ইয়াবা কারবারিরা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ইয়াবা কারবারি অন্যদেরও আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় না দেওয়ার অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. জাবেদ পাটোয়ারী অন্য চোরাকারবারিদেরও আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনাদের মধ্যে যারা ঘাপটি মেরে আছেন, তাদের কাছে কঠোর বার্তা দিতে চাই। হয় আত্মসমর্পণ করেন, নইলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ এই মাদক পাচারে যুক্ত থাকলে তাদের বিষয়েও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন পুলিশ প্রধান।
আত্মসমর্পণকারীদের অভয় দিয়ে তিনি বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য যা যা করণীয়, তা করা হবে, আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে তাদের। আইনের মাধ্যমে স্বল্পসময়ে যেন তা নিষ্পন্ন করা যায়, সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। সারা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এরকম আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও জানান জাবেদ পাটোয়ারী। ইয়াবা নির্মূলে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা মাদককে নির্মূল করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজনে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার অবস্থান করে সার্বিক প্রস্তুতির তত্ত্বাবধান করছিলেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, ইয়াবা কারবারিরা আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্মতি জানানোর পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে বিশেষ উদ্যোগে জেলা পুলিশও তৎপরতা শুরু করে। এতে অনেকে সাড়া দিয়ে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে নিরাপদ হেফাজতে আসেন। বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকের মধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেটের কথাই সবার আগে আসে। এই ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। ইয়াবা পাচার বন্ধে মিয়ানমার সরকারের সহায়তা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই গত বছর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের প্রশ্নবিদ্ধ অভিযানে কয়েকশ জন নিহত হলেও ইয়াবা কারবার বন্ধ করা যায়নি। এই অবস্থায় নতুন বছরের শুরুতে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়। এর মধ্যে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক গত ১৫ জানুয়ারি ফেইসবুকে ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণের কথা জানালে বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেয়। কক্সবাজারের চিহ্নিত মাদক পাচারকারীদের একটি অংশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের আগ্রহ জানালে বিষয়টি আকার পেতে শুরু করে।
এফএন/কেএস