শহীদ মিনারও এখন দলীয়করণের শিকার: রিজভী

প্রথম পাতা » রাজনীতি » শহীদ মিনারও এখন দলীয়করণের শিকার: রিজভী
শনিবার ● ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কবি আল মাহমুদের কফিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনার অনুমতি না দিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারও এখন আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয়করণের শিকার। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।

রিজভী বলেন, আজকে যদি আল-মাহমুদের লাশকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনারে আনতে দেওয়া না হয়, তাহলে প্রমাণিত হবে, এই সরকার তাদের ভিন্ন মতের মানুষ, তিনি মুক্তিযোদ্ধা হোক আর যত বড় স্বাধীনতা সংগ্রামীই হোক, তাদের কোনো মূল্য নেই। তাদের চেতনার বাইরে হলেই তারা স্বাধীনতাবিরোধী, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, স্বাধীনতা সংগ্রামী এই মুক্তিযোদ্ধার লাশ জাতীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিয়ে আসা হোক। সেই অনুমতি সরকারের দেওয়া উচিৎ।

তিনি বলেন, তার মরদেহ শহীদ মিনারে যদি আনতে না দেওয়া হয়, তখন এটাই প্রমাণিত হবে এই সরকার তাদের ভিন্ন মতাবলম্বী, তারা মুক্তিযোদ্ধাই হোক, আর যত বড় স্বাধীনতা সংগ্রামী হোক, তাদের কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। তাদের (মতাসীন) চেতনার বাইরে হলেই তারা স্বাধীনতাবিরোধী, তারা মুক্তিযোদ্ধাবিরোধী। মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে গিয়ে কবি আল মাহমুদ কারারুদ্ধও হওয়ার কথাও তুলে ধরেন রিজভী। কবির প্রতি দলের শ্রদ্ধা জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ও আমাদের চেতনার অয়জ্যোতি কবি আল মাহমুদের ইন্তেকালে গোটা দেশবাসীর সাথে আমরাও গভীরভাবে শোকভুত। কিংবদন্তিতুল্য কবির প্রতি বিএনপি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।

কবির রচনা স্মরণ করে রিজভী বলেন, এদেশের প্রগতিশীল আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের বায়ন্নোর ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধিকারের লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ-কোথায় নেই কবি আল মাহমুদের কাব্য প্রতিভা? আমরা যখন ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাই প্রভাতফেরিতে, তখন আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো গানের পরেও আমরা আরও যে সমস্ত কবিতা আবৃত্তি করি, গান গাই- ‘ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ দুপুর বেলার অক্ত’ এই যে কবিতাগুলো আমাদেরকে কবি আল মাহমুদকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, সরকারের ‘নতজানু’ পররাষ্ট্র নীতির কারণেই বাংলাদেশের সেইন্ট মার্টিন দ্বীপকে মিয়ানমার তাদের মানচিত্রে নিজেদের অংশ দেখাচ্ছে। মিয়ানমার সেইন্ট মার্টিন দ্বীপপুঞ্জকে নিজেদের অংশ হিসেবে দেখানোয় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সরকারের প্রতিবাদ জানানোর প্রোপটে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, বারবার মিয়ানমার সরকারিভাবে তাদের ওয়েবসাইটে সেদেশের মানচিত্রে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপকে নিজের অংশ হিসেবে দেখাচ্ছে। নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে মিয়ানমার বাংলাদেশকে নিয়ে দুঃসাহস দেখাতে স্পর্ধা দেখাচ্ছে। মিডনাইট ভোটের সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রায় ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে।

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, শুধু দূতকে ডেকে নিয়ে প্রতিবাদ করলেই সব শেষ হয়ে যায় না। একবার নয়, কয়েক বার একই ঘটনা মিয়ানমার ঘটিয়েছে। গণবিচ্ছিন্ন সরকার কেবল নামকাওয়াস্তে প্রতিবাদ করে চুপ হয়ে যায়। মিয়ানমারের তৎপরতার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালোভাবে উপস্থাপনের দাবি জানান তিনি। রোহিঙ্গা সমস্যায়ও সরকারের ‘নতজানু’ পররাষ্ট্র নীতির কারণেই সমাধান আসছে না বলে মন্তব্য করেন রিজভী। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে গুলিবর্ষণের পর নিহতদের আসামি করে বিজিবির মামলা দায়েরের নিন্দা জানান বিএনপি নেতা রিজভী।

তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের নিহতদের পরিবারে যখন শোকের মাতম চলছে, তখন নিহতদের নামে আবার মামলা দেওয়া হয়েছে। রকরাই এখন ভক হয়ে উঠেছে। মৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের যেন সরকারের প্রধান কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। সীমান্ত পাহারা দেওয়ার কাজ বিজিবির। তারা সীমান্ত পাহারা না দিয়ে বিএসএফের মতোই বাংলাদেশিদের হত্যা করছে। প্রতিদিনই বিএসএফ বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে, অথচ বিজিবি এ বিষয়ে নির্বিকার। মিড নাইট সরকারকে সহায়তা করার জন্যই পুলিশ র‌্যাবের মতো বিজিবিও সেই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছিল। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে নোয়াখালীর সেনবাগের গ্রামে রোখসানার উপর আওয়ামী লীগের হামলার নিন্দা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহিদা রফিক, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন।

এফএন/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৬:১৮ ● ৩৯৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ