ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই উল্লেখ করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাস্তবতা হলো এখনও শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প আমাদের পার্টিতে নেই। তার কোনো বিকল্পও সমসাময়িক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেই। জার্মান প্রচার মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাাৎকারে শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন কাদের।
টানা তিন যুগ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এই নিয়ে চতুর্থ বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া শেখ হাসিনা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এবার অবসর নিতে চান তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) এর আগেও বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দলের কাউন্সিলর এবং নেতা-কর্মীদের চাপের মুখে তিনি ঘোষণা দিয়েও সরে যেতে পারেননি। তিনি ছাড়তে চাইলেও নেতা-কর্মীরা ছাড়বে কি না, সেটা চিন্তার বিষয়। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে শেখ হাসিনার বিষয়টি স্মরণ করে তিনি বলেন, রাজনীতিকরা ভাবেন পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে, শেখ হাসিনা ভাবেন পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে। দতা, যোগ্যতা, সততায় শেখ হাসিনাকে কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। তিনি সবাইকে অতিক্রম করে গেছেন, তিনি নিজেকেও অতিক্রম করে গেছেন। পাঁচ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকেই দলের চাওয়ার কথা বলেন কাদের।
‘সরকার একনায়কতন্ত্র কায়েম করছে’ বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনে শোচনীয় ব্যর্থতা তাদেরকে বেপরোয়া করে ফেলেছে। তাদের মধ্যে হতাশা চরমে। তারা বেসামালও হয়ে গেছে। বেসামাল মানুষ কখন যে কী বলে! এটা এক ধরনের অসংলগ্ন প্রলাপই বলা যায়। বেসামাল লোকজন অসংলগ্ন প্রলাপ বকবে, এটাই স্বাভাবিক। ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে জঙ্গিদের বোমা হামলায় নিরাপত্তাকর্মী নিহতের ঘটনার নিন্দা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের খুব কাছের একটা দেশ। ৪৫ জন ভারতীয় জোয়ান সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ভারতের জনগণের বেদনা, কষ্টের আমরাও অংশীদার। জাতীয় ইস্যুতে ভারতের সরকার ও বিরোধী দলের এক সুরে কথা বলার উদাহরণ তুলে ধরে কাদের বলেন, বাংলাদেশেও তা আশা করেন তিনি। এ ধরনের ঘটনায় জাঁতি (ভারতীয়রা) হিসেবে সবাই এক ভয়েসে কথা বলছে। তারা অল পার্টি মিটিংয়ে বসেছে। জাতীয় ইস্যুতে সবাই এক সঙ্গে বসে যাওয়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাহুল গান্ধীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা, আমি শুধু ভাবছিলাম এই স্পিরিট ও ইমোশনটা আমাদের মধ্যে নেই কেন? হলি আর্টিজানের ঘটনায় আমরা তো এক ভয়েসে কথা বলতে পারিনি, শোলাকিয়ার ঘটনায় আমরা তো এক ভয়েসে কথা বলতে পারিনি।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন। আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামি কোনো চাল চালছে কি না, তা বুঝেই পদপে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে সরকারের এই মন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, জামায়াত একাত্তরের ভূমিকার জন্য মা চাইলেও যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার চলছে, তা অব্যাহত থাকবে। যুদ্ধাপরাধের বিচার ও নিবন্ধন হারিয়ে চাপে থাকা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রাজ্জাক গত শুক্রবার যুক্তরাজ্য থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। একাত্তরে দলের ভূমিকার জন্য মা চাওয়ার কথা বলেছেন রাজ্জাক। সেই সঙ্গে জামায়াতকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর কথাও বলেছেন তিনি। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে এলে মতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদককে জামায়াত বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জামায়াত মা চাইলে আওয়ামী লীগ তা সাধুবাদ জানাবে কি না-এই প্রশ্নে কাদের বলেন, এটা এখনও আলাপ-আলোচনার মধ্যে, গুজব-গুঞ্জনের মধ্যে সীমিত আছে। তারা অফিসিয়ালি কিছু বলেনি, এপোলাইজ করেনি। তবে যারা মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপারাধের সঙ্গে যুক্ত, তাদের যে বিচার কাজ চলছে, এটা কিন্তু বন্ধ হবে না। রাজ্জাকের পদত্যাগের বিষয় কিভাবে দেখছেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত, তাদের দলের সিদ্ধান্তের উপর বিষয়টি নির্ভর করছে। তাদের ইনটেশনটা এখনও কিয়ার না। আগে পরিষ্কার হোক। জামায়াত নতুন নামে এলে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাবে কি না-প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো সিদ্ধান্তই এখনও নেয়নি। তবে নতুন বোতলে পুরাতন মদ যদি আসে, তাহলে পার্থক্য কোথায়? জিনিস তো একটাই। তাদের আদর্শটা ঠিক আছে, নতুন নামে একই আদর্শ আসবে, তাহলে পার্থক্যটা কোথায়? সেটা দেখতে হবে, এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। এখন নানা কথা মিডিয়ায় আসছে। এগুলো পরিষ্কার হওয়া দরকার। পরিষ্কার হওয়ার আগে আমরা কেন মন্তব্য করতে যাব? জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কায় নতুন কৌশল নিচ্ছে কি না-এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কৌশলও হতে পারে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর মা চাওয়ার বিষয় কেন এল, সেটাও কোনো কৌশল কি না, ভেবে দেখতে হবে।
এফএন/কেএস