আমতলীতে তরমুজের বাম্পার ফলন

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে তরমুজের বাম্পার ফলন
বৃহস্পতিবার ● ১ এপ্রিল ২০২১


আমতলীতে তরমুজের বাম্পার ফলন

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥


বরগুনার আমতলী উপজেলায় তরমুজের বাম্পার হওয়ায় চাষীদের মুখে ফুটেছে স্বপ্নের হাসি। গত বছরের তুলনায় বাজারে চারগুণ বেশী দামে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের  শুরুতে বাজারে দাম ভালো থাকায় বিগত বছরের লোকসান কাটিয়ে ঘুড়ে দাড়ানোর স্বপ্ন বুনছেন তারা।
আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, এ বছর আমতলীতে তরমুজের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৯’শ ৯০ হেক্টর। ওই লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে। গত বছর তরমুজ চাষ হয়েছিল এক হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪’শ ৯০ হেক্টর জমিতে তারমুজ চাষ বেশী হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে বিগত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষীরা বেশ লোকসান গুনতে হয়েছে। ফলে তরমুজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তারা। কৃষি বিভাগ প্রতি হেক্টরে ৪০-৪৫ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তরমুজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
তরমুজ চাষের আদর্শ জমি বেলে-দোআঁশ মাটি। আমতলীর জমি বেলে-দোআঁশ মাটি হওয়ায় রসালো তরমুজ চাষ ভালো হয়। কৃষকরা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুসারে পলি ব্যাগে চারা উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার করে তরমুজ চাষ করেছেন। মাঘ মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তরমুজ চাষের উপযুক্ত সময়।  দুই মাসের মধ্যে তরমুজ গাছে ফলন ধরে।  পুরো চৈত্র মাস ঝুড়ে তরমুজের ভরা মৌসুম। তবে বৈশাখ মাষের প্রথম সপ্তাহেও বাজারে তরমুজ পাওয়া যায়। ভরা মৌসুম হওয়ায়  বর্তমানে তরমুজের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষি ও শ্রমিকরা। আমতলীর  উৎপাদিত তরমুজে বাজার ছেয়ে গেছে। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তরমুজ চাষি, আড়ৎদার ও শ্রমিকরা। এবার ফলন ভালো হওয়ায় খুশি চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে দামটাও পাচ্ছেন বেশ। গত বছরের তুলনায় বাজারে চারগুণ বেশী দামে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো থাকায় বিগত বছরের লোকসান কাটিয়ে ঘুড়ে দাড়ানোর স্বপ্ন বুনছেন চাষীরা। বাজারে প্রকারভেদে জাম্বু জাগুয়ার, বিগ ফ্যামিলি, সুইট ড্রাগন, সুগার বেবী, ও ব্লাক ডায়মন্ড নামে ৫ ধরনের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কালচে রংয়ের জাম্বু জাগুয়ার তরমুজ স্বাদে অতুলনীয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, গাজীপুর, বগুড়া, কুমিল্লা, গাইবান্দা, টাঙ্গাইল ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরমুজ যাচ্ছে। আমতলী উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে আঠারোগাছিয়া, কুকুয়া, হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নে। ইতিমধ্যে তরমুজ চাষিদের কাছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে দর কষাকষি করছেন। কিছু চাষী তরমুজ বিক্রি করছেন আবার কেউ আরো বেশী দামের আশায় বসে আছেন।
আমতলীর বাজারে প্রকারভেদে একটি তরমুজ ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশী বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
আমতলীর আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের মাহবুব মাতুব্বর বলেন, আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১২ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে দাম ভালো। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে গত বছরের তুলনায় চারগুণ লাভ হবো বলে আশা করি। তিনি আরও বলেন, এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় একটু খরচ বেশী হয়েছে।
একই এলাকার আলমগীর আকন বলেন, এক লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। বাজারে দাম ভালো থাকায় আশা করি গত দু’বছরের লোকসান কাটিয়ে ভালো লাভবান হবো।
কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী গ্রামের ওহাব মৃধা, বাহাউদ্দিন হাওলাদার ও রাজ্জাক মৃধা বলেন, তিন জনে যৌথভাবে ৩৬ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। ফলন ভালো হওয়ায় আশা করি ৩০ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবো। তারা আরো বলেন, এ বছর তরমুজে বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভালো থাকায় কয়েক বছরের লোকসান কাটিয়ে ভালো লাভবান হবে বলে আশা করছি।
আমতলী গাজীপুর বন্দরের তরমুজ ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল রানা বলেন, এ বছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভালো। গত বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের দাম তিন থেকে চারগুণ বেশী।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে গত কয়েক বছর তরমুজ চাষীদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছে। এ কারনে তরমুজ চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশী চাষ করেছে চাষিরা। তিনি আরো বলেন, এ বছর তরমুজে ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম থাকায় খুশি কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে কৃষকরা বিগত কয়েক বছরের লোকসান কাটিয়ে ঘুড়ে দাড়াতে পারবে বলে আশা করি।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৩:১৭ ● ৯৩৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ