সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
সরকার আবারো জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) কারণে ওই খাতের ব্যয় বেড়েছে। গত বছর পেট্রোবাংলা-এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি পাইপলাইনে যুক্ত হয়েছে। আর এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সামিটের এলএনজিও পাইপলাইনে যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সমতুল্য এলএনজি গ্রিডে আসবে, যা বর্তমানে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ব্যয়বহুল এই তরলীকৃত গ্যাসের দাম সমন্বয়ের জন্যই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো সব শ্রেণির গ্যাসের দাম গড়ে ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কোম্পানিগুলো গৃহস্থালীতে ব্যবহৃত দুই চুলার গ্যাসের বিদ্যমান দাম ৮০০ থেকে ১২শ টাকা নির্ধারণ করতে চায়। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সিএনজি ও বাণিজ্য খাতের গ্যাসের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়বে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর বিইআরসি গত বছরের মে মাসে শুনানি গ্রহণ করেছিল। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বর্ধিত মূল্যহার অনুযায়ী গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন।তবে নির্বাচনের বছরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তখন বর্ধিত মূল্যহার ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল বিইআরসি।
সূত্র জানায়, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির নতুন প্রস্তাবে বাসা-বাড়িতে দুই বার্নার চুলার গ্যাসের দাম ৮০০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা এবং এক বার্নারের দাম ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকার করার কথা বলা হয়েছে। দাম বৃদ্ধির আবেদন গৃহীত হলে আবাসিক ছাড়াও দাম বাড়বে বিদ্যুৎকেন্দ্র, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি, শিল্প ও সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দামও। কিন্তু বর্তমানের প্রতিযোগিতার বাজারে গ্যাসের দাম আবারো বাড়ানো হলে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে মনে করছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, তাতে উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি শিল্পপণ্যের উৎপাদন ব্যয় আরো বাড়বে। তাতে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু বাস্তবতা ও গ্রাহকদের সমতা বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা হওয়া উচিত বলে বিইআরসি সংশ্লিষ্ট অনেকের মনে করছেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই বছরের মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা কার্যকর করার কথা ছিল। আদালতের রায়ের কারণে প্রথম ধাপের দাম বৃদ্ধি কার্যকর হলেও দ্বিতীয় ধাপ কার্যকর হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকে দেশীয় গ্যাসের পাশাপাশি আমদানি করা এলএনজির ব্যবহার শুরু হয়। এলএনজির আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় লোকসান হবে- এমন যুক্তিতে গত মার্চ মাসেই বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর আবেদন করেছিল। তখন শুনানিশেষে বিইআরসি জানিয়েছিল- প্রতি ঘনমিটারে ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশনার পরে দাম না বাড়িয়ে গ্যাস খাতে ভর্তুকি দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বিতরণ কোম্পানিগুলোর লোকসান কমাতে সরকারও এলএনজি সরবরাহ পর্যায়ের ভ্যাট বাদে আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে সব ধরনের শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসব কারণে গত ১৬ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের আগের দামই বহাল রাখার ঘোষণা দেয় কমিশন। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় মূল্য ৭ টাকা ১৭ পয়সা।
এদিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, এলএনজি সরবরাহ ১০০ কোটি ঘনফুটে পৌঁছালে শুধু এ খাতেই সরকারকে বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে। আর কর ও শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে ওই ব্যয় কমলেও তা ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে নামবে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ৩২ টাকা দরে আমদানি করে ৭ টাকা ১৭ পয়সা দরে বিক্রি করার কারণে গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। শুধু গত বছর অক্টোবরেই সরকার এলএনজিতে ভর্তুকি দিয়েছে ৫৬০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সংশ্লিষ্টরা জানান, গত সপ্তাহে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে তিতাসসহ বিতরণ কোম্পানিগুলো নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আগে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে প্রস্তাব তারা দিয়েছিল নতুন প্রস্তাবগুলোতে তার চেয়ে কিছুটা বেশি দাম বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। কিছু বিষয় হালনাগাদ করে নতুন করে প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো। নতুন প্রস্তাবগুলোর ওপর আগামী মার্চের ১১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এফএন/কেএস