আমতলীতে উন্নয়নের ছোয়ায় পাল্টে গেছে চিত্র

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে উন্নয়নের ছোয়ায় পাল্টে গেছে চিত্র
রবিবার ● ২৮ মার্চ ২০২১


আমতলীতে উন্নয়নের ছোয়ায় পাল্টে গেছে চিত্র

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

উন্নয়নের ছোয়ায় পাল্টে গেছে বরগুনার আমতলী উপজেলা। বিগত ১২ বছরে বদলে গেছে উপজেলার চিত্র। প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলে লেগেছে উন্নয়নের ছোয়া। এখন আর মানুষকে দুর্ভোগে পোহাতে হয় না। ডিজিটালের ছোয়া এখন হাতের মুঠোয়। উপজেলার সকল উন্নয়নের দাবীদার সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) সংসদীয় আসনের সাবেক সাংসদ বাংলার বরপুত্র মানসকন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের উন্নয়নের এ সকল চিত্র তুলে ধরতে আমতলী উপজেলা প্রশাসন দু’দিন ব্যাপী উন্নয়ন মেলার আয়োজন করেছে। রবিবার (২৮ মার্চ) উন্নয়ন মেলার শেষ দিন ঘুরে এ সকল তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানাগেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর থেকে আমতলীর প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ছোয়া  পেতে শুরু করে। গত ১২ বছরে আমতলীর ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। শিক্ষা, খাদ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা ও বিদ্যুৎসহ সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়ন বিরাজমান।  বাদ যায়নি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপকারভোগীরাও। তারাও পেয়েছেন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা। ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুসারে আমতলী উপজেলায় জনসংখ্যা এক লক্ষ ৮২ হাজার ৭’শ ৯৮। এর মধ্যে পুরুষ ৮৮ হাজার ৪৬১ এবং ৯৪ হাজার ৩’শ ৩৭। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। শিক্ষার হার ৫২.৭০% এবং দারিদ্রতার হার ২৫.০৭ % এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরে সকল সেক্টরেই উন্নয়নের ছোয়া লাগে।  তথ্য মানুষের দ্বোর গোড়ায় পৌছে দিতে প্রধানমন্ত্রী গঠন করেছেন তথ্য আপা অফিস। স্বাস্থ্য ও সচেতন করতে তথ্য আপা ১২ হাজার নারীকে সেবা দিয়েছেন বলে জানান তথ্য আপা সোনিয়া আফরোজ।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অফিস গত ১২ বছরে ১৩ হাজার ৭২ জনকে ভিজিডি, ৫ হাজার ৪’শ ৮৪ গর্ভবর্তী নারীকে মাতৃত্বকালীন ভাতা, ২’শ ৬২ জন নারীকে আত্মকর্মসংস্থানে ২৩ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা ঋণ এবং ৭’শ ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বলে জানান মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রধান অফিস সহকারী নুরজাহান বেগম।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ইসলামী ফাউন্ডেশন আমতলী শাখা ৪’শ ৩২ জন ইমাম ও মুয়াজিনকে প্রশিক্ষণ  দিয়েছেন এবং ৮৩ টি মসজিদ ভিত্তিক গণ শিক্ষা কার্যক্রম স্থাপন করেছেন।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ ২ হাজার ৪’শ খামারীকে প্রশিক্ষণ, ৫ লক্ষ গবাদী পশু ও পাখীকে ভ্যাকসিন দিয়েছেন। প্রাণী সম্পদ বিভাগের প্রচেষ্টায় আমতলী মাংশে সয়ংসম্পুর্ণ এমন কথা বলেন  উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা অভিজিত কুমার মোদক।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সমাজসেবা অধিদপ্তর উপজেলার ৭ হাজার উপকার ভোগীকে বয়স্কভাতা, ২ হাজার ৫’শ জনকে প্রতিবন্ধি ভাতা ও ৩ হাজার জনকে বিধবা ভাতা দিয়েছেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সমাজসেবা অফিসার মোঃ মাঞ্জুরুল হক কাওসার।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিস ৬ হাজার ৭’শ ৮৫ জেলেকে জেলে তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন। এ সকল তালিকাভুক্ত জেলেরা জাটকা ইলিশ আহরনে বিরত ও ৬৫ দিন সাগরে ইলিশ শিকারে বিরত থাকাকালিন সময়ে সরকারী বরাদ্দ ভিজিযি পেয়ে থাকেন বলে জানান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরকার।
উপজেলা সমবায় অফিস ১’শ ৬৭ টি সমিতির মাধ্যমে ৪ হাজার ১’শ ৭৫ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
২০১৪ সালের কৃষি শুমারী অনুসারে উপজেলায় ১৬ হাজার ৫’শ তালিকাভুক্ত কৃষক রয়েছে। ওই কৃষকের মধ্যে ৮ হাজার কৃষককে বিভিন্ন প্রকল্পের অধিনে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কৃষি উপকরন দেয় কৃষি বিভাগ। এছাড়াও কৃষকদের বোরো ধান, সুর্যমূখী ও ভুট্টা চাষে উৎসাহী করতে প্রদর্শনী প্লট করেছেন বলে জানান কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম।
উন্নয়নের দৃশ্যমান ছোয়া জনগনের দ্বোর গোড়ায় পৌছে দিয়েছেন আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার বিভাগ।  তাদের প্রচেষ্টায়ই আজ গ্রাম হচ্ছে শহর। গত ১২ বছরে তারা ২’শ ৩০ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরন, ১৯ টি হাট বাজারে স্টল নির্মাণ, ১ হাজার ৪’শ ৭৮ মিটার ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ, ক্ষুদ্রাকার পানি উন্নয়নে ৫’শ ৯০ হেক্টর খাল খনন, ৭ টি ইউনিয়ন কমপ্লেক্স, ৬৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ৩ টি পাকা ভবন নির্মাণ ও ২১ টি মসজিদ, মন্দির ও গির্জা স্থাপন করেছেন। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের উন্নয়নের চিত্রই বদলে দিয়েছে আমতলী এমন দাবী  উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আল মামুন।
উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর যুবক ও যুব নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ৮ হাজার ২৮ জনকে সাধারণ প্রশিক্ষণ, আত্মকর্মী হিসেবে ৩ হাজার ৭’শ ৪৭ জনকে প্রশিক্ষণ  এবং ৫০ টি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। যুবকদের স্বাবলম্বি করতে পরিবার ভিত্তিক কর্মসংস্থান কর্মসূচীসহ ঋণ দিয়েছেন ১ কোটি ৭৪ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা ও অনুদান দিয়েছেন ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। এছাড়াও দুই বছর মেয়াদী ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীতে ২ হাজার ৫’শ ৭৩ যুবক ও যুব নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভাতা দেয়া ছিল যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বড় সাফল্য।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত এবং ট্রামা সেন্টার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সরকারের আমলে আমতলী উপজেলায় চিকিৎসা ক্ষেতে ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে রক্ষায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের ছিল অগ্রনী ভুমিকা। জীবনবাজি রেখে ৩ হাজার ৯’শ ১৯  মানুষের করোনা নমুনা সংগ্রহ করে ১’শ৩৮ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া।  করোনা ভ্যাকসিন দিয়েছেন ৫ হাজার ২’শ ৮০ জনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইপিআই টেকনেশিয়ান মোঃ আবুল বাশার।
২০১৮ সালের তালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষনা দিয়েছেন গ্রাম হবে শহর, কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুসারে উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের মাধ্যমে গৃহহীন ৪’শ২ পরিবার পেয়েছে পাকা ঘর।
উন্নয়নের ছোয়াকে আলোকিত করেছে আমতলী পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। আমতলী উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। আমতলী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম মোঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, উপজেলার ৫৭ হাজার ৭’শ গ্রাহককে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে।
শিক্ষায় কিছুটা পিটিয়ে থাকলেও গত ১২ বছরে তা উত্তরণ হয়েছে। ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুসারে উপজেলায় শিক্ষার হার ৫২.৭০% হলেও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জরিপ মতে বর্তমান শিক্ষার হার ৭১.২৪%। গত ১২ বছরে প্রায় ২০% উন্নীত হয়েছে।
পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন উপজেলার ৩ হাজার হতদরিদ্র  মানুষকে দিন ধাপে ঋণ, নারী ঋণ ও সেলফ ঋণ ও শতাধিক মানুষকে বিনামুল্যে সেলার বিতরন করেছেন  ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত প্রচেষ্টায় গড়া আমার বাড়ী আমার খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আমতলী শাখায় ৯ হাজার ৫’শ উপকার ভোগী রয়েছে। তারা ওই ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণ পেয়েছেন। এটি সাধারণ মানুষের কাছে দরিদ্রের ব্যাংক নামে পরিচিত।
আমতলীর উন্নয়নে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ বাহিনীর ভুমিকা অপরিসীম। গত এক বছরে আমতলী পুলিশ ৭ কেজি ২’শ ৪৫ গ্রাম গাজা, ১ হাজার ৫’শ৩৩ পিস ইয়াবা, ৬ লিটার চোলাইমদ, ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করেছেন। আইন শৃংঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে রেখেছে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা। গত এক বছরে ১ হাজার ২০ জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেফতার করা হয়। করোনা কালীন সময়ে আর্থিক অনুদানসহ জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রাণঘাতী করোনা হাত থেকে মানুষকে রক্ষায় নিরলশভাবে কাজ করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আমতলীর ৮ জনকে দাফনের ব্যবস্থা করে থানা পুলিশ। করোনা রোগীতে দাফন করতে গিয়ে আমতলী থানার এক এসআই মারা যান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার।
বর্তমান সরকারের এ সকল উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ড তুলে ধরতে আমতলী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুই দিন ব্যাপী উন্নয়ন মেলার আয়োজন করে। এ উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করেন ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান। রবিবার এ উন্নয়ন মেলা ঘুরে সরকারের উন্নয়নে এ সকল চিত্র নিশ্চিত দেখা গেছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহনের পর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসায় ব্যপক উন্নয়ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। তার সেই চেষ্টার ফসল আজ বাংলাদেশ  স্বল্লোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ । আজ বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে হিসেবে বিশে^র বুকে মাথা তুলে দাড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুসারে গ্রাম হবে শহর। সেই লক্ষে তিনি কাজ করছেন। আমতলী উপজেলায় ৪’শ ২ জন গৃহহীন মানুষ পাকাঘর  পেয়েছে। উপজেলার প্রতিটি সেক্টরে ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতেই দুইদিন ব্যাপী উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৪:০১ ● ১৫০১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ