কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় এবারে কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন শত শত কৃষক। শুধু মাত্র কলাপাড়া উপজেলায় এবার ৫০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৪ টন উৎপাদন হয়েছে এমনটাই নিশ্চিত করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
এ এলাকার কৃষকরা গত কয়েক বছরে বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় এবারে কৃষকরা মরিচ চাষে ঝুঁকে পড়ছে। দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে মরিচের চাষাবাদ। ভাগ্য ফেরানোর যুদ্ধে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে এখানকার কৃষকরা। তবে ক্ষোভের সুরে তারা বলেন, পর্যাপ্ত পানির অভাবে ভোগান্তীতে তারা। খালগুলো মরে যাওয়া ও পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তারা গাছে ঠিকমত সেচ দিতে পারছেন না। এতে ফলন কম হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে স্থানীয় বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচ বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। এ বছর বাম্পার ফলন হওয়া স্বত্ত্বেও দাম কম পাওয়ায় হতাশার দোলাচলে এ অঞ্চলের কৃষকরা।
বৃহস্পতিবার মহিপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা কাচা মরিচ নিয়ে বাজারে এসেছেন। এলাকার পাইকাররা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। কেউ আবার সরাসরি দেশের বিভিন্ন আড়ৎদারের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সপ্তাহে ১ দিন বাজার বসে এখানে। এই দিনে ৫ থেকে ১০টি ট্রাক কাচা মরিচ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪০ টনের মত কাঁচা মরিচ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। কুয়াকাটা, ধুলাসার, গঙ্গামতি, নীলগঞ্জ, মহিপুর, আলীপুর, লতাচাপলীসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ক্ষেত থেকে ক্রয় করছে কাচা মরিচ।
লতাচাপলি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আফজাল ভদ্র জানান, ‘এবারে তিনি ৪একর জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। বর্তমানে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ২০-২৫ টাকা। মন বিক্রি হয় ৮০০ টাকায়। এতে খরচের টাকা উঠানো কষ্টকর। এ পর্যন্ত তিনি সার, ঔষধ ও পানিসেচ বাবদ ৩ লক্ষ খরচ করেছেন। তিনি আশা করছেন ন্যায্য দাম পেলে ৫ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।’
থঞ্জুপাড়া গ্রামের কৃষক মো.মাসুম বিল্লাহ জানান, এ এলাকার জমি বেলে মাটি। যার কারণে বিন্দু মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। তবে এখানকার কৃষকরা জিরা, বাঁশগাড়াসহ নানা জাতের মরিচের আবাদ করছেন। এবারে তিনি ২ একর জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। এ যাবৎ তাঁর প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
নয়াপাড়ার চাষি মো. মাহবুব ভদ্র বলেন, ‘প্রায় ৪ মাস আগে ৩ একর জমিতে মরিচ চাষ শুরু করেছি। কঠোর পরিশ্রম করার পরে ক্ষেতে বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিয়মিত সার দেয়া, নিড়ানী দিয়ে ক্ষেত পরিষ্কার করার পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আমার পুরো ক্ষেতের মরিচ সঠিক দামে বিক্রি করতে পারলে ৪ লক্ষ টাকার মত বিক্রি করতে পারবো।
সরেজমিনে জানা গেছে, মরিচ উৎপাদনে এলাকার কৃষকদের পাশাপাশী নারি শ্রমিকসহ নানা মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে। মরিচ ক্ষেত থেকে কাচা মরিচ ভেঙ্গে দিলে মণ প্রতি ১০০ টাকা আয় করতে পারে একজন নারী শ্রমিক। একজন নারি শ্রমিক দিনে ৪শত টাকার মত আয় করতে পারে। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও পানি সেচের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তীতে এখানকার কৃষকরা। সরকার যদি সরকারী খাস পুকুর ও খালগুলো খনন করে দেয় তাহলে রবি শষ্যের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন এখানকার কৃষকরা।
পাখিমারা বাজারের কাচা মরিচ ব্যবসায়ী আবু তালেব বলেন, ‘১ সপ্তাহ ধরে কাচা মরিচ বাজারে উঠা শুরু করছে। আমরা পাইকারী ৮০০-৯০০ টাকায় স্থানীয় ভাবে ক্রয় করে বরিশাল আড়ৎদারের কাছে পাঠাই।’
মহিপুরের স্থানীয় আড়তদার রাকিব বলেন, ‘লতাচাপলী ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণে মরিচ উৎপাদন হয় এখানকার কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে আমরা পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করি। গত এক সপ্তাহ ধরে বাজার শুরু হলেও আরও ৩ মাস যাবত চলবে। এই হাটে স্থানীয় কৃষক ছাড়াও পার্শবর্তী ইউনিয়নের লোকজন কাচা মরিচ নিয়ে আসে। ’
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মন্নান জানান, এ উপজেলার পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাল খনন শুরু হয়েছে। যে এলাকায় খাল নেই সে এলাকাতে সরকারী খাস পুকুর কাটার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুকুর খনন করার জন্য খাস জমি খোঁজা হচ্ছে। যাতে কৃষকদের স্বার্থে শুকনা মৌসুমে পানি ধরে রাখা যায়।
কেএস/এমআর