কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥
বৈশি^ক জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় দেশের সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৫টি জেলার ৮টি উপজেলায় ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত চার বছর ধরে সরকারের সাতটি বিভাগ, দফতর ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত ভাবে বাস্তবায়িত ‘বাংলাদেশের উপকূলীয় বনায়ন ও পুনঃবনায়নে কমিউনিটি ভিত্তিক অভিযোজন (আইসিবিএএআর)’ প্রকল্পের শিক্ষণ ও সমাপনী কৌশল নির্ধারণে দু’দিনব্যাপী এক কর্মশালা উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটায় শনিবার (২০ মার্চ) দুপুরে শুরু হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি, বিশেষ অতিথি ছিলেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী। কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বরিশালের উপকূলীয় বন সংরক্ষক হারুন অর রশিদ খান। ইউএনডিপির প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট আরিফ এম ফয়সাল ও প্রকল্প পরিচালকদের পক্ষে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজুল হক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রকল্পের অগ্রগতির ওপর প্রেজেন্টেশন করেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডক্টর মোঃ মোজাম্মেল হক, মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন কর্মকর্তা এরিক শামা প্রমা ও কমিউনিকেশন্স কর্মকর্তা কবীর হোসেন।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সমন্বয় ও জাতি সংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (্ইউএনডিপি) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বন অধিদফতর বাস্তবায়িত এ কর্মশালায় উপকূলীয় বন সংরক্ষক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, রেঞ্জকমকর্তা, প্রকল্পভূক্ত ৮টি উপজেলার প্রায় সকল কৃষি, মৎস্য, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), ইউএনডিপি ও প্রকল্প কমকর্তা-কর্মচারী, এনজিও প্রতিনিধি, প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি দুদিনব্যাপী কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেছেন।
আইসিবিএএআর প্রকল্প উপকূলীয় টেকসই সবুজ বেস্টনী নির্মাণে বিগত ৪বছরে প্রচলিত ২ ধরনের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির পরিবর্তে জলবায়ুসহনশীল ১২ধরণের প্রজাতি অন্তুর্ভুক্ত করে ৬৫০হেক্টও পুনঃবনায়ন ও বন বিভাগের কর্মীদের এ বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা, জলবায়ুর কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জলবায়ুসহনশীল, প্রকৃতি ও প্রতিবেশ ভিত্তিক ও অভিনব জীবিকায়নের মাধ্যমে ৮৬০০ উপকূলীয় পরিবারে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ ভিত্তিক বৈচিত্র্যময় জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্লুইসগেইট সংস্কার ও খাল খনন করে লক্ষাধিক পরিবারকে জলবায়ুর অভিযোজনের আওতায় নিয়ে এসেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ৬০০০ স্বেচ্ছাসেবীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও উপযোগী যোগাযোগ ও উদ্ধার উপকরণ সরবরাহ করে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় থেকে উপকূলবাসীর জীবন মান সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। ফলে তারা আমফান বুলবুলসহ সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় সমূহ সফলতার সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও গবাদি পশুর দুর্যোগকালীন নিরাপত্তায় মাটির কিল্লা নির্মান করা হয়েছে।
জনাব জিয়াউল হাসান তার বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলার সাড়ে তিন কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা, সময়-অসময় বৃষ্টিপাত, খরা, বন্যা ও নদী ভাঙনসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় কৃষি, মৎস্য, প্রাণি সম্পদ বিভাগের জীবিকায়ন কর্মকা- সমূহ স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হাজার হাজার মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হিসেবে শহরমুখী হচ্ছে ও শহরের উপর মানুষের চাপ বেড়ে যাচ্ছে।
এমইউএম/এমআর