আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দুই প্রার্থী একই স্থান গোজখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে সভা আহবান করায় আইন শৃংখলা রক্ষায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান সোমবার দুপুরে এ আদেশ জারি করেন। সোমবার বিকেল ৩ টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।
জানাগেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ১১ এপ্রিল। ওই নির্বাচনের আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়নের জন্য উপজেলা আওয়ামীলীগ গত ৬ মার্চ তৃণমুল সভা আহবান করে। ওই সভায় বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম ৪৬ ভোট পেয়ে প্রথম হন। কিন্তু তিনি দলীয় নীতি নির্ধারনী সভায় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। গত ১০ বছর ধরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তিনি ইউনিয়নের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে যান। তার এ মনোনয়ন বঞ্চিতের খবর তার সমর্থকরা মেনে নিতে পারেনি। সোমবার বিকেলে ইউনিয়নের গোজখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে তার সমর্থকদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আহবান করে। ওই অনুসারে গত রবিবার বিকেলে চেয়ারম্যানের নামে ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়। এদিকে সোমবার সকালে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলামকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য ইউনিয়ন যুবলীগ ও তার সমর্থকরা একই স্থানে সভা আহবান করেন। ওই সভা সফল করতে ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি কামাল হোসেন মৃধার নামে সোমবার দুপুরে মাইকিং করা হয়। অভিযোগ রয়েছে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী এইচএম মনিরুল ইসলামের সমর্থকরা বর্তমান চেয়ারম্যানের সভাকে পন্ড করতে সকাল থেকে সংবর্ধনার নামে মাঠ দখলে অবস্থান নেয়। একই স্থানে দু’প্রার্থী সভা আহবান করার বিষয়টি আমতলী উপজেলা প্রশাসন অবগত হন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে গোজখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠসহ তার আশ-পাশের ২০০ গজের মধ্যে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। ওই নিষেধাজ্ঞা সোমবার বিকেল ৩ টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন মৃধা বলেন, এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়ায় সোমবার বিকেল ৩ টায় গোজখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন যুবলীগ সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে। প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। তবে আমরা অন্যত্র এ সভা করবো।
আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এ্যাভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বর্তমান চেয়ারম্যানের সভা পন্ড করার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় আমাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য ইউনিয়ন যুবলীগ গোজখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এক প্রস্তুতি সভার আয়োজন করেছে। ওই একই স্থানে বর্তমান চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম পাল্টা সভার আয়োজন করেছে। এ বিষয়টি আমি প্রশাসনকে অবহিত করেছি। প্রশাসন সভা স্থলে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমার সভা স্থগিত করেছি।
বর্তমান চেয়ারম্যান ও গুলিশাখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, সোমবার বিকেল ৩ টায় গোজখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আমার কর্মী-সমর্থকরা এক মতবিনময় সভার আহবান করে। ওই সভাকে সফল করতে গতকাল (রবিবার) বিকেলে মাইকিং করা হয়। আমার এ মাইকিং শুনে আমার সভা পন্ড করতে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি ইউনিয়ন যুবলীগের নামে এক সংবধর্না সভার আয়োজন করেছে। যা অত্যান্ত দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় আমি ওই স্থানের সভা স্থগিত করেছি।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোজখালী স্কুল মাঠে দুই প্রার্থী সভা আহবান করেছে। আইন শৃংখলা রক্ষায় এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছি। তিনি ওই স্থানে উভয় পক্ষের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। তিনি আরো বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, দুই প্রার্থী একই স্থানে সভা আহবান করায় আইন শৃংখলা রক্ষায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তাই সোমবার বিকেল ৩ টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত গোজখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ ও তার আশ-পাশের ২শ’ গজের সকল ধরনের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এমএইচকে/এমআর