মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া সাগরকন্যা অফিস॥
পায়ে পচন ধরে পোকা বের হচ্ছিল। বাম পায়ের গোড়ালি বরাবর পচনের জায়গায় পোকায় ছিল একাকার। হাসপাতালের গেটের দক্ষিণ দিকাটয় ক্লিনিক পাড়া পরিচিত এলাকায় রাস্তার পাশে প্রায় ১৫দিন পড়েছিল বয়োবৃদ্ধা এই মা। পচনের কারণে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। ব্যস্ত সড়কে অপিরিচিত বৃদ্ধার গোঙ্ঘানির শব্দ কারও মনে দাগ কাটেনি। কিন্তু হোটেল বয় মিন্টুর হৃদয়ের চোখে বিষয়টি ধরা পড়ে। নিজেই হাতে পলিথিন পেচিয়ে পায়ের ক্ষতের পোকা দুইদিন পরিষ্কার করেছেন। কিছু ওষুধপত্র দিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তিতে কিংবা চিকিৎসা দিতে অনীহার কারনে ৩৩৩ এ ফোন করেন। এক পর্যায়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হকের সহায়তায় ঠাঁই হয় হাসপাতাালে, তাও ফ্লোরে। অজ্ঞাত হিসেবে ভর্তি হয়। এখানে যা চিকিৎসা তার কিছুটা চলছিল। কিন্তু ভর্তির চার দিন পরে শুক্রবার বিকেলে বৃদ্ধাকে মিন্টু উন্নত চিকিৎসার জন্য এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে রাতে গিয়ে পৌছে ভর্তি করায়। কিন্তু শনিবার দুপুরে মারা যান। কলাপাড়া হাসপাতালে থাকাকালে পায়ের ড্রেসিংএর যাবতীয় ওষুধ কিনে দিয়েছেন মিন্টু। এক খাবার হোটেলের কর্মচারী মিন্টু। কিন্তু বিশাল হৃদয়ের অধিকারী। প্রতিনিয়ত হাসপাতালে চিকিৎসাসহ পরিচর্যার খোঁজ-খবর নিতেন। শনিবার বিকেলে মিন্টু জানায়, হোটেলের বয় হিসেবে চাকরির টাকা এবং ইউএনও সাহেবের দেয়া সহায়তায় এম্বুলেন্স ভাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু বিধাতার অমোঘ নিয়ম পরপারেই চলে গেলেন পরিচয়হীন এই মা। তবে সকল পরিচয়ের শেষ পরিচয় একজন অজ্ঞাত পরিচয় মুমুর্ষু, রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষকে বাঁচানোর যে চেষ্টা হোটেল বয় মিন্টু করেছিল তা যেন তার কাছ থেকে আমাদের অনেকের শেখার রয়েছে।
জানা গেছে, ওখানকার চিকিৎসক ও নার্সদের সঠিক পরিচর্যার অভাবে বৃদ্ধার পঁচন ধরা পায়ের ব্যান্ডেজ থেকে রক্ত ঝড়ছিল। মাছি ভনভন করছে তা বিছানায়। হাসপাতালের সাদা চাদর রক্তে ভিজে গেছে। কেউ ছিল না তার পাশে। পঁচন ধরা পা থেকে দূর্গন্ধে হাসপাতালের অন্য রোগী ও স্বজনরা নাক চেপে চলাচল করলেও কেউ তার দিকে ফিরে তাকায়নি। হোটেলের ডিউটি শেষ প্রতি রাতে মিন্টু ঠিকই হাসপাতালে গিয়ে তার পায়ে ড্রেসিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু তার কি সমস্যা, কি কারনে পঁচন ধরেছে এ বিষয়টি কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেননি চিকিৎসকরা। বরং তাকে কিছু এ্যান্টিবায়েটিক ও ব্যাথা নাশক ওষুধ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন । মানুষের প্রশ্ন? যদি স্বচ্ছল কোন রোগী থাকত তাইলে চিকিৎসকরা পরীক্ষার (টেস্ট) ফর্দ লিখে নির্দিষ্ট ল্যাবের একটি কার্ড ধরিয়ে দিতেন। তবে চিকিৎসক জেএইচ খান লেলিন জানান, আসলে এই বৃদ্ধার আগেই দরকার ছিল উন্নত চিকিৎসা। যা কলাপাড়ায় ছিল না। বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানো মিন্টু জানান, ইউএনও সাহেব যদি তাঁকে এই সহায়তা না করতেন আর নিজে যদি উদ্যোগ না নিতেন হয়তো ওই বৃদ্ধা রাস্তায় মরে থাকত। এখনও বাঁচেনি; তারপরও চেষ্টা চলছিল চিকিৎসা সেবা দেয়ার। মিন্টুর ভাষ্য, ‘ ওই মানুষটিও তো কারও না কারও মা। বাচানো যায়নি ঠিকই। কিন্তু মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন হোটেল বয় মিন্টু। কিছুটা হলেও চিকিৎসা সেবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
এমইউএম/এমআর