সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
জার্মান সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং ডব্লিউএইচও আয়োজিত ‘হেলথ ইন ক্রাইসিস-ডব্লিউএইচও কেয়ার্স’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় সম্পদ ও সামর্থ্যরে অপ্রতুলতায় বড় ধরনের সংকটগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) প্রায়ই ভুল পদপে নিতে দেখা যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদ ও সামর্থ্যরে অপ্রতুলতায় বড় ধরনের সংকটগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে প্রায়ই ভুল পদপে নিতে দেখা যায়। সুতরাং উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আর্থিক সহায়তা জরুরি। তিনি বলেন, সবার জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্য এবং সুখী জীবন নিশ্চিতে আমাদের প্রধান মানবিক সংগঠন হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার সদস্য দেশগুলোসহ বিভিন্ন সংস্থার প থেকে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সহযোগিতা এবং সম্পৃক্ততা ন্যায়সঙ্গতভাবেই প্রাপ্য। টেকসই বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য উচ্চ পর্যায়ের অঙ্গীকার এবং নিবিড় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ইবোলা, কলেরা, যার মতো সংক্রামক রোগের মহামারী থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকায়ন এবং উন্নত করার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এক সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজন, উন্নত প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। বিশেষ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া, অসহায় ও অরতি জনগোষ্ঠীর জন্য। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে। বিশ্ব সংগঠন হিসেবে ডব্লিউএইচও সব দেশকে সম্পৃক্ত করতে পারে এবং সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এসডিজি ল্যমাত্রা-৩সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যান্য ল্যামাত্রাগুলো অর্জনে কার্যকর, ফলাফলভিত্তিক আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে একটি। সুতরাং এর ওপর আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য সেক্টরে প্রযুক্তগত উৎকর্ষ সত্ত্বেও মানুষ এখনও বিভিন্ন রোগে ভুগছে। এটা দুর্ভাগ্যের, আমরা এখনও আমাদের মানুষগুলোর জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। যেখানে এসডিজি-৩ এ আমরা স্বাস্থ্য অধিকারকে আমরা মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছি। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদপে প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীতি নির্ধারণ এবং অর্থনৈতিক সহায়তাসহ ক্রমাগত আমরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের মানুষের আর্ত-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্বাস্থ্য সেক্টরের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ‘স্বল্প খরচে ভালো স্বাস্থ্য’ বাংলাদেশ এখন এই রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন সফলতার কথা তুলে ধরে টানা তিনবারসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাতৃমৃত্যু হার প্রতি ১ লরে মধ্যে ১৭২ জনে নামিয়ে এনেছি। নবজাতক শিশু মৃত্যুহার ১ হাজার জনের মধ্যে ২৪ জনে নামিয়ে এনেছি। ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার ১ হাজার জনের মধ্যে ৩১ জনে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ সব ধরনের প্রতিষেধক টিকার আওতায় এসেছে। গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৮ বছরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। যা ও কুষ্ঠরোগ নির্মূলে বাংলাদেশ প্রশংসীয় সফলতা অর্জন করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এবং স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সবার জন্য স্বাস্থ্য, প্রাইমারি হেলথ কেয়ার, এসেনশিয়াল সেবা প্যাকেজসহ সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। আমাদের সরকার সাড়ে ১৮ হাজারের বেশি কমিউনিটি কিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে, ইউনিয়ন হেলথ কেয়ার, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামীণ ও কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছি। এসব কিনিক থেকে বিনা মূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য খাত নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমরা সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বহুমুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে এক বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের সম্পূর্ণ বিনেমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া। এমডিজি ল্যমাত্রা অর্জনসহ স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সেক্টরে পাশে থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য ডব্লিউএইচও প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, বিভিন্ন প্রতিষেধক টিকা প্রদান কর্মসূচি, এইচআইভি প্রতিরোধ, ম্যালেরিয়া, যা, বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকসহ জরুরি এলাকাগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাজের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
কঙ্গো, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, সাউথ সুদান, নিরিয়া, ইয়ামেন এবং লিবিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন তিনি। সফরে দ্বিতীয় কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াসহ দ্বিপাকি বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নেবেন।
এফএন/কেএস