আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী পৌরসভার বঙ্গবন্ধু সড়কের নিখোঁজ বাবা মানসুর কবির ও মা মানষিক ভারসাম্যহীন মরিয়মের একমাত্র এতিম কন্যা ফাতেমাতুজ জোহরা মীমের সম্পতি দখলের পায়তারা ও ভয়ভীতি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতিম মীমের মামা আমিনুল ইসলাম খোকন ও আবদুস সাকুর এ সম্পত্তির দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেন অভিযোগ করেন মীম। এতিম মীমকে ঘর থেকে তাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত মামাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী এসে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রবিবার রাতে ওই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালায় খোকন ও সাকুরের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী। সোমবার (৮ মার্চ) সকালে আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়নে মীম লিখিত এমন অভিযোগ করেন। সাবেক কাউন্সিলর মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌসসহ স্থানীয় লোকজনের সহযোগীয় রক্ষা পায় মীম। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জীবনের নিরাপত্তা দাবী করেছেন মীম ও তার স্বামী সাইফুর রহমান রাফি।
জানাগেছে, ২০০০ সালে ফাতোমাতুজ জোহরা মীমকে ৩ বছরের শিশু রেখে বাবা মানসুর আহম্মেদ কবির নিখোঁজ হয়। গত ২০ বছরে তার কোন সন্ধ্যান মিলেনি। স্বামী নিখোঁজের শোকে মা মরিয়ম বেগম মানষিক ভারসাম্য হয়ে পড়ে। ওই সময় থেকে মীম নানা আলহাজ¦ ইউনুস মিয়ার কাছে লালিত-পালিত হয়। ২০০৮ সালে নানা আলহাজ¦ ইউনুস মিয়া নানতি মীমের নামে দলিল মুলে দোকান ঘরসহ পাঁচ শতাংশ জমি লিখে দেন। ওই জমিতে মীম স্বামী সাইফুর রহমান রাফিকে নিয়ে বসবাস করে আসছে। ২০১৭ সালে নানা মোঃ ইউনুস মিয়া মারা যান। নানার মৃত্যুর পরে নেমে আমে মীমের উপর অমানষিক নির্যাতন। প্রতিনিয়ত মীমের সম্পত্তি দখলের জন্য দুই মামা তাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হয়রানী করে আসছেন। মীমকে তুলে নেয়ার জন্য প্রতিদিন রাতে ঘরের চারিপাশে সন্ত্রাসীরা পাহারা দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ঘর থেকে বের হলেই মামাদের পালিত সন্ত্রাসীরা মীমকে তুলে নিয়ে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মীম। মীমকে হত্যা করতে পারলেই তার সকল সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারবে মামারা। রবিবার রাত ১০ টার দিকে মীম ও তার স্বামী সাইফুর রহমান রাফি ঘরের মধ্যে ছিল। এমন মুহুর্তে মামা খোকন ও সাকুরের পালিত ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী এসে ঘর ও জমি দখলের চেষ্টা করে এবং মীম ও তার স্বামী রাফিকে ভয়ভীতি দেখায় । খবর পেয়ে সাবেক কাউন্সিলর মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌসসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত হয়। লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে দুই মামাসহ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
আমতলী পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোঃ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, রাতে মীমকে সন্ত্রাসীরা এসে ভয়ভীতি দেখানোর খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি সন্ত্রাসীরা মীমের বাড়ীর চারিদিকে পাহারা দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমার উপস্থিতি টের পেয়ে মীমের দুই মামা ও সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
ফাতেমাতুজ জোহরা মীম কান্না জনিত কন্ঠে বলেন, আমাকে তিন বছরের শিশু রেখে বাবা নিখোজ হয়। গত ২০ বছরে বাবার কোন সন্ধ্যান পাইনি। বাবার শোকে মা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। মামা খোকন ও সাকুর মাকে পাগল আখ্যা দিয়ে গত ১২ বছর ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে আটকে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে নানা আমাকে দোকান ঘরসহ ৫ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছেন। ওই জমি ও ঘর দখলের জন্য মামারা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে হয়রানী করছে। আমি ঘর থেকে বের হতে পারি না। ঘর থেকে বের হলেই সন্ত্রাসীরা আমাকে তুলে নিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাকে মেরে ফেলতে পারলেই মামারা আমার সমুদয় সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারবে। রবিবার রাতে আমার দুই মামা ১০-১২ জন সন্ত্রাসী পাঠিয়ে আমাকে মেরে ফেলার জন্য হুমকি দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা চাই।
প্রবাসী মামা আমিনুল ইসলাম খোকন ভয়ভীতি দেখানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, একটি বাসায় লোকজন যেতেই পারে। আমি একটি মাদ্রাসায় মিটিংয়ে আছি বলে ফোন রেখে দেন।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, মীমের সাথে মামাদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তবে গতকাল রাতের বিষয়টি আমি অবগত নই। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর