কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
লোনা পানির দুই দফা প্লাবনে চার গ্রামের শতাধিক কৃষকের রবিশস্যের সর্বনাশ হয়ে গেছে। মরে যাচ্ছে শস্যের গাছসহ রবি ফসল। কৃষকের দাবি তাঁদের অন্তত কয়েক কোটি টাকার ফসলহানি ঘটেছে।
লক্ষ্মীর বাজার দুই ভেন্টের নির্মাণাধীন স্লুইসের গেট না করার আগেই রিভার সাইডের বাঁধ কেটে দেয়ায় লোনা পানির প্লাবনে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরের কৃষকের এমন সর্বনাশ হয়ে গেছে। কৃষকের তরমুজ, মরিচ, মিস্টি কুমড়ো, আলুসহ ডাল জাতীয় সকল শস্য নষ্ট হয়ে গেছে। ফলন্ত গাছগুলো মরে যাওয়ায় কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে গেছে। লোনা পানিতে ফসলের ক্ষেত রিচার্জ হয়ে যাওয়ায় এখন ফসলের গাছগুলো মরে নেতিয়ে গেছে। চারদিন আগের পুর্ণিমার জোতে লতাচাপলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীর হাঁট স্লুইসের বাঁধ কেটে দেয়ায় কৃষকের এমন ক্ষতি হয়ে গেছে। সেখানকার মিশ্রিপাড়া, নয়া মিশ্রিপাড়া, ডঙ্কুপাড়া ও আজিমপুর গ্রামের কৃষকের এমন সর্বনাশ হয়ে গেছে।
কৃষকের দাবি পরিকল্পিতভাবে বাঁধটি কেটে দেয়া হয়েছে। যদিও একদিন আগে বাঁধটি ফের মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। উল্লেখ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৮ নম্বর পোল্ডারের প্রায় ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের পুনরাকৃতিকরণের কাজ চলমান রয়েছে। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প একাজ করছে। আগেই পোল্ডারের স্লুইসগুলো মেরামত ও পূনঃনির্মাণ করছে। বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে যেন লোনা পানি প্রবেশ করতে না পারে এ জন্য স্লুইস সংযুক্ত খালের বেড়িবাঁধের রিভার সাইডে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়েছিল। কিন্তু চারদিন আগের পূর্ণিমার জোতে ওই বাঁধ কেটে দিলে বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরের খালে পানিতে একাকার হয়ে যায়। লোনা পানি খালের দুই পাড় উপচে চার গ্রামের কৃষকের রবিশস্যের ক্ষেতও লোনা পানিতে প্লাবিত হয়। কৃষকের ফলন্ত রবিশস্যের গাছগুলো মরে যাচ্ছে। কৃষকরা দাবি করেছেন তাদের কোটি কোটি টাকার ফসলহানি ঘটল।
কৃষক মোঃ জালাল, সালাউদ্দিন, মোঃ আলাউদ্দিন জানালেন, তাঁদের সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। লোনা পানি কমলেও ক্ষেতের লোনা পানি ক্ষেতেই মাটির নিচে রিচার্জ হয়েছে। ফলে এখন ফলন্ত মরিচ, বাদাম, মিস্টি কুমড়া, ডাল জাতীয় ফসল গাছসহ মরে যাচ্ছে। যেহেতু স্লুইসের গেট করা হয়নি। তাই সামনের বাঁধটি কাটা উচিত হয়নি। একদিন আগে বাঁধটি পুনরায় মেরামত করা হলেও কৃষকের এ মৌসুমের সকল ক্ষতি হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছেন। পানি আর যেন প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রকল্পের পরিচালক মহোদয়কে বলবেন। উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক মজিবুর রহমানকে মোবাইল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাঙ্গা বাঁধটি মেরামত করা হয়েছে। লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, ওই বাঁধটি পরিকল্পিতভাবে কেটে দেয়া হয়েছে। কারণ স্লুইসের অভ্যন্তরের যে খালটি গেল বছর খনন করা হয়েছে তা আবার এ বছর নামকাওয়াস্তে খনন দেখানো হয়েছে। তাই রাতের আধারে বাঁধ কেটে লোনা পানির প্রবেশ করানো হয়েছে। যেন খনন দুর্নীতি ঢাকা পড়ে। আর লোনা পানিতে কৃষকের অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়ে গেল। নিঃস্ব হয়ে গেছে শত শত কৃষক। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, তিনি কৃষকের ক্ষতির বিষয়টি পরিদর্শন করেছেন।
এমইউএম/এমআর