ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ব্যতিক্রমী এক অর্জন দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করেছে মহাসড়ক বিভাগ। বাড়েনি প্রকল্পের ব্যয়ও। দ্বিতীয় সেতুটির কাজ সম্পন্ন হলেও সিলেট মহাসড়ক হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে উড়াল সড়ক ব্যবহার করতে হবে। তবে এ উড়াল সড়কের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের তিন পয়েন্টে যানজট কমাতে ২০১৩ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে মহাসড়ক বিভাগ। চলতি বছরের জুনে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। তার পাঁচ মাস আগে জানুয়ারিতেই সম্পন্ন হয়েছে সেতুর নির্মাণ কাজ। আগামি মার্চেই যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিদ্যমান সেতুর সমান্তরালে নির্মাণ করা হয়েছে চার লেনের নতুন সেতু। ৩৯৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে মোট ছয়টি স্প্যানের ওপর। ২০২১ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ করতে চলতি বছরের জুনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সময় বেঁধে দেয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এজন্য বিশেষ উদ্যোগও গ্রহণ করে মহাসড়ক বিভাগ। তবে কাজ শেষ হয়েছে তারও আগে। গত জানুয়ারিতেই প্রধান কাজগুলো শেষ করে ফেলে নির্মাণকারী চার জাপানি ঠিকাদারের জয়েন্ট ভেঞ্চার অসজিজ। এ জয়েন্ট ভেঞ্চারে রয়েছে ওবায়াশি করপোরেশন, শিমিজু করপোরেশন, জেএফই স্টিল করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশন।
প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানান, দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুতে স্টিল শিট পাইল (এসপিএসপি), আরসিসি সিআইপি পাইলের আরসিসি পিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। কাঠামোটি গড়ে তোলা হয়েছে বক্সগার্ড সুপার স্ট্রাকচার প্রযুক্তিতে। নতুন সেতুটির আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। কাঁচপুরে বিদ্যমান পুরনো সেতুটিও চার লেনের। এর সমান্তরালেই নির্মাণ করা হয়েছে চার লেনের নতুন সেতুটি। ফলে ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত প্রবেশমুখ কাঁচপুর সেতুতে চলাচলকারী যানবাহনগুলো পেতে যাচ্ছে আটটি লেন। নতুন সেতুর পাশাপাশি পুরনো সেতুটিও সংস্কার করা হচ্ছে একই প্রকল্পের মাধ্যমে। এর বাইরে কাঁচপুর চার রাস্তায় নির্মাণ করা হচ্ছে একটি ওভারপাস। সদিচ্ছা থাকলে সব প্রকল্পের কাজই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব বলে জানান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম। সড়কটি থেকে ঢাকার প্রবেশমুখে কাঁচপুর সেতু এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। নতুন সেতু হওয়ায় এখন থেকে এ পয়েন্টে নির্বিঘেœ যান চলাচল করতে পারবে। মহাসড়কটির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি শিডিউল মেনে কাজ করতে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য জাপানি প্রকৌশলীদের কৃতিত্ব দিতেই হচ্ছে। পাশাপাশি সরকার ও মন্ত্রণালয় থেকেও আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারায় আমরা আনন্দিত। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কাঁচপুর সেতু ও মেঘনা নদীর ওপর মেঘনা সেতু এবং কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ওপর গোমতী সেতু তিনটি অপ্রশস্ত হওয়ার কারণে চার লেনের পূর্ণাঙ্গ সুফল পাওয়া যায়নি। সড়কপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ১৯২ কিলোমিটার। এ দূরত্ব অতিক্রম করতেই সময় লাগছে ১০-১২ ঘণ্টা। এ তিন সেতু এলাকায় প্রায়ই লেগে থাকে তীব্র যানজট। নূন্যতম ৩০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে একেকটি সেতু পার হতে। যদিও এ তিনটি সেতু সম্প্রসারণের বিষয়টি আগে থেকেই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পরিকল্পনায় ছিল। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালে আলাদা প্রকল্পে একযোগে শুরু হয় সেতুগুলোর নির্মাণকাজ। সব সেতুর কাজই শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে সবার আগে শেষ হলো দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর নির্মাণকাজ।
সরেজমিন দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুতে দেখা যায়, ঝকঝকে সেতুটি উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। চার লেনের মাঝখানে বসেছে সড়ক বিভাজক। পথচারীদের জন্য আছে প্রশস্ত ওয়াকওয়ে। সড়কের ধারে লাগানো সবুজ ঘাস দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে সেতুটিকে। সেতুর সংযোগ সড়কও উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। চার রাস্তায় নির্মাণাধীন ওভারপাসটির কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। বর্তমানে পুরনো সেতুর ওপর দিয়ে চলছে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী সব যানবাহন। কাঁচপুর সেতুর প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, নতুন সেতুটি চালু হলে পুরনো সেতুটি বন্ধ রেখে সংস্কারকাজ শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এজন্য কৃতিত্ব দেন দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক রেহানা হক। তিনি বলেন, জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো শুরু থেকেই নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী কাজ করেছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় (সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) সবসময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছে। নির্মাতা, প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, শ্রমিকÑসবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতুর কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করতে পেরেছি। দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর ৮৪ ও দ্বিতীয় গোমতী সেতুর ৮২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামি মে মাস নাগাদ এ দুই সেতুও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
এফএন/এমআর