চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আগামী ২৮ফেব্রুয়ারী পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভোলার চরফ্যাশন পৌরসভা নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. মোরশেদ (নৌকা) ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হুমায়ুন কবির শিকদার (ধানের শীষ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শরীফ নির্বাচনী মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। পাড়া-মহল্লার বয়ঃবৃদ্ধসহ তরুণ যুবক এবং নারী ভোটারদের কাছে সালাম বিনিময়ে ভোট চেয়ে নানান প্রতিশ্রুতিতে লিপলেট বিতরণ করছেন এসব প্রার্থীরা। এছাড়াও পৌর শহর জুড়ে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টার।
যাচাই বাছাই শেষে ৩মেয়র ও ৩৩ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৭জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকেই এ প্রচারণা শুরু করেন। তবে ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডের ৩জন কাউন্সিলর পদ প্রার্থী ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচীত হওয়ায় উপজেলা নির্বাচন অফিস ওই প্রার্থীদের হাতে বিজয় কার্ড তুলে দেন বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে।
নগরভিত্তিক স্থানিয় সরকার সংস্থা চরফ্যাশন পৌরসভা ১৯৯০সালের ১৭নভেম্বর ‘গ’ শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যা পরবর্তীতে পর্যায় ক্রমে “খ’ ও সর্বশেষ “ক’ শ্রেণীতে উন্নিত হয়ে স্থানীয় নাগরিকদের জীবন যাপনে সেবার মান বাড়িয়ে দেয়।
৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ১৯.৫ বর্গ কিলোমিটারের ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নিত হওয়া এই পৌরসভায় প্রায় ৪০হাজার বাসিন্দার মধ্যে ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫৭১জন। আর এ স্থানিয় সরকার সংস্থার মেয়রের চেয়ারে ৯জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৩জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নিয়ে ১জন নির্বাচীত যোগ্য মেয়রকে বসাতে পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিবেন বলে আশাবাদী নতুন এসব ভোটাররা ।
এসব ভোটারদের দ্বারে দ্বারে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী এসএম মোরশেদ নৌকা, বিএনপি প্রার্থী হুমায়ুন কবির ধানের শীষ ও স্বতন্ত্র মেয়র পদ প্রার্থী মির মোহাম্মদ শরীফ নারকেল গাছসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রতীক নিয়ে নানান প্রতিশ্রুতিতে ভোট চাইছেন।
জাতীয় নির্বাচনের মতো পৌরসভা নির্বাচনেও আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচনী মাঠে নামলেও দ্বিধাদন্দ্ব আর গ্রুপিং এর রাজনীতিতে বিএনপি পিছিয়ে থাকায় অদৃশ্য তৃতীয় দলের সুযোগ নিচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে জামায়েতে ইসলাম সরাসরি পৌরসভা নির্বাচনেও হস্তক্ষেপ নাকরলেও নিভৃত কাজ করছেন পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে। এমনটাই বলছেন উপজেলার রাজনৈতিক বিশ্লেকগণ। সাড়া বাংলাদেশে উন্নয়ন ও নৌকা মার্কার জয়জয়কার থাকায় চরফ্যাশনেও শুধু পৌরসভা নির্বাচনই নয় আগামী ইউপি নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক নৌকার জয় হতে পাড়ে যা এক কৌশলের রাজনৈতিক ইঙ্গিত করেন এসব বিশ্লেষকরা।
এবারের পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মনোনীত মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলে ও যাচাই বাছাই শেষে বৈধ তা পাওয়ার পরেও নির্বাচন করবেন না বলে তিনি তা প্রত্যাহার করে নেন। আবার ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর তথ্য যাচাই বাছাই শেষে আপিল বিভাগেও বাতিল হয়ে যায়। তবে বিএনপি মনোনিত প্রার্থীর উল্লেখিত আয়কর তথ্য যাচাই বাছাই শেষে চরফ্যাশন উপজেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় প্রাথমিক ভাবে বাতিল করলেও বিএনপি প্রার্থী’র আপিলে তাদের মনোনয়ন বৈধতা পায়।
বিশ্লেষকগণ বলছেন, বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলেও ক্ষমতায় আসার জন্য তৃণমূলকে গোছাতেই উপজেলা ও পৌরসভাসহ ইউপি নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তাদের প্রার্থী দিচ্ছেন। তবে বিএনপি ক্ষমতার বাহিরে থাকলেও কেন্দ্রের রাজনীতিতে শৃঙখলার অভাবে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রুপিং ছড়িয়ে পড়ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র এক পৌরবাসিন্দা বলেন, চরফ্যাশনে সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম একচ্ছত্র রাজনীতি করলেও বর্তমানে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন চরফ্যাশনের স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম নয়ন। যিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকায় দলের হাই কমান্ডের সু-নজরে রয়েছেন। আর তাই তিনিও চরফ্যাশন ও মনপুরা তথা ভোলা-৪ আসনের রাজনীতিতে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতেতারপছন্দের ব্যক্তি হিসেবে হুমায়ুন কবির শিকদারকে বাছাই করেন। আর তাই হুমায়ুন কবিরকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে হাই কমান্ডে সুপারিস করেন। তবে বিএনপি’র সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম সাবেক মেয়র আমিরুল ইসলাম মিন্টিজকে ধানের শীষ প্রতীকে দলীয় ভাবে মনোনীত করতে বাছাই করলেও দল তাকে মনোনীত না করে নুরুল ইসলাম নয়ন গ্রুপের মনোনীত ব্যক্তি হুমায়ুন কবির শিকদারকেই ধানের শীষ প্রতীকে মনোনীত করে।
স্থানীয় বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল-ইসলাম জ্যাকব চরফ্যাশন ও মনপুরায় হাজার,হাজার কোটি টাকার বিষ্মিত উন্নয়ন করেছেন। যার প্রতিফলনে পৌরবাসীন্দারা উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম মোরশেদকেই ভোট দিয়ে ৪০হাজার পৌরবাসীন্দার উন্নয়ন আরও প্রসারিত করবে বলে পৌরসভার একাধীক ভোটার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. মোরশেদ বলেন, একটি এ-গ্রেড পৌরসভার হাজার হাজার পৌরনাগরীকের কাছে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন সহায়তা এবং দরিদ্র ও অসহায় পৌরনাগরিকদেরকে সমাজের মূল ধ্বারায় অন্তর্ভূক্ত করতে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি। এছাড়াও চরফ্যাশন উপজেলাটি একটি পর্যটন নগর হওয়ায় এ অঞ্চল ভবিষ্যতের জন্য এক অপার সম্ভাবনাময় আর তাই প্রতি সপ্তাহে হাজার, হাজার পর্যটক চরফ্যাশনে আসছে। ফলে উন্নত শহর ব্যবস্থাপনা ও নতুন আঙ্গীকে পর্যটকদের জন্য নির্মিত অবকাঠামো, জ্যাকব ওয়াটস টাওয়ার, ফ্যাসন স্কয়ার, শিশুবিনোদন পার্কসহ অন্যান্য পর্যটন স্থাপনার ব্যবস্থাপনাও রয়েছে এ পৌরসভার অধিনে। আর তাই পৌরনাগরীকদের পাশাপাশি পর্যটকদের সেবাকেও অগ্রাধীকার দিয়ে সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণ, রাস্তাঘাটের খানাখন্দ সংস্কার ও নতুন সড়ক নির্মাণসহ আবাসিক এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সরকারের নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি। এবং আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপির চরফ্যাশনের উন্নয়নকে আরও তরান্বিত করতে উপজেলা আওয়ামীলীগ আমাকে দলীয় ভাবে সনাক্ত করেন। যার ফলে দল আমাকে আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কার্যক্রম বিবেচনা করে দলীয় প্রতিকে মনোনীত করেছে। যেন প্রধানমন্ত্রী’র পক্ষে এলাকাবাসীর সুখে দুঃখে পাশে থাকতে পারি।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মির মোহাম্মদ শরীফ বলেন, চরফ্যাশন পৌরসভাকে মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত করে গড়ে তুলতে এবং সরকারের উন্নয়নকে আরও তরান্বিত করতে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। আর তাই জনগণ অবাধ সুষ্ঠ ভোটের পরিবেশ হলে আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে বলে আমি আশাবাদী। রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ সুষ্ঠ নির্বাচন আমরা প্রত্যেকেই কামনা করি। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠ রয়েছে। নির্বাচনী আচরণ ও নীতিমালা কেউ যেন ভঙ্গ না করেন এজন্য নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি ভ্র্যাম্যমান আদালতের টিম মাঠে রয়েছে। নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে জরিমাানা করা হচ্ছে। প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তায় নির্দিষ্ট বাহিনী মোতায়েন থাকবে এ নির্বাচনে। আসন্ন চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাচনে ইলেক্ট্রীক ভোটিং ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এএইচ/এমআর