ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
চার মাসের ব্যবধানে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অং কোয়াকে আবারো তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) তাকে তলব করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত দেখানোয় তাকে (মিয়ানমার রাষ্ট্রদূত) বেলা সাড়ে তিনটায় মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন তাকে তলব করেন। এ সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপকে কেন তাদের একটি সরকারি দফতরের মানচিত্রে দেখানো হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। তার হাতে একটি কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে ৬ অক্টোবর ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ কে একই বিষয়ে তলব করা হয়েছিল। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, মিয়ানমারের ওই দফতরের মানচিত্র থেকে এটা সরিয়ে নেওয়া নেওয়া হবে। তবে এতোদিনেও সেটা সরিয়ে নেওয়া হয়নি।
রাখাইনে শিগগিরই সদর দফতর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আরাকান আর্মির: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শিগগিরই অস্থায়ী একটি সদর দফতর নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি। আরাকানি জনগণের উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাখাইন নৃগোষ্ঠীর (আরাকানি) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এ সংগঠনের প্রধান মেজর জেনারেল তুন মিয়াত নাইং এ ঘোষণা দিয়েছেন। উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে সরকারি সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠনটির সংঘর্ষ চলার মধ্যেই এ ঘোষণা এলো। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। ইতিহাস আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণসহ রাখাইনে সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নকে সামনে রেখে প্রচারণা চালায় আরাকান আর্মি। রাখাইনে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যের তথ্য বারংবার সামনে আনার মধ্য দিয়ে সেখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলছে তারা। কারও ধারণা, এই মুহূর্তে তাদের সদস্য সংখ্যা ৩ হাজার। কেউ আবার মনে করে,৭ হাজার সেনা রয়েছে তাদের। তবে সবাই মানেন,সামরিক শক্তি নয়,তাদের প্রকৃত অস্ত্র আরাকানের জনসাধারণের অকুণ্ঠ সমর্থন।
বিগত ১৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের পুলিশ চৌকিতে আরাকান আর্মির হামলায় ১৩ জন নিহত হওয়ার জবাবে দেশটির সেনাবাহিনী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। তখন থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। ১০ ফেব্রুয়ারি আরাকানি ভাষায় ভিডিও বার্তা দেন আরাকান আর্মির প্রধান তুন মিয়াত নাইং। ইরাবতীর প্রতিবেদনে ওই ভিডিও বার্তাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে তুন মিয়াত নাইং একদন গ্রামবাসীর সামনে বক্তব্য রাখছেন। তিনি ঘোষণা করেন, শিগগিরই রাখাইনে সংগঠনের সদর দফতর গড়ে তোলা হবে। ভিডিওতে দেখা গেছে, বিদেশে থাকা আরাকানি জনগণকে রাখাইন রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিতে তাদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছেন তিনি। ভিডিও বার্তায় তুন মিয়াত নাইং বলেন, ‘আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করি আরাকানি জনগণ ও আরাকান আর্মি একে অপরের পাশাপাশি আছে। আমরা বার বারই সতর্ক আসছি, সরকারি সেনাবাহিনী গোটা আরাকানি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘাতে মেতেছে।’ আরাকান আর্মির প্রধান মপথ নিয়েছেন, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন। আরাকান আর্মির ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভিডিও বার্তাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে ইরাবতী। এ মাসে এ নিয়ে দ্বিতীয় ভিডিও বার্তা দিলো আরাকান আর্মি। এর আগে বিগত সপ্তাহে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন সংগঠনের উপ প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিয়ো তুন অং। ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হওয়া ওই ভিডিওবার্তাটি ধারণ করা হয়েছে আরাকান আর্মির ঘাঁটি কাচিন প্রদেশের লাইজাতে। ভিডিওতে তুন অং দাবি করেছেন,তাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী শত শত সেনা সদস্য হারিয়েছে। সম্মানহানির ভয়ে তারা হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে না। আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে না পেরে এখন তারা আরাকানের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চড়াও হচ্ছে। তিনি আশঙ্কা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দেবে। তারা রাখাইনে সেনাবল বৃদ্ধি করেছে। ফলে সংঘাত উত্তর রাখাইন পেরিয়ে আরও বেশি এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকানিদের ক্ষতি করলে আরাকান আর্মি ‘চোখের বদলে চোখ’ তুলে নেওয়া নীতি অনুসরণ করবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।
এফএন/এমআর