আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দরের শত কোটি টাকার সরকারী জমি বে-দখল হয়ে আছে। চুনাখালী ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) মোঃ আবু জাফরের যোগসাজসে এ জমি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ সভাপতি মোঃ নান্নু ডাক্তারসহ বন্দরের অর্ধশত ব্যাক্তি। সরকার হারাচ্ছেন কোটি টাকার রাজস্ব। দখলদারদের কাছ থেকে দ্রুত সরকারী জমি উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানাগেছে, উপজেলার গাজীপুর বন্দরে ১৯৭০ সালে উপজেলা ভুমি অফিস ৭ একর জমি সরকারী স্থাপনা ও বন্দর উন্নয়নের জন্য অধিগ্রহন করে। ওই বন্দরের ব্যবসায়ীরা দোকান ঘর নির্মাণের জন্য ১’শ ২৬ টি বন্দোবস্তের আবেদন করেন। উপজেলা ভুমি অফিস এ পর্যন্ত ৮৯ জন ব্যবসায়ীকে আধা শতাংশ করে মোট সাড়ে ৪৪ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত দিয়েছেন। ওই হিসেবে সাড়ে ৪৪ শতাংশ জমির রাজস্ব পাচ্ছেন সরকার। অবশিষ্ট ৬ একর সাড়ে ৫৫ শতাংশ জমি বে-দখল অবস্থায় পড়ে থাকে। ওই জমির কোন হদিস পাচ্ছে না উপজেলা ভুমি অফিস। অভিযোগ রয়েছে চুনাখালী ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আবু জাফরের যোগসাজসে এ জমির মধ্যে অন্তত দুই একর জমি আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ সভাপতি মোঃ নান্নু ডাক্তার, তার ভাই হারুন অর রশিদ ডাক্তার, পান্নু ডাক্তার ও সবুজ ডাক্তারসহ তার লোকজন অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খাস জমি স্থানীয় ভুমি খেকোরা জোরপূর্বক দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়ী নির্মাণ করেছেন। এভাবে জমি দখল করে নেয়ায় গত ৫০ বছরে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। দখলবাজ শ্রমিক লীগ সভাপতি নান্নু ডাক্তার তার ভাই পান্নু ডাক্তার মোঃ হারুন অর রশিদ ডাক্তার, সবুজ ডাক্তার, সোহাগ ও তাওহিদসহ তার লোকজন ১৫ টি আধা পাকা ও পাকা ভবন নির্মাণ করে জমি দখল করে আছেন। সরকারী ভাবে ওই জমির কোন বন্দোবস্ত নেয়নি তারা। এদিকে ২০২০ সালে সোহেল রানা, জুয়েল হাওলাদার ও আবু সালেহকে ভুমি অফিস দের শতাংশ বন্দোবস্ত দেয়। ওই জমিতে তারা স্থাপনা নির্মাণ করতে শুরু করে। ওই স্থাপনা নির্মাণে দখলবাজ শ্রমিক লীগ সভাপতি নান্নু ডাক্তার ও তার লোকজন বাঁধা দেয়। দখলবাজদের কারনে তারা স্থাপনা নির্মাণ করতে পারছে না। সরকারী বন্দোবস্ত ছাড়াই ওই বন্দরের আরো অন্তত ৫০ ব্যাক্তির কাছে বন্দরের খাস জমি দখলে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে চুনাখালী ভুমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) মোঃ আবু জাফর সরকারী জমি দখলবাজদের সাথে আতাত করে দখলে সহযোগীতা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তিনি সরকারী জমি বন্দোবস্ত না দিয়ে উল্টো বন্দোবস্ত নিতে আগ্রহী ব্যাক্তিদের নিরুৎসাহী করছেন। তহসিলদার জাফরের কয়েকজন দালাল রয়েছে। ওই দালালরা বন্দরের জমি দখল নিয়ে পজিশন বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাদের থেকে তিনি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ভুমি কর্মকর্তা আবু জাফরকে টাকা দিলেই জমি দখল পাওয়া যায়। তাকে টাকা না দিয়ে গাজীপুর বন্দরে কেউ কাজ করতে পারে না।
গাজীপুর বন্দরের হাবিব হাওলাদার ও কালু মৃধা বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী নান্নু ডাক্তার ও তার ভাই হারুন অর রশিদ ডাক্তার ও সবুজ ডাক্তারসহ তার লোকজন খাস জমিতে ভবন নির্মাণ করে দখলে রেখেছে। আঠারোগাছিয়া ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ সভাপতি মোঃ নান্নু ডাক্তার বলেন, বাবার সম্পত্তিতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছি। সরকারী জমি আমাদের দখলে নেই।
চুনাখালী ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী ভুমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) মোঃ আবু জাফর টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, সরকারী জমি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে শ্রমিকলীগ সভাপতির দখলকৃত জমির তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) দফতরে হস্তান্তর করেছি। উপজেলা ভুমি কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকলীগ সভাপতির নামে ও তার পরিবারের নামে জমি বন্দোবস্ত নেই। তারা সরকারী জমি অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন।
আমতলী উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, গাজীপুর বন্দরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এছাড়া অবশিষ্ট জমি বে-দখল অবস্থায় আছে।
আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) নিশাত তামান্না বলেন, গাজীপুর বন্দরের বে-দখলকৃত সকল জমি উদ্ধার করা হবে। এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওই বন্দরের কোন জমি বে-দখল থাকতে দেয়া হবে না।
এমএইচকে/এমআর