কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, পদ্মা সেতুর মতো কিংবা তার চেয়েও বড় মেগা প্রকল্প আমরা আজ সম্পুর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষম হয়েছি। রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিংও নিজস্ব অর্থায়নে করার সাহসিকতা ও সক্ষমতা রয়েছে; আর এই সাহসের নাম শেখ হসিনা। তার স্বপ্নের পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংএর কাজ আজ উদ্বোধন করা হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার দেশের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশে^র দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বৈশি^ক করোনা মহামারি মোকাবেলা করে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। যা বিশে^ ও বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
মন্ত্রী বলেন, পায়রা বন্দর আমাদের সরকারের একটি জাতীয় অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। এই বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতোমধ্যে এই বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এছাড়া বন্দরের সার্ভিস জেটি নির্মােেণর কাজ চলমান রয়েছে। সংযোগ সড়ক ও আন্ধারমানিক নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ অতি শীঘ্রই শুরু হবে। অদূর ভবিষ্যতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে রাবনাবাদ চ্যানেলের নব্যতা বৃদ্ধি করা হবে; যার ফলে ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট বিশিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজ সরাসরি বন্দরে ভিড়তে পারবে।
তিনি শনিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে পায়রা বন্দরের ‘রাবনাবাদ চ্যানেলের (ইনার আউটার চ্যানেল) জরুরি মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং’ প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট পায়রা বন্দর বহিঃনোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজ আনয়নের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দেশের এক নতুন অগ্রযাত্রা ওইদিন শুরু হয়। ইতোমধ্যে এই বন্দরে ১০৬টি সমুদ্রগামী জাহাজ আগমন করেছে। এর মাধ্যমে সরকারের ২৫৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আজ মুজিববর্ষের একটি শুভক্ষণ। যে কোন বন্দরে নির্দিষ্ট ড্রাফটের পণ্যবাহী জাহাজ প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট চ্যানেলের নাব্যতা বজায় রাখা আবশ্যক। সে কারণেই বিশে^র অনেক বন্দরের প্রবেশ চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষায় নিয়মিত ড্রেজিং করতে হয়। একইভাবে পায়রা বন্দরও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কার্য পরিচালনা শুরু করছে। এই রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং এর মাধ্যমে পায়রার রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ছয় দশমিক তিন মিটার বজায় রাখতে বেলজিয়ামের ড্রেজিং কোম্পানি জানডেনুল (Jan De Nul ) এর সঙ্গে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ড্রেজিং কোম্পানি জান ডে নুল বেলজিয়াম ১৯৫১ সাল থেকে বিশে^র বিভিন্ন বন্দরে ড্রেজিং করে ২০ মিটার পর্যন্ত গভীর চ্যানেলের নব্যতার কাজ সম্পাদন করে আসছে। এ কোম্পানির ড্রেজার বহরে সর্বাধুনিক ও পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কাটার সাকশন ড্রেজার ও ট্রেইলিং সাকশন হপার ড্রেজার রয়েছে। এমনকি ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরের সংযোগকারী পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম চ্যানেল সুয়েজখাল খননের একক কৃতিত্ব রয়েছে এ কোম্পানির। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাসহ বহু বন্দরে বৃহত্তর বিভিন্ন ড্রেজিং প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এই কোম্পানি। ১৮ মাসব্যাপী এই ড্রেজিং কার্যক্রম চলবে বলে মন্ত্রী জানান। ফলে রাবনাবাদ ইনার ও আউটার চ্যানেলের প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থ চ্যানেলের প্রায় নয় দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ঘনমিটার পলি অপসারন করে কাঙ্খিত (ছয় দশমিক তিন মিটার) নব্যতা বজায় রাখা হবে। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৭ দশমিক ৩০ কোটি টাকা। যার মধ্যে চুক্তিমূল্য ৪০৮ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে অতি স্বল্প সময় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক চুক্তির পরপরই মোবিলাইজেশন, সাইট প্রিপারেশন কার্য শুরু করা হয় ও হাইড্রোগ্রাফিক জরীপ কাজের জন্য সার্ভে ভ্যাসেল, পন্টুন, ক্রু ভ্যাসেল প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র বিসিপিসিএলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে কয়লা সরবরাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কয়লাবাহী জাহাজ চলাচল করতে এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সিমেন্ট, ক্লিঙ্কার, ফুড গ্রেইন, ফ্লাই এ্যাশ, কনস্ট্রাকশন মেটেরিয়ালসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের জন্য চ্যানেলের নব্যতা বজায় রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং করা মূলত এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
শুধুমাত্র কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিরবিচ্ছিন্ন চালু রাখা ছাড়াও চ্যানেলটির নব্যতা বজায় রেখে বাংলাদেশের কাঙ্খিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ধারা অব্যাহত থাকবে। এর ফলে পায়রা বন্দরের ভাবমূর্তি বৈশি^ক পরিমন্ডলে উজ্জ্বল হবে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরে বিনিয়োগের জন্য কন্টেইনার, বাল্ক, এলএনজি টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে বিভিন্ন দেশ আগ্রহ প্রকাশ করবে। আসবে এগিয়ে বাইরের উদ্যোক্তা। বন্দর কেন্দ্রিক দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প অবকাঠামো গড়ে উঠবে। উন্নয়ন হবে আর্থ-সামাজিক অবস্থার। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। ১৮ মাস ব্যাপী রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং এর মাধ্যমে ৭৫ কিমি দীর্ঘ ১০০-১২৫ মিটার প্রস্থ, ছয় দশমিক তিন মিটার নাব্যতার রাবনাবাদ চ্যানেলটির কার্য চুক্তি মূল্যের ৪০৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পায়রা বন্দরের নিজস্ব তহবিল থেকে সংকুলানের কথা জানালেন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কাজের উদ্বোধনকে ঘিরে পায়রা বন্দরে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জানডেনুল কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক ইয়াংমইনস। এসময় বন্দরের পরিচালকবৃন্দ, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলী আহম্মেদসহ অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এমইউএম/এমআর