ভাল নেই রাজা বাড়ির সেই কাঠমিস্ত্রি লক্ষণ চরণ

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » ভাল নেই রাজা বাড়ির সেই কাঠমিস্ত্রি লক্ষণ চরণ
শুক্রবার ● ৮ জানুয়ারী ২০২১


ভাল নেই রাজা বাড়ির সেই কাঠমিস্ত্রি লক্ষণ চরণ

গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

“আমার এই জীবন আর ভাল লাগে না। ঘরের চালা দিয়া পানি পড়ে। একটু বাতাস হইলে ঘর দোলে। তহন ভয় লাগে। বংশের লোকেরা জোর করে জমি দখল করায় আদালতে মামলা পর্যন্ত করেছি। নিজে এহোন অচল। ছেলেরাও সামন্য আয় করে কোন রকমে সংসার চালায়। বৃদ্ধ বয়সে ছেলেদের অবস্থা ভাল দেইখা যাইতে পারলে মনটা ভাল লাগত। এক সময় মনের আনন্দে ঢাকায় কাঠের ফার্ণিচারের কাজ করতাম। রাজার (বঙ্গবন্ধু) কথা খুব মনে পড়ে। রাজার বাড়িতে ফার্ণিচারের কাজ করতাম। রাজা আমাকে খুব ভাল পাইতেন। আজ রাজা বাঁইচা থাকলে আমার কোন অভাব হইতনা। মরার আগে রাজার মাইয়া শেখ হাসিনারে একটু দেইখা যাইতে পারলে মইরাও শান্তি পাইতাম। ”আবেগ আপ্লুত কন্ঠে কথাগুলো বললেন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কাজ করা সেই কাঠ ফার্ণিচার মিস্ত্রি লক্ষণ চরণ মিস্ত্রি (৮৫)। তিনি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের বড় গাবুয়া গ্রামের মৃত রামচরণ মিস্ত্রির ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও অচল অবস্থায় নিজ পরিবারের খরচ যোগাতে চুক্তিভিত্তিক আসবাপত্রের কাজ করেন বৃদ্ধ অসহায় লক্ষণ চরণ মিস্ত্রি। তিনি এক সময় ঢাকায় বাসা-বাড়িতে ফর্ণিচারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার হাতের নিখুঁত কারু কার্যের সৌন্দর্য দেখে সহাসাই সকলের মন আকৃষ্ট করত। শৈল্পিক কাজের দক্ষতার সুবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নামী-দামী লোকের বাসা-বাড়ির আসবাপ পত্র তৈরির ডাক পরত লক্ষণ চরণ মিস্ত্রির। ঘটনাক্রমে এরই সূত্রধওে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই সময়ের ঢাকার একটি কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা খাইরুল আলমের সাথে। তার সহোযোগিতায় শেখ পরিবাওে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল ওই বৃদ্ধ মিস্ত্রির। বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একাধিক সাইডের কাঠের কাজও করেছেন বলে জানান তিনি। দুর্ভাগ্য বশতঃ ওই পরিবারের পারিবারিক আসবাপ পত্রের কাজ সমাপ্ত করতে পারেন নি তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের নীলনকশায় সংগঠিত এক হত্যা কান্ডের মধ্যে দিয়ে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ায় তার কাজ অসমাপ্ত রয়েই গেল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে তার নির্মিত সোফায় বসাতে না পেরে আক্ষেপ প্রকাশ করেন লক্ষণ চরণ মিস্ত্রি।
লক্ষণ চরণ মিস্ত্রি জানান, তার বৃদ্ধ স্ত্রী অমীয় মালা। তাদের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। বর্তমানে তিনি বড় গাবুয়া গ্রামে নিজ পৈত্রিক ভিটায় স্ত্রীসহ দোচালা জীর্ণশির্ণ একটি টিনের ঘরে বড় ছেলের সাথে একই ঘরে থাকেন। তবে বড় ছেলের উপর কোন রকম ঝামেলা না দিতে বৃদ্ধ লক্ষণ চরণ মিস্ত্রি ও তার বৃদ্ধ স্ত্রী ভিন্ন পাকে খান। তিনি ও তার স্ত্রী সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
৮৫ বছর বয়সী লক্ষণ চরণ মিস্ত্রি আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, “প্রিন্সিপাল বাদশা খাইরুল আলম সাহেব শেখ মুজিবর রাজার ছোফা বানাইতে আমারে নিয়া যায়। ১৪/১৫ দিন ধানমন্ডির তাঁর (বঙ্গবন্ধু) বাড়িতে যাইয়া কাজ করছি। বিশ্যোইত (বৃহস্পতিবার) রাসপূন্নিমার পূঁজার জন্য রাজার বাড়িতে কাজ করতে যাইতে পারি নাই। ওই দিনরাতে রাজার বাড়িতে গুলির শব্দ হুনি। ভয়তে আর ওই বাড়িতে কাজে যাইতে সাহস পাই নাই। এ্যাহোন আমার খবর কে রাখে। রাজা বাঁই”া থাকলে হে আমার খোঁজ-খবর নিত, ভালও থাকতাম। বংশের লোকেরা আমার সম্পত্তি ষড়যন্ত্র কওে নিতে পারত না।”
গোলখালী ইউপি চেয়ারম্যান মু. নাসির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি জেনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিষ কুমার বলেন, আমি ওই বৃদ্ধের বাড়িতে গিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর আগামী পনের দিনের মধ্যে তার বাড়িতে তুলে দেব। প্রয়োজনে তাকে সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হবে।

এসডি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:২১:৫৭ ● ৩৩৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ