সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, যেকোনো আলোচনায় আমরা রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরি। তার ফলে একটি কাজ হয়েছে, বিশ্বজুড়ে আমাদের পে জনমত তৈরি হয়েছে। সরকারগুলো আমাদের সপে আছে। কিন্তু এর সমাধান এত সহজ নয়। আমরা এর সমাধানের জন্য কাজ করছি। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার জার্মানির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। দেশে ফেরার পথে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন। এরই আগে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশ দুটিতে ছয় দিনের সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির মিউনিখে একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেবেন। এ ছাড়া তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে একটি প্রতিরা প্রদর্শনীতে যোগ দেবেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সঙ্গে একটি দ্বিপীয় বৈঠকও করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই সফরে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের সময় জার্মানির সুপরিচিত কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হবে। সেখানে বিদ্যুৎসহ নানা খাতে বড় বিনিয়োগ আসতে পারে বলে জানান আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুজন রাষ্ট্রপ্রধান যখন আলোচনা করেন, তাঁরা তাঁদের দেশের প্রায়োরিটি ইস্যুগুলো নিয়েই আলোচনা করেন। আমাদের দেশে রহিঙ্গা একটি ইম্পর্টেন্ট ইস্যু, ডেভেলপমেন্ট একটা ইম্পর্টেন্ট ইস্যু। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে ‘সম্মানজনক’ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নিরাপত্তা হুমকি ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে দুটি সেশনে আলোচনার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে (প্রধানমন্ত্রীর) একটি দ্বিপীয় বৈঠক হবে, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি সিমেন্স এ জি এবং ভেরিডোস জিএমবিএইচের প্রধান নির্বাহীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাাৎ করবেন বলে জানান তিনি। ভেরিডোস জিএমবিএইচ বাংলাদেশে ইঁ-পাসপোর্ট বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে বড় বিনিয়োগের প্রস্তাবকারী সিমেন্সের সঙ্গে জয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট চুক্তি স্বার হতে পারে বলে জানান মন্ত্রী।
এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক সাধারণ মার আওতায় নিয়মিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এসব বাংলাদেশি দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়েছিলেন। গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরব আমিরাত সফর দেশটিতে আরো বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টিতে অবদান রাখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার। ইতোমধ্যেই ১৯ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আরব আমিরাতের সাথে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। তাছাড়া চিকিৎসা ও প্রকৌশলসহ বেশ কিছু খাতে বাংলাদেশি পেশাজীবীদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ভিসা উন্মুক্ত করেছে।
ড. মোমেন জানান, গত বছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমিরাত সরকার ঘোষিত ৫০ হাজার বাংলাদেশি সাধারণ মার আওতায় নিয়মিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এসব বাংলাদেশি সেখানে অবৈধ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের সময় এলএনজি, বিদ্যুৎ অন্যান্য প্ল্যান্ট স্থাপনে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও শেখ আহমেদ ডালমুক আল মাকতুমের প্রাইভেট কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া মাতারবাড়িতে ৩০০ একর ভূমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপ ও শেখ আহমেদ ডালমুক আল মাকতুমের প্রাইভেট কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে প্রত্যাশা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৭ ফেব্রুয়ারি আবুধাবিতে আন্তর্জাতিক প্রতিরা প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী আমিরাতের উপ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরামন্ত্রী, দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মাদ বিন রশীদ আল মাকতুমের সঙ্গে দ্বিপীয় বৈঠক করবেন। আবুধাবির ক্রাউন পিন্স ও আরব আমিরাতের ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার শেখ মুহম্মাদ বি যায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট শেখ যায়েদ বিন সুলতানের স্ত্রী শাইখা ফাতিমার সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগামি ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় ফিরবেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশ যে ১৮শ’ সৈনিক পাঠাচ্ছে, তারা সেখানে মাইন অপারেশন ও বাড়ি-ঘর, অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করবেন। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে কোনো প্রকার সামরিক চুক্তি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষে ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ফিরবেন শেখ হাসিনা। আরব আমিরাতের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
এফএন/কেএস