কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা দ্বিতীয় বারের মতো পৌর নির্বাচনে ৪জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৮ডিসেম্বর যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠতে শুরু করেছে নির্বাচনের মাঠ। এ পৌর নির্বাচনে মেয়র ও একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় সরব গোটা পৌর এলাকা। চায়ের আড্ডায় প্রার্থীদের দোষ-গুণ নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন সাধারণ ভোটাররা। পছন্দের প্রার্থী নিয়ে একে অপরের সাথে মাঝে-মধ্যে বাকযুদ্ধ ও কড়া আলোচনা-সমালোচনাও চলছে। সমর্থকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। এদিকে প্রার্থীরাও নির্বাচিত হলে আধুনিক পৌরসভা গড়ে তুলতে ও সকল নাগরিক-সুবিধা নিশ্চিতসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ভোটারেরাও শুরু করেছেন চুলচেরা বিচার বিশ্লেষন। যাকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন হবে-এমন ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করার পক্ষে বেশির ভাগ ভোটার অভিমত প্রকাশ করেছেন। কে হচ্ছে নগর পিতা। কার গলায় উঠবে বিজয়ের মালা।
এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্ঘুম রাত কাটচ্ছেন মেয়র ,কাউন্সিলর সাধারন সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীরা। শীত কুয়াশা উপেক্ষা করে কাক ডাকা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভোটাদের দ্বারে দ্বারে। দলীয় প্রতিকে অনুষ্টেয় নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল আজিজ মুসুল্লী (ধানের শিষ) ও ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী হাজী নুরুল ইসলাম মুসুল্লী (পাখা) (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ )আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আঃ বারেক মোল্লা (নৌকা) ,স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.আনোয়ার হাওলাদার (জগ প্রতীক) নিয়ে ভোট যুদ্ধে অবর্তীন হচ্ছেন। এছাড়া কাউন্সিলর সাধারন সদস্য পদে ৩২ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রতিদিন দুপুর থেকে মাইকে প্রচারনা , ফেসটুন,ব্যানার, পোষ্টার ও লিফলেটে ছেয়ে গেছে পৌর এলাকায়। চায়ের স্টল হোটেলÑরেষ্টুরেন্টে এ নির্বাচন নিয়ে চলছে ভোটার ও সাধারন মানুষদের মধ্যে কথাবার্তা। এখানকার ভোটদের মধ্যে আনন্দ উল্যাস থাকলে তার মধ্যে রয়েছেও উদ্বেগÑউৎকন্ঠায় বিরাজ করছে। সবার মধ্যে একটি আতঙ্ক কাজ করছে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন কিনা। নির্বাচন সুষ্টু হবে কি না?, ভোট সুষ্ট ও নিরপক্ষ নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। সঠিক ভাবে ভোট হবে তো? প্রশাসনের দৃষ্টি নিরপেক্ষ থাকবে তো? এ নিয়ে আতঙ্কের কমতি নেই সরকার বিরোধী ভোটার, মেয়র , কাউন্সিলর সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে। কোনো কোনো প্রার্থীর সমর্থকেরা বলেছেন, তাদের এজেন্টদের সামনে ভোট দিতে হবে। আবার কেই গোপনে ব্যালটেই ভোট দেয়ার কথা বলছেন। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। ভোট কেন্দ্র দখল ও সিল মারা শংকার মধ্যে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কুয়াকাটার স্থানীয়রা জানান, সাধারন ভোটাররা সরকার দলীয় লোকজনকে ভয় পাচ্ছেন। তারা তাদের পবিত্র ভোট দিতে পারবে কিনা? তাদের অধিকার হরণ করা হয় কিনা এ নিয়ে চায়ের দোকানে চলছে নানা কথা বার্তা।
কুয়াকাটা পৌরসভা সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনের পর এটি দ্বিতীয় নির্বাচন। ৯টি ওর্য়াড নিয়ে গঠিত এ পৌরসভার আয়তন ১২.৭৫ বর্গ কিলোমিটার। মহল্লা রয়েছে ২৫ টি। বর্তমান জনসংখ্যা ৫০১২৭.০০ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ১২২ জন । ২০১১ সালে ৩৪ নং লতাচাপলী মৌজার ১১৪০ দশমিক ৫৫ একর জায়গা নিয়ে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই পৌরসভার কার্যক্রম চলছে নির্বাচিত মেয়র দিয়ে।
দ্বিতীয় বারের মতো পৌর সভায় নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের বর্তমান মেয়র ও কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ: বারেক মোল্লা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জগ প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে সদ্য যোগ দেয়া মো.আনোয়ার হাওলাদার। তিনি স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সাথে ভোট যুদ্ধে লড়ছেন। আনোয়ার হাওলাদার গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।। এছাড়া হাত পাখা প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী হাজী নুরুল ইসলাম মুসুল্লী। তিনি বিগত পৌর নির্বাচনেও পাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদন্দ্বতা করেছেন। এদিকে গত পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়া পৌর বিএনপির আহবায়ক আব্দুল আজিজ মুসুল্লী বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হিসেরে লড়ছেন। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবারের কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে কৌশলী হয়ে মাঠে কাজ করবে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মাঝিবাড়ী এলাকার ভোটার মো. রেদওয়ান এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুয়াকাটা পৌরসভা একটি সাগরপারের জনপথ ও দুর্যোগপুর্ন এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাট এখন প্রধান সমস্যা। ঝড় হলেই আতংক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। মেঘ দেখলেই আতঁকে উঠছে দূর্যোগ কবলিত সহস্রাধিক মানুষ। গত এক যুগে প্রাকৃতিক দূর্যোগে ও নদী ভাঙ্গনে এ গ্রাম গুলোতে প্রানহানীর সাথে শতশত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু বেঁচে থাকার মাথা গোঁজার বিকল্প আশ্রয় না পাওয়ায় মৃত্যুকূপে খড়কুঁটোর মতো ঝুপড়ি করে বসবাস করছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আঃ বারেক মোল্লা জানান, আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকার মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। গ্রামকে শহরের আদলে গড়ে তোলা এবং দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী করাই শেখ হাসিনা সরকারের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে হবে। এছাড়া তিনি পদ্মাসেতু,পায়রা বন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পর্যটন নগরী কুয়াকাটা সহ দক্ষিনাঞ্চলেল উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। পৌরসভাকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন পৌরসভা গড়ে তোলা হবে।
বিএনপির প্রার্থী আব্দুল আজিজ মুসুল্লী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয় নিশ্চিত। তবে কুয়াকাটাকে নতুন রুপে ঢেলে সাজানোর অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন তিনি।
ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী হাজী নুরুল ইসলাম মুসুল্লী জানান, বিগত নির্বাচনে জনগন আমার পাশে ছিলো, ব্যাপক সারা পেয়েছি। আশা রাখি ইনশাআল্লাহ এবারও সাধারণ ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং কর্মকতা মো. আব্দুর রশিদ বলেন, নির্বাচন অবাধ,সুষ্টু ও নিরপেক্ষ ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠ করার লক্ষে ইতোমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। শতভাগ আশাবাদি যে কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবো। নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রশাসনের পক্ষে থেকে মোবাইল ফোর্স,স্টাইকেন ফোর্স থাকবে , র্যাব মোবাইল টিম থাকবে ,বিজিবি বর্ডার গার্ড থাকবে প্লাটন , কোস্টগার্ড . নির্বাহী কর্মকর্তা থাকবে ৯ জন,জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টেট থাকবে ১জন। এ ছাড়া ও আরো প্রশাসন জোড়দার থাকবে
এইচএকে/এমআর